১৪ মে, ২০১৩

গল্পগুচ্ছ - মিলন চট্টোপাধ্যায়

শেষের সেদিন
মিলন চট্টোপাধ্যায়



চুপ করে বসে ছিল অনীক । হাতের পাশেই সদ্য কেনা ~ অ্যাটিভ্যান ২ এর একটা পাতা । ভেবে ভেবে এটাই কিনেছে , বাবার প্রেসক্রিপশন ছিলো বলে সুবিধা হয়েছে একটু । ট্রাইকা বড্ড নরম, ওতে কিছু হবে না ।

শালা এতো আঁতেল হয়েছে যে এই সময় বসে বসে ' এবং ইন্দ্রজিৎ' পড়ছিল ! ভাগ্যিস ভদি আর চদি এলো । এসেই শালা গুচ্ছের ভাট । সব মাথায় উঠে গেলো শুনে, ওদের তাড়িয়ে আসার সময় জানলা দিয়ে দেখল ~ পায়েসের মা ল্যাম্পপোস্টের পাশে দাঁড়িয়ে আছে । খদ্দের জোটে নি হয়তো আজ। অনীক ভাবল - জীবনের প্রথম নারীসঙ্গ করেই এই মহাপৃথিবী থেকে ফেটে যাবে । কিন্তু পরমুহূর্তে ভাবল - না বাবা, যদি এইডস হয় । ভেবেই ফিকফিক করে হাসতে শুরু করলো । শালা এই সময়ও এতো চিন্তা !

ঘরে ঢুকে অনেক খুঁজে একটা আধখাওয়া রামের বোতল পেলো অনীক । বহুদিন মাল খায়না, সপ্তাখানেক আগে চদি একটা পাইঁট এনেছিল খাবে বলে, অনীক ছেড়ে দিয়েছে শুনে - হো হো করে হাসতে হাসতে বলেছিল -' কি গুরু তুমি যে প্রেমিকার কথায় চৈতন্য হয়ে গেলে, আর নেওয়া যায়না মাইরি ' । অনীক হেসেছিল, সব কিছু কি ব্যাখ্যা করা যায় !
পুরোটা খেতে পারেনি চদি , বাকিটা রয়ে গেছে । ভালোই হল - রাম দিয়ে অ্যাটিভ্যান ~ জমবে ভালো ।

বরফ লাগতো একটু, কিন্তু কি আর করা যাবে । ঘরে খাবার জলও নেই । বাথরুমে পায়খানার বালতিতে জল আছে, ওতেই হয়ে যাবে । গ্লাসটাও ভেঙে গেছে , খালি বোতলে রাম ভরে জল মেশায় ও । তারপর ভাবতে থাকে । আশ্চর্য এই জীবন, সেই অর্থে কিছুই করতে পারে নি ও । যার কোনো কাজ নেই সেই কবিতা লেখে, যেমন ও লিখত । ভাঁটের লেখা সব, বিষাদ আর বিষাদ । যাতা শালা, কি সব লিখেছে এতদিন । হাসি পায় ভাবলে, লেখা পাঠাতো না কোথাও, বন্ধুরা জোর করার কিছু পাঠিয়েছিল , ছাপাও হয়েছে । ব্যস ~ নিজেকে হুনুদাস ভাবতে শুরু করে দিল । যার জন্য লিখত সেই বোঝেনি কোনোদিন । আজ ভাবে - নিশ্চয়ই খামতি ছিল, নইলে ... ।

মনে পড়ে সেই প্রথম চুমু, যেখানে ও ছিল শিক্ষার্থী । চুমুর প্রতিটা চুমুকে কি আস্বাদ । উফফ্‌ , ভালোলাগায় মরেই গেছিলো সেদিন । তারপর থেকেই প্রতিটা মুহূর্ত ... । যাক গে যাক , এসব ভেবে কি লাভ । শীত করছে খুব, জ্বর এসেছে দুদিন । এই সময় কিছু অপার্থিব লাইন মাথায় আসে । কিন্তু এখন উষ্ণতা চাই । গ্যাস ফুরিয়েছে বেশ কয়েকদিন, রাস্তার পাইস হোটেলে খেয়েছে কিছুদিন । এখন আগুন পোহায় কি দিয়ে ! ভাবতেই চোখে পড়লো - কবিতার খাতাগুলো । বাহ্‌ এই তো ~ এই আগুনের মতো উষ্ণতা আর কে দেবে । ধরিয়ে দিলো আগুন, লাল টকটকে জিভ বের করে আগুন ওকে ভ্যাংচাতে লাগলো । কবিতা পোড়া আগুনে একটা বিড়ি ধরালো অনীক । রামের বোতলে প্যাকেটের সব বড়ি ঢেলে দিল , কেমন সাদাটে সাদাটে ঘোলা হয়ে গেলো মদটা । একটা চুমুক মারলো অনীক । আহ্‌ - বুকের ভেতরে একটা আগুন নেমে গেলো যেন । একটা ঘোর আসছে , কি আরাম !
মাথায় আগুন, বুকে আগুন, পাশে আগুন ~ আর কাল তো নিজেই আগুন হয়ে যাবে । একটা আধপোড়া খাতার পাতা উড়ে এলো , কি লেখা আছে দেখতে গিয়ে দেখল একটা কবিতা ...
মায়াকে উত্তাপ দেয় আগুন
যে আগুনে পুড়ে যায় কবিতা আমার ।।
জ্বলন্ত খাতা থেকে ...
চিতার গন্ধ ভেসে আসে !

এইটুকুই পড়তে পারল অনীক । তারপর ডুবে গেল মায়ার আঁচলে ।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন