১৪ জুন, ২০১৩

কবিতা - স্নেহাশীষ দাস

একটি প্রেমের কবিতা
স্নেহাশীষ দাস


আজও আছে সেই দাস ভবন।।
মেস আর নেই, আমি চলে আসার এক বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।।
সাহু ভবন ও আছে।।
তোমাদের মেস মালিক লালু-বিণা ধরে রেখেছে এখন ও।
আছে দিলিপ দা এর চায়ের দোকান।।
শ্রিরুপা সিনেমা হল ও আছে।।
আমরা যেখানে আড্ডা দিতাম,
সেই 'একটু বিনোদন' রেস্টুরেন্ট টা ও আছে।।
কলেজের সেই বারান্দা টাও আছে।।
সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড ও আছে।।
আমিও আছি , তুমিও আছ।।

দাস ভবনের খোলা ছাদে,
দুপুরবেলা খাওয়ার পর আমি এসে অপেক্ষা করতাম।।
তোমার মেস এর কড়া নিরাপত্তা ভেঙ্গে কখন তুমি আসবে।।
চিরুনির অনিয়মিত পথ চলা,
তোমার কোমর পর্যন্ত চুলকে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত করতো।।
ছাদের গ্রিল টপকে তুমি এসে উঁকি দিতে।।
একটা আলতো হাসি।। ইশারায় ''খেয়েছ তুমি''।।
আমি মাথা নাড়তাম।। জোরে কথা বলা বারন।।
পাছে কেউ জেনে যায়।।
মুকাভিনয়ের পর্ব শুরু।। অনেক কথা।।
দাস ভবন- সাহু ভবনের ছাদে।।
সাক্ষী অলস দুপুর আর কিছু নির্জীব উপাদান।।

বিকেল গড়িয়ে এলে আমরা বেরতাম।।
দীঘা বাইপাস, রসুলপুর বাইপাস, খড়্গপুর বাইপাস,
হয়ে সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড......
দিলিপ চায়ের দোকানের সামনে দিয়ে যখন যেতাম,
বৈশাখীতে টান দিতে দিতে তখন কৌশিক দা, পার্থ, অলিক দা রা,
আলতো করে কিছু বাক্যবান বিদ্ধ করতো...
চুল সরিয়ে, চশমার নিচ দিয়ে তুমি দেখতে।।
আমার দিকে তাকাতে।।
দিলিপ দা হেঁকে বলতো,
নীলাঞ্জনা, চা হয়ে গেছে।। চুমুক দিয়ে যাও।।
তুমি এগিয়ে গিয়ে কৌশিক দা কে বলতে,
কথাগুলো অন্য কাউকে বললেও তো পারো।।
একটা নিশ্চিত হিল্লে হয়ে যেত।।
বোকার মতো কৌশিক দা বলে,
'এই রকবাজের কপালে আর কেউ জুটবে না গো'।।
ইনটিগ্রেসন, ডেরিভেটিভ ছাড়া আর কাউকে মন দিতে পারবো না।।
সবাই উচ্চ-স্বরে হেঁসে উঠতাম।।
দিলিপ দা চা এগিয়ে দিত।।

তোমার বোটানি অনার্স।। আমার কম্পিউটার সায়েন্স।।
তোমার কে এ ব্লক, আমার নেপাল চন্দ্র ব্লক।।
ক্লাস বাঙ্ক।। তুমি এসে সি এ ব্লকের দোতলায় দাঁড়াতে।।
এ আর কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আমিও হাজির হতাম ওখানে।।
চুটিয়ে প্রেম।। গল্প ।।আড্ডা।।
সামনের ছাতিম তলার দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যেতাম দূরে, আরও দূরে।।
মাঝে মাঝে অঙ্কিতা এসে ফোড়ন কেটে যেত।।
ফিজিক্সের বি কে ডি প্রতিদিন আমাদের দেখত একই ভাবে।।
অনেক অনেক ক্ষণের পর আমরা বেরতাম শেষ বিকেলে।।
সামনের দিদির দোকানে তখন পীযুষ রা আড্ডা মারত।।
ঢুকে যেতাম আমরাও।। সিগারেট এ আলতো চুমু দিতাম।।
তুমি বারন করতে।। আর আমি প্রতিদিন ই বলতাম এটাই শেষ বার।।

একটু আনন্দ নিতে।। বিশেষ দিনে।।
শ্রিরুপায় চলে যেতাম দুজনে মিলে।।
১৫০ টাকায় দুজনে পাশাপাশি।।
একটু অন্তরঙ্গ।। তুমি আর আমি।।
বেরিয়ে পায়ে পায়ে "একটু বিনোদন"।।
আমি চাউমিন খেতাম না।। তুমি আবার ওটা খেতেই ভালবাসতে।।
ঝগড়া হতো।। শেষে একটা সিধান্তে আসতাম।।
জমিয়ে খেতাম নিউ মার্কেটের ওই রেস্তরাঁয়।।
বেরিয়ে রাখাল চন্দ্র বিদ্যাপীঠের পাসের রাস্তা ধরে,
পাশাপাশি তুমি আর আমি।।

জানো নীলাঞ্জনা, আজ এই স্মৃতি অনেক দিন পর মনে পরল।।
তুমি কোথায় আছ আমি জানিনা।।
কিন্তু যখন এ কাঁথি যাই, এই স্মৃতি গুলো জেগে ওঠে।।
ভাবি এই তো তুমি আমার পাশে হাঁটছ।।
দিলিপ দা এর চা এর দোকানে আমার সাথে আড্ডা দিচ্ছ।।
সাহু ভবনের দোতলার ছাদে খোলা চুল ওড়াছো।।
সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ড এর পাসের রাস্তা দিয়ে আজও হাঁটছ।।
আর আমরা একে একে পেরিয়ে যাচ্ছি,
কিশোর নগর শচীন্দ্র শিক্ষা সদন।।
আমাদের কলেজের খেলার মাঠ।।
গার্লস হোস্টেল।।
পুলিস ফাঁড়ি।।
চন্দন দা এর মুদি দোকান।।
সাহু ভবন............দাস ভবন।। 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন