১৪ জুন, ২০১৩

ছোটগল্প - কাশীনাথ গুঁই

অ-কেজোর খসরাখাতা
কাশীনাথ গুঁই


(১)

বৃষ্টি আমার বন্ধু। নীল আকাশের শুষ্ক বুকে জলীয় বাষ্প আঁকে জ্বলন্ত সূর্য ,শ্যামলা পৃথিবীর বুক থেকে বাস্পীভূত জল পুঞ্জীভূত হয় মেঘে,মেঘবালিকার সাদা শাড়ীর আঁচলটি ছুঁয়ে সে মুক্তোদানা আবার ফোঁটায় ফোঁটায় চুঁইয়ে পড়ে আকশের অদৃশ্য রন্ধ্রপথে,পৃথিবীর বুকে।

বৃষ্টি বড় প্রিয় আমার।বৃষ্টি নামলেই আমি ভিজি। ভিজতে ভিজতেই কাঁদি । বৃষ্টির ফোঁটার সাথে অঝোরে ঝরে যায় আমার জমে থাকা যত কান্না, যত কষ্টের জমানো মুক্তোদানা। আমার সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে দিয়ে সে দুষ্টু মেয়ে আর আমার চোখের বানভাসি নোনা জল গড়িয়ে মিশে যায় এক সাথে।সেই থেকেই আমাদের বন্ধুত্বের শুরু।

কাল সারারাত বৃষ্টি ঝরেছে আপনমনে, একাকিনী। কখনো টাপুর-টুপুর ছন্দে তো কখনো তার পায়ের নূপুরে রিমিঝিমি বোল তুলে।আজকের বর্ষনক্লান্ত সকালে বৃষ্টির সোঁদা গন্ধটা রয়ে গেছে।আকাশ মেঘলা খুব, থমথমে, চারপাশ বড় মনকেমন করা ভাব ছড়িয়ে আছে, জড়িয়ে আছে।

বৃষ্টির সাথে আলাপের পরে বলেছিল চিঠি লিখতে। রোজ যত বেশী পারি যেন লিখে পাঠাই তবে উড়োখামে নয়,সে চিঠি যাবে আকাশের নীল খামে, মেঘবালিকার হাত ঘুরে সে চিঠি ঠিক পৌঁছে যাবে তার আপন গন্তব্যে।আমার রাতজাগা চোখের আলোতে লেখা শব্দগুলো তার খুব প্রিয় ছিল একদিন। রাতের নীরবতায় আমি ওর মিষ্টি স্বর শুনবো বলেই জেগে থাকি আজও। ইথার তরঙ্গে ভেসে যাওয়া ওর বলা সব অক্ষরের প্রতিফলন শুনতে শুনতে আমি আজও একইভাবে রাত জাগি আর ও ভাবে আনিদ্রা রোগে ভুগি আমি। সারাদিনের কাজের আড়ালেও হারাতে পারিনা ওকে।আজকাল চেনা মানুষগুলোর কাছে আমি অন্য একজন হয়ে গেছি। ওর ভাবনা আমাকে কাজের জায়গা, সহকর্মী সবার থেকে একঘরে করে দিয়েছে। বাড়ীর মানুষের কপালে ভাঁজ - তবু আমি নির্বিকার।

তুমিই বলো বৃষ্টি, আর কত কষ্ট দেবে আমায়?

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন