কাজরী তিথি জামান
তেমন দুরন্তই আছো ? এলোমেলো চুল আর উদাস চোখদুটিতে বয়স বাসা বাঁধেনি? পৃথিবীর যাবতীয় নিয়ম-অনিয়ম মুখস্থ এখনও? হাসিতে কেঁপে উঠছে চারপাশ ৷ কেঁপে উঠেছি আমিও ৷ কতদিন পর মেয়ের ছুটি পাওয়া আর সে সুযোগে ঘরকন্যা গুছিয়ে একটু শ্বাস নিতে আসা ! সেই নির্ভেজাল শ্বাসে আবারও তুমিই এলে ? নিজেকে লুকাতে কখন হোটেলের দিকে পা বাড়িয়েছি মনে নেই ৷ 'মা'আর একটু থাকো,আর একটু থাকো--মেয়েটা চেঁচিয়েই যাচ্ছে ......ইশারায় বোঝাতে চাইলাম শরীরটা'....নাহ্ মেয়েটা বুঝবে না কিছু ৷রুম নং ২০৩ এর বাঁকে এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছো যেন অপেক্ষা ছিল তোমার ৷ বয়স নাকি অনেকটা গিলেছে আমায় সেই ভরসায় পাশ কাটাতে শুনতে পেলাম, "মেয়েটি দেখতে তোমার মতোই, ভারী মিষ্টি "৷সেই প্রশংসা ......মন ভুলানো কণ্ঠস্বর অথচ এক অব্যক্ত যন্ত্রণা দুমড়ে মুচড়ে উঠছে আমার ভেতরে-বাইরে, আকাশে-সমুদ্দুরে আর ভুলে ভরা একটি দুপুরে ...... এই মুহূর্তে আমি সম্পূর্ণ ৷ দৃঢ় পায়ে খুব কাছে যাই তার ৷ চোখে চোখ রাখি ৷ একি এমন দেখাচ্ছে কেন ! তবে কী কিছু ভুল দেখেছিলাম ! অবিবাহিত প্রীয়ন রায় এমন ম্রিয়মাণ , পাংশুটে .........! আজ আমার বিজয়া ৷ বিসর্জনের আগে শঙ্খ ধ্বনি ......চশমাটা খেলনা যেন ! হেসে বলি,"প্রিয়দা, ও আমার দিদির মেয়ে ৷ পয়মন্তী রায় ৷ জন্মের তিনদিন পর দিদি চলে গেলেন, মা হারানো মেয়েটি আমাদেরই ......৷ওর বাবাও মারা গেছে ৷নাহ্ কোনো প্রমাণ নেই প্রীয়ন রায়ের কাছে ৷ যেমন আমি প্রমাণ দিতে পারিনি একটি দুপুর.....
পায়ে পায়ে ফিরে যাই মেয়েটির কাছে ৷ "বাপী",দ্যাখো..... "বাপী",দ্যাখো.....লাফাচ্ছে আমার টুপুর ৷ ওর পায়ে সাগরের ঢেউ ,পাশে আদিত্য বিশাল মমতায় ধরে আছে মেয়ের হাত ৷আমি হাঁটছি ,হাঁটছি .....দৌড়চ্ছি ৷দুটো হাত এগিয়ে এলো ৷ আমি অচেনা ঢেউ ৷ আদিত্য, পেরেছি আমি ৷ উত্তর এলো,"জানি"৷
মুক্তি চোখের জলে আর কিছুটা মেয়েটার অবাক চোখের পাপড়িতে রাখতেই নিজেকে হালকা মনে হলো ৷ শুধু একটি দুপুর বিঁধে রইলো ভালোবেসে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন