১৪ জুন, ২০১৩

সম্পাদকীয় - ১ম বর্ষ, ৩য় সংখ্যা

0 কমেন্টস্






প্রাক বর্ষার সোঁদা গন্ধ বয়ে ছোট ছোট পা ফেলে আমরা আবার এলাম সবার সাথে আনন্দ অবগাহনে। আমাদের সংস্কৃতি, মানবিকতার আসনের মানুষ কাজী নজরুলের জন্মদিন সদ্য পেরিয়ে এলাম। বাংলা ভাগ হলেও ভাগ হয়নিকো নজরুল। মানবিকতার পুরষ্কারে তিনি আজও উজ্জ্বল স্বমহিমায়। মাটীর সন্তান কাঁপিয়ে দিতে পেরেছিলেন বৃটিশ শাসকের বুকের পাঁজর লেখণীতে। তাকে ভুলি কি করে আমরা। পারিনি উপযুক্ত উত্তসুরীর ভুমিকা নিতে, সেতো আমাদের অপারগতা- দিনযাপনের গ্লানিতে আমারা নুব্জ যে।


আসুন আজ এই মহাতর্পণে সামীল হই আমাদের প্রেরণার মালা গেঁথে।



জুন,২০১৩

ছোটগল্প - কাশীনাথ গুঁই

0 কমেন্টস্
অ-কেজোর খসরাখাতা
কাশীনাথ গুঁই


(১)

বৃষ্টি আমার বন্ধু। নীল আকাশের শুষ্ক বুকে জলীয় বাষ্প আঁকে জ্বলন্ত সূর্য ,শ্যামলা পৃথিবীর বুক থেকে বাস্পীভূত জল পুঞ্জীভূত হয় মেঘে,মেঘবালিকার সাদা শাড়ীর আঁচলটি ছুঁয়ে সে মুক্তোদানা আবার ফোঁটায় ফোঁটায় চুঁইয়ে পড়ে আকশের অদৃশ্য রন্ধ্রপথে,পৃথিবীর বুকে।

বৃষ্টি বড় প্রিয় আমার।বৃষ্টি নামলেই আমি ভিজি। ভিজতে ভিজতেই কাঁদি । বৃষ্টির ফোঁটার সাথে অঝোরে ঝরে যায় আমার জমে থাকা যত কান্না, যত কষ্টের জমানো মুক্তোদানা। আমার সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে দিয়ে সে দুষ্টু মেয়ে আর আমার চোখের বানভাসি নোনা জল গড়িয়ে মিশে যায় এক সাথে।সেই থেকেই আমাদের বন্ধুত্বের শুরু।

কাল সারারাত বৃষ্টি ঝরেছে আপনমনে, একাকিনী। কখনো টাপুর-টুপুর ছন্দে তো কখনো তার পায়ের নূপুরে রিমিঝিমি বোল তুলে।আজকের বর্ষনক্লান্ত সকালে বৃষ্টির সোঁদা গন্ধটা রয়ে গেছে।আকাশ মেঘলা খুব, থমথমে, চারপাশ বড় মনকেমন করা ভাব ছড়িয়ে আছে, জড়িয়ে আছে।

বৃষ্টির সাথে আলাপের পরে বলেছিল চিঠি লিখতে। রোজ যত বেশী পারি যেন লিখে পাঠাই তবে উড়োখামে নয়,সে চিঠি যাবে আকাশের নীল খামে, মেঘবালিকার হাত ঘুরে সে চিঠি ঠিক পৌঁছে যাবে তার আপন গন্তব্যে।আমার রাতজাগা চোখের আলোতে লেখা শব্দগুলো তার খুব প্রিয় ছিল একদিন। রাতের নীরবতায় আমি ওর মিষ্টি স্বর শুনবো বলেই জেগে থাকি আজও। ইথার তরঙ্গে ভেসে যাওয়া ওর বলা সব অক্ষরের প্রতিফলন শুনতে শুনতে আমি আজও একইভাবে রাত জাগি আর ও ভাবে আনিদ্রা রোগে ভুগি আমি। সারাদিনের কাজের আড়ালেও হারাতে পারিনা ওকে।আজকাল চেনা মানুষগুলোর কাছে আমি অন্য একজন হয়ে গেছি। ওর ভাবনা আমাকে কাজের জায়গা, সহকর্মী সবার থেকে একঘরে করে দিয়েছে। বাড়ীর মানুষের কপালে ভাঁজ - তবু আমি নির্বিকার।

তুমিই বলো বৃষ্টি, আর কত কষ্ট দেবে আমায়?

ছোটগল্প - কাজরী তিথি জামান

0 কমেন্টস্
চোরকাঁটা
কাজরী তিথি জামান



তেমন দুরন্তই আছো ? এলোমেলো চুল আর উদাস চোখদুটিতে বয়স বাসা বাঁধেনি? পৃথিবীর যাবতীয় নিয়ম-অনিয়ম মুখস্থ এখনও? হাসিতে কেঁপে উঠছে চারপাশ ৷ কেঁপে উঠেছি আমিও ৷ কতদিন পর মেয়ের ছুটি পাওয়া আর সে সুযোগে ঘরকন্যা গুছিয়ে একটু শ্বাস নিতে আসা ! সেই নির্ভেজাল শ্বাসে আবারও তুমিই এলে ? নিজেকে লুকাতে কখন হোটেলের দিকে পা বাড়িয়েছি মনে নেই ৷ 'মা'আর একটু থাকো,আর একটু থাকো--মেয়েটা চেঁচিয়েই যাচ্ছে ......ইশারায় বোঝাতে চাইলাম শরীরটা'....নাহ্ মেয়েটা বুঝবে না কিছু ৷রুম নং ২০৩ এর বাঁকে এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছো যেন অপেক্ষা ছিল তোমার ৷ বয়স নাকি অনেকটা গিলেছে আমায় সেই ভরসায় পাশ কাটাতে শুনতে পেলাম, "মেয়েটি দেখতে তোমার মতোই, ভারী মিষ্টি "৷সেই প্রশংসা ......মন ভুলানো কণ্ঠস্বর অথচ এক অব্যক্ত যন্ত্রণা দুমড়ে মুচড়ে উঠছে আমার ভেতরে-বাইরে, আকাশে-সমুদ্দুরে আর ভুলে ভরা একটি দুপুরে ...... এই মুহূর্তে আমি সম্পূর্ণ ৷ দৃঢ় পায়ে খুব কাছে যাই তার ৷ চোখে চোখ রাখি ৷ একি এমন দেখাচ্ছে কেন ! তবে কী কিছু ভুল দেখেছিলাম ! অবিবাহিত প্রীয়ন রায় এমন ম্রিয়মাণ , পাংশুটে .........! আজ আমার বিজয়া ৷ বিসর্জনের আগে শঙ্খ ধ্বনি ......চশমাটা খেলনা যেন ! হেসে বলি,"প্রিয়দা, ও আমার দিদির মেয়ে ৷ পয়মন্তী রায় ৷ জন্মের তিনদিন পর দিদি চলে গেলেন, মা হারানো মেয়েটি আমাদেরই ......৷ওর বাবাও মারা গেছে ৷নাহ্ কোনো প্রমাণ নেই প্রীয়ন রায়ের কাছে ৷ যেমন আমি প্রমাণ দিতে পারিনি একটি দুপুর.....

পায়ে পায়ে ফিরে যাই মেয়েটির কাছে ৷ "বাপী",দ্যাখো..... "বাপী",দ্যাখো.....লাফাচ্ছে আমার টুপুর ৷ ওর পায়ে সাগরের ঢেউ ,পাশে আদিত্য বিশাল মমতায় ধরে আছে মেয়ের হাত ৷আমি হাঁটছি ,হাঁটছি .....দৌড়চ্ছি ৷দুটো হাত এগিয়ে এলো ৷ আমি অচেনা ঢেউ ৷ আদিত্য, পেরেছি আমি ৷ উত্তর এলো,"জানি"৷

মুক্তি চোখের জলে আর কিছুটা মেয়েটার অবাক চোখের পাপড়িতে রাখতেই নিজেকে হালকা মনে হলো ৷ শুধু একটি দুপুর বিঁধে রইলো ভালোবেসে।

মুক্তগদ্য - অদ্রি আহমেদ

0 কমেন্টস্
একটা খোলা চিঠি
অদ্রি আহমেদ




প্রিয়ন্ত,



তোকে নিয়ে লিখা এটা আমার ১ম খোলা চিঠি । তুই চিঠি লিখতে ভালবাসিস আর আমি তোর লিখা চিঠি গুলো পড়তে ভালবাসি । তুই খুব রাগ করতি তোকে চিঠি লিখতাম না বলে । তুই তো জানিস আমি কিছু লিখতে পারি না ! এই দেখ আজও লিখতে পারছি না !

অনেক দিন হল তোর কণ্ঠ শুনি না ! তুই তো জানিস তোর কণ্ঠ না শুনলে ঘুমাতে পারি না , তাই যে দিন থেকে তুই আমার খোঁজ নিস না বিশ্বাস কর সে দিন থেকে আজও আমার প্রতিটা রাত কাটে নির্ঘুম। এতে তোর কিছু আসবে যাবে না , তোর কাছে আমি কখনোই কিছু ছিলাম না , কিন্তু তুই তো আজও আমার কাছে অনেক কিছু রে ! আমি জানি তুই খুব ভাল আসিছ কিন্তু তোকে ছাড়া আমি ভাল নেই !

হঠাৎ তুই যেদিন থেকে আমার খোঁজ নেয়া বন্ধ করে দিলি , আমি ঐ দিন থেকেই ঠিক করেছি তোকে কিছু বলব না ! দেখ তোকে আমি কিছু বলিনি শুধু নিজে কষ্ট পেয়ে যাচ্ছি। তোর দেয়া কষ্ট গুলো আমি মেনে নিয়েছি কারণ আমি তোকে সত্যি খুব ভালবাসি।

তোকে বিরক্ত না করি সে জন্য নিজেই ফোন টা ভেঙ্গে ফেলেছি, সিম টা ভেঙ্গে ফেলেছি, অনেক কষ্ট করে বুকে পাথর চাপা দিয়ে নিজের ভালবাসা গোপন করেছি ! শুধু তোর খুশির জন্য। জানিস তুই যখন আমাকে বকা দিতি , রাগ করতি, পড়া লেখার জন্য ঝগড়া করতি নিজেকে তখন একটা সুখী মানুষ মনে হতো। তোর আঁকা ছবি, তোর লিখা কবিতা, অসম্ভব সুন্দর করে বলা কবিতা, বাঁশির সুর আমি খুব মিস করি।

জানি না , তুই আমাকে ছাড়া কেমন আছিস ? আচ্ছা তুই কি ঠিক মত খাস? নাকি এখনও তোর খাওয়া দাওয়ার প্রতি অনীহা রয়ে গেছে? এখন তো আমি নেই যে তোকে খাওয়ায় জন্য জোর করব ! ঠিক মত রাতে বাড়ি ফিরিস তো? তুই তো আমার আফসোস করা পছন্দ করতি না ! আফসোস ছাড়া কিছু আছে নাকি আমার এই জীবনে ? তুই আমাকে কথা দিয়েছিলি আমাকে ম্যাজিক দেখাবি, আমার হাত ধরে হাঁটবি, আমার ইচ্ছে গুলো পূর্ণ করবি ! বাস্তবে তো তা হোল না ! তাহলে তুই বল আফসোস না করে কি করব? হুট করে এভাবে আমাকে তোর ছেড়ে যাওয়ার কারণ না আজও আমার কাছে অজানা রয়ে গেল !

জানতে খুব ইচ্ছে করে কেন তুই এমন করলি ? কি দোষ ছিল আমার? নাকি আমার থেকে তোকে আরও বেশি কেউ ভালবাসতে শুরু করেছে ? আমি তো তোকে অনেক আগেই বলেছিলাম তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি তখন কেন বলতি বেশি বুঝবা না ? দেখেছিস আমার ভয় টাই বাস্তবে রূপ নিয়েছে । এ জন্য আমি তোকে দায়ী করব না হয়তো আমারই কোথাও ভুল আছে । ভাল থকিস , আমাকে তোর ভালবাসা লাগবে না । শুধু একবার স্বীকার করিস যে আমি তোকে ভালবাসি।

আর লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে না । আজ এখানেই শেষ করলাম। আর হয়তো কখনো তোকে বলা হবে না , আমি সত্যি তোকে বড্ড ভালবাসি।কি দোষ ছিল আমার? নাকি আমার থেকে তোকে আরও বেশি কেউ ভালবাসতে শুরু করেছে ?

ইতি,
তোর অবহেলার
মেঘ

ছোটগল্প - বিপ্র বিমল

0 কমেন্টস্
মোমবাতি
বিপ্র বিমল



ফোনটা রেখে দেয় মৌমিতা। রিসিভারটা রেখেই আনমনা হয়ে যায় মৌমিতা। কাজল-দা খুব অসুস্থ। লিভারে সমস্যা। বাঁচার সম্ভাবনা প্রায়ই নেই। আজ নয়দিন ধরে ঢাকার একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন। কাজল-দা খুব করে বলায় ওখানকার একজন নার্স ফোন করে জানালো মৌমিতাকে। কাজল-দা নাকি ঘুমের মধ্যে বারবার আমার নাম বলছে। কি নাম বলছে সে? কাজল-দা'তো আমাকে কখনো নাম ধরে ডাকেনা ! তাহলে কি কাজল-দা শেষ সময়ে.... নাহ নাহ এসব কি অলক্ষুণে কথা ভাবছে সে। কাজল-দা মরতেই পারেনা।

মা মারা যাওয়ার পর থেকে কেমন জানি হয়ে গেছে কাজল-দা। আগে তো সে সিগারেটও খেতনা। এখন নাকি সব জাতীয় নেশা চলে। শুনেছিলাম,কোন এনজিওতে জানি চাকরী করত। এখনো করে কিনা জানিনা।

কাজল-দা তাকে দেখতে চায়। মানুষ মরার সময় তার খুব আপনজনকে এভাবে দেখতে চায়। আমি কি কাজল-দার খুব আপন কেউ !! গা কাঁটা দিয়ে উঠে মৌমিতার।

মৌমিতা না গেলে কাজল-দা তাকে কি ভাববে সে আর ঐসব ভাবতে চায়না। এখন তার স্বামী আছে,সংসার আছে। রুবেল (তার স্বামী) তাকে খুব ভালবাসে। খুব বিশ্বাস করে। কাজল-দার ঐসব ভালবাসা রুবেলের ভালবাসা,বিশ্বাসের কাছে সামান্য। মৌমিতা আটকে যায়, আসলেই কি কাজল-দার ভালবাসা সামান্য? কাজল-দার ভালবাসার কি কোন দাম নেই? এতোটাই ক্ষুদ্র? তাহলে এই কাজলের জন্যেই বা কেন এতো ভাবনা,চিন্তা তার?

স্কুলে,কলেজ জীবনে এই কাজল-দা'কে এক মুহূর্ত দেখার জন্য কি না করত মৌমিতা। স্কুল ছুটি হলেই বই খাতা নিয়ে দৌড় দিত কাজল-দা'দের বাসায়। কাজল-দা তখন কলেজে পড়ত। মৌমিতা কে দেখে হাসতে হাসতে বারান্দায় এসে বসত। আর বলত, 'কিরে মোমবাতি,এলি? স্কুলে পড়া বুঝিসনি? আয়.. আয়!

মৌমিতা এক দৌড়ে কাজল-দার রুমে চলে যেত। আর কাজল-দার দেয়ালে বাই-সাইকেলে চড়া কেপ পরা ঝুলন্ত কাজল-দাকে বারবার দেখত।

পড়া না পারলেও, না বুঝলেও কাজল-দা কখনো মারতোনা, বকাও দিতো না কখনো।

একদিন পিথাগোরাসের উপপাদ্য বুঝাতে গিয়ে কোনমতেই বুঝতে পারছিলনা মৌমিতা। কাজল-দার রাগ ধরে যায়। কিন্তু মুখে কিছু বলেনা। বাইরে উঠোনে মৌমিতার মা আর কাজল-দা'র মা বসে গল্প করছিলেন। হঠাৎ কাজল-দা উঠোনের দিকে মুখ করে চিৎকার করে বলে, ' বুঝলে মাসিমা, আমাদের মোম খুব স্বামী সোহাগী হবে। অনেক বড়লোক স্বামী হবে গো তার।'

লজ্জায় লাল হয়ে যায় মৌমিতা।

বাইরে দু'জনে হাসতে হাসতে মৌমিতার মা জিজ্ঞেস করলেন, 'তুই আবার জ্যোতিষ হলি কবেরে, কাজল?'

-' বুঝি, বুঝি মাসিমা। এইসব পড়ালেখায় অকাজের মেয়েরা বড়লোক স্বামীই পায়।'

এবার রাগ ধরে যায় মৌমিতার। একদিন রাতে খাওয়ার সময় মৌমিতার বাবা বলেছিল কাজল-দা'রা গরীব, তাই মেধাবী হয়েও বাইরে,শহরে ভাল কলেজে পড়তে পারেনি।

সেদিন থেকেই বড় লোকদের ঘৃণা করতো মৌমিতা। এই বড়লোকদের কেউ একজন তার কাজল-দা'র সিট দখল করে আছে ভাবলেই কষ্ট হত তার।

এখনো পিথাগোরাস বুঝেনা মৌমিতা। এখন আর খারাপ লাগেনা, বরং সেদিন কার কথা ভেবে নিজেকে খুব বোকা ভেবে কিছুটা লজ্জা পায় সে।

ঘুটঘুটে অন্ধকার এখন সারা বাড়ীটা। কারেন্ট কখন চলে গেছে খেয়াল নেই মৌমিতার। সে মোমবাতি জ্বালাতে বেড রুমে আসে। মোমবাতিটা হাতে নেয় সে।

কাজল-দা তাকে মোমবাতি বলে ডাকতো। কেন ডাকতো সে কথা মৌমিতা আজও জানেনা। কোনদিন জানতেও চায়নি সে। কিন্তু মনে মনে খুব ভাল লাগত তার। অন্য কেউ এই নামে তাকে ডাকলে সে রেগে যেতো। আর এমন সব কাণ্ড করত যেন কেউ আর এই নামে তাকে ডাকতে না পারে।

মৌমিতা ড্রেসিং টেবিলে রাখা মোমবাতিটা জ্বালায়। সাদা, নরম মোমবাতিটা জ্বলে ওঠে। চারপাশ আলোময় হয়ে ওঠে। মোমবাতির আলোতে মৌমিতার ছায়া,ড্রেসিং এর আয়নায় যে তার প্রতিচ্ছবি এসব কিছু খুব মেকি লাগে তার কাছে। কি এক রকমের ঘৃণা আসে তার নিজের প্রতি।

নাহ...কাল কাজল-দা'কে একবার দেখতে যাবে সে। কিন্তু নিজেকে কি ধরে রাখতে পারবে মৌমিতা?

এখন রুবেলের ফেরার সময়। মৌমিতা উঠে দাঁড়ায়।

টেবিলে মোমবাতিটা তখনো আলো দিচ্ছে। কিন্তু এ মোমবাতি কাজল-দা'র নয়।

কথোপকথন - ইমেল নাঈম

0 কমেন্টস্
কথোপকথন
ইমেল নাঈম



- কি ভাবছ?
- জানো আমি কখনো গ্রাম দেখিনি। শহরের
ইট পাথরের ধুলোর মাঝেই বেড়ে ওঠা আমার।
- কেন দেখবে ? আমি নিয়ে যাবো তোমায়।
- সত্যি নিয়ে যাবে ? গ্রাম মানে একেবারে প্রাচীন গ্রাম
যেখানে সভ্যতার আলো পৌঁছায় নি আজও।
- মুস্কিলে ফেলে দিলে। এমন গ্রাম তো এখন জাদুঘরেও মিলবে না।
- ওহ আচ্ছা !
- কি মন খারাপ করলে?
- নাহ , কিছুই তো করার নেই। সভ্যতা যখন
গ্রামকে রাঙায় নিজের আলোতে
সেখানে তোমার আমার কিবা করার থাকে?
- তাহলে গুমরো মুখে প্যাঁচার সাজ নিচ্ছ যে?
- প্যাঁচার সাজ পেলে কই? ভাবছি গ্রাম
দেখতে কেমন? তুমি কি বলবে সামান্য কিছু?
- গ্রাম বলতে প্রথমে চোখের সামনে ভেসে ওঠে
মেঠো পথ আর তার উপর দিয়ে বয়ে চলে গরুর গাড়ি।
- এ্যাই, তুমি কখনো গরুর গাড়িতে চরেছ?
- নাহ তবে দাদুর কাছে শুনেছি, সেটাই বলার চেষ্টা করছি ।
- ওহ , আচ্ছা। গ্রামের ঘরবাড়ি সম্পর্কে কিছু বল তো আমাকে।
- গ্রামের ঘর বাড়ি গুলো মাটির তৈরি,
কোথাও সেগুলোর চালা দেয়া হয় খড়ের,
যারা একটু ধনী তাদের ঘর হয় টিনের।
_ গ্রামের মানুষগুলো অনেক সহজ সরল,
তারা সকাল থেকে রাত অব্ধি পরিশ্রম করে।
- এটা তো শহরের মানুষরাও করে, এতে বলার কি আছে?
- হুঁ করে তো, কিন্তু একটু পার্থক্য আছে।
- কিসের পার্থক্য?
- তুমি তাদের দিকে তাকালেই বুঝবে তারা কোথায় কোন কাজে যাচ্ছে,
এই যেমন কাঁধে লাঙ্গল বা মই সেই সাথে
জোড়া বলদ দেখলেই বুঝে যাবে তারা কৃষক।
- ওহ আচ্ছা, এখন বুঝেছি! গ্রামের উৎসব নিয়ে কি কিছুই বলবে না?
- হুম, গ্রামের কিছু উৎসব নিয়মিত হত
যা কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সমাজ থেকে।
- কোন কোন উৎসব?
- এই ধর, আগে প্রতি সপ্তাহের শেষে পুঁথি পাঠের উৎসব বসত,
এখন হারিয়ে গেছে। যেমনটি হারিয়ে গেছে পালা গান।
হালখাতাও হারিয়ে গেছে।
- কি বল হালখাতাও হারিয়ে গেছে।
- হুঁ। অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে গ্রাম থেকে।
এখন হালের গরুর জায়গা দখল করেছে ইঞ্জিন চালিত যন্ত্র।
মাটির ঘরও হারিয়ে গেছে, সেই জায়গা
দখল করেছে ইট পাথর আর রড।
গরু গাড়ি নেই , পাকা রাস্তায় এখন কালো ধোঁয়ার চাষাবাদ হয় এখানে।
- কি বল , তবে কি গ্রাম হারিয়ে যাচ্ছে সমাজ থেকে।
- নাহ গ্রাম হারাচ্ছে না, গ্রাম সময়ের সাথে আধুনিক হচ্ছে।
শুধু হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য।

কবিতা - শাকিলা তুবা

0 কমেন্টস্
মেঘলা ময়ূর
শাকিলা তুবা



আজ মেঘ খাব,
ঝড়ো বাতাস, উড়োউড়ি-
সারাদিন বৃষ্টি খাব
স্বাধীন মানুষ উড়ে যাব,
ভিজে যাব মেঘের নীচে
একলা বনে এই তো আমার
বৃষ্টিনিবাস।

বুকের ভেতর রিমিঝিমি
অনেক নূপুর
বাতাস নড়ে ওঠা
আরেকটা উইন্ডচাইম
সব মিলিয়ে কে জানে
এমন বরষা মেদুর দিন
কি বলে? কি যেন বলে!

আজ বৃষ্টি মাখার দিন
মেখলা মেয়ের একলা ঘোর
পায়ে পায়ে জলের ছাপ
এই-ই আমার বৃষ্টিবিলাস
আজ মেঘ খাবার দিন
একা ঘরে উদাস হবার মত
আজ বৃষ্টিই আমার প্রিয় সংঘাতক।

কবিতা - মিলন চ্যাটার্জি

1 কমেন্টস্
জন্মদিনের প্রাক্কালে
মিলন চ্যাটার্জি


জন্মদিন আসলে আজকাল
মৃত্যু'র পদধ্বনি শুনতে পাই ।
আগে ঠিক এরকম হতো না
মা পায়েস করতো, বাবা হাতে কিছু
কাঙ্ক্ষিত টাকা দিতো ...
যা দিয়ে কবিতার বই কিনতাম !

আজকাল এসব কিছুই হয়না
বাড়িতে অশক্ত শরীরের বাবা-মা
আজও চেষ্টা করেন , কিন্তু আমাকেই
পান না । আমি একা হেঁটে যাই
গলি দিয়ে কুয়াশায়, নদীর পাড়ে
বাঁশি হাতে হ্যালুসিনেটিক্‌ হই এক
অবাধ নিস্তব্ধতায় । প্রতিটা বছরে
প্রাপ্তি শুধু মিথ্যাচার আর অমোঘ
অবহেলার অবাঞ্ছিতপুরাণ ।

ভালোবেসে চাইনা কিছুই ...
এমনকি ভালোবাসাও নয় ।
মুক্তি দিতে চাই আমার রাহুসত্ত্বাকে
যা তোমাকে পাকে পাকে জড়ায় ।
হৃদয়ের গোপন ঘরটায় যে পাখিকে
অজান্তে রেখেছি, সে আজ
উড়তেই ভুলে যায়, মায়ার আড়ালে
এ কেবল নিজেকে ঠকানোর খেলা,
জেনেও আজকাল হেরে যেতে ইচ্ছে হয় ।

আমাকে পুড়তে দেখে
আলোতে উষ্ণতা নিও প্রবল এই শীতমাখা দিনে
আজ এই শুভদিনে এটুকুই চাই ।

কবিতা - কচি রেজা

0 কমেন্টস্
পাখিজন্ম
কচি রেজা


সবটুকু শরীরই পাখি তবু কেন এই মানুষজন্ম
কেন উড়ে যাচ্ছে সপক্ষের পালক

এ-ব্যাপারে পাখি সমুদ্র ছুঁয়েছে কতটুকু
কতটা কেটেছে জলের অংশ
জানা দরকার তিনভাগ স্থলের মহিমা


কিন্তু মানুষের যে মুক্তিই নেই কোনো যতই পালক থাক
অসুখ আছে যন্ত্রণার টানাপড়েনের চিৎকার
দায় মেটাতে হাত তোলে একসাথের শ্লোগানে

এভাবেই মানুষ ভিতরে ভিতরে বহন করে দাহকাল
ধীরে ধীরে হ্রাস পায় পালক

কবিতা - অনুপ দত্ত

0 কমেন্টস্
ভালবাসা নীলজল
অনুপ দত্ত



ভাল লাগা নীলজল দূর থেকে ডাকে
জলের শরীরে মন ছোঁয়ালে শরীর আতস হয়ে ওঠে৷
নীলজল গভীর হয় সলিল ভালবাসায়
ভয় হয়, খান খান হয়ে যায় শরীর৷
জীবন দান করে নীলজল,
জীবন নিয়ে খেলা খেলে নীলজল,
নীলজল, সেকি ভালবাসা স্বভাব নাকি নিতান্ত ভালবাসা অভাব৷

কবিতা - চৌধুরী ফাহাদ

0 কমেন্টস্
নজরুল স্মরণে
চৌধুরী ফাহাদ



এতোটাকাল কি করে নিরুত্তাপ থাকো
কবি, এতোটাকাল নিশ্চুপ!
কি করে নির্বাক থাকো এতোটাকাল
ছোট্ট আঁধারের ক্ষুপ!
আলোর পথে যে তুমি ছিলে নির্ভীক যাত্রী
কি করে ভালোবাসো অন্ধকার?
কখনো কি জাগে না দ্রোহের আগুন
শৃঙ্খল হারাবার?
বাঁধার আকাশে যে তুমি ছিলে ইস্পাত_
অভেদ্যবুকে দুর্বার,
কি করে থাকো নিশ্চুপ এতোটাকাল
ভালোবেসে অন্ধকার?
আলোর আকাশে সূর্য নেই আজ
চন্দ্ররেখায় বিলীন ভয়,
সাম্যের মাটিতে স্বৈর আরোহণ;
বাতাসে ভাসে মানবতার পরাজয়।
কি করে থাকো নিরুত্তাপ কবি
জড়িয়ে জড় মন-দেহ?
এতোটা ভারেও কি কাঁদে না চোখ
জাগে না বুকে দ্রোহ!
এই জলাধার লুণ্ঠিত বিচার
মুক্ত বাতাসে হাসে শকুনির দল,
শান্তির গানে আজ ভেদাভেদই প্রাণ
মননে মুখোশে ভরা সব ছল।
তুমি আমরনণ ছিলে সাম্যের জাগরণ
তোমার নামেই চর্চিত বিদ্রোহ,
সব ভুলে তুমি কি করে থাকো জড়িয়ে
সাড়েতিনহাত মাটির মোহ!
কবি, নীরবতা ছেড়ে চেয়ে দেখো
শুধু একবার মুখ তুলে স্বর খুলে হাস,
একটিবার গলা ছেড়ে গাও গান
কারাগার ভেঙ্গে আবার ভালোবাসো।

কবিতা - বিক্রম বিকি সাহা

0 কমেন্টস্
বিধবার বৃন্দাবন
বিক্রম বিকি সাহা


যে দেশের অসংখ্য বিধবা মায়ের স্থান ফুটপাথ,
যে দেশের বৃন্দাবন মানেই আশার আলো,
‘ছোট পরিবার সুখী পরিবার’-এর স্লোগান যেখানে অজুহাত,
সেই দেশে আমরা জ্বালতে ব্যস্ত জ্ঞানের আলো।
যেখানে নিঃস্ব বানপ্রস্থ চলে রোজ-রোজ,
তিলতিল করে গড়ে তোলা দশমাসের নগরজীবন।
পরিত্যক্ত বাবা মায়ের আজো সেই সন্তানের খোঁজ।
বুঝিনা কিভাবে দৃষ্টি এড়ায় রাজ-শাসনের।
পাক ধরেছে চুলে,চোখে ছানি, বাড়ছে বয়স।
প্রবীণ মন আজ অসহায়, চোখের জল বুঝি বাঁধ মানে না,
তবুও তাদের নিয়েই গান বাঁধে কোন এক ‘নচিকেতা’
আজো তারা দিন গোনে জীবনের অবসাদে,
এই তো জীবন, কাগজে কলমে ‘বিধবার বৃন্দাবন’।




কবিতা - অমিতাভ দাশ

0 কমেন্টস্
ঘাসফুল-কে সহজ উচ্চারণে
অমিতাভ দাশ


(১)

সারারাত শিশির ঝরাই...মা বলতেন
সবুজ ঘাসেতে রাখলে চোখ...চোখ
ভালো থাকে...

অবিশ্বাসের মরুভূমি এগোয় এগোয় শামুকের মতো
কিন্ত অবধারিত মৃত্যুর এতো আঁচ...

ঘাস যদি কাঁদে? অভিমানে বর্ণহীন হয়?
আমি তাই...
সারারাত শিশির ঝরাই...

ঘাসফুল,
চোখ ও তোমার...যেন ভালো থাকে!


(২)

ক্ষতচিহ্নগুলি, পালটে দিলেই
ওই একটু জলরঙ আবছায়
কী দারুণ রক্তগোলাপ!

ক্ষমতা রাখো অপরিসীম
জানি
দুঃখ দিতে জানো...

আমার যে তুলি আছে?
আছে জলরঙ্? ফুরায় না কখনো!

এঁকে যাবো রক্তগোলাপ নয়
ঘাসফুল...নীল নীল
ছড়ান ছেটান!


(৩)

ভালবাসা...হে তীরন্দাজ,
সুখ ও অসুখের তীরে নিরবিচ্ছিন্ন
বিদ্ধ করলে মাছের চোখ,
জিতে নেবে তা'কে, তাই টানটান কি
রেখেছিলে? ধনুকের গুণ!

এরকমই একনিষ্ঠ নিশ্চল আজানু...
ছিলে প্রেমে যত্নশীল তো জানি

তোমার চোখে
রক্ত গড়ায় কেন তবে? ও অর্জুন!

ঘাসফুল দেখেছে কি?

কবিতা - মেঘবালিকা

0 কমেন্টস্

প্রাণের খেলা
মেঘবালিকা



যদি মেঘ থেকে মুছে দাও  কালি
   তবে থাক,
         তোমার বাঁশি শুনবো পরে 
এখন আমায় কালবৈশাখী ডাকে

যদি মোনালিসা ডাক দিয়ে থাকো  
         তবে ছাড়ও ,
           তোমার ক্যানভাস রাখো সরিয়ে 
আমার খেলার সঙ্গিনীরা ডাকে। 

 যদি খেলা দেখে বলে ফেল - 'পাগলী
        তবে আজ ,
                       হিসাব খাতা দূরে থাক
 বেহিসাবে তোমাকেও 'পাগল' করার পালা

যদি সন্ধ্যে নামলে বল - ' আজ চলি ?'
      তবে থামো,
                  আমায় নাও তোমার সঙ্গে
খেলতে বাকি " তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা"

কবিতা - স্নেহাশীষ দাস

0 কমেন্টস্
একটি প্রেমের কবিতা
স্নেহাশীষ দাস


আজও আছে সেই দাস ভবন।।
মেস আর নেই, আমি চলে আসার এক বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।।
সাহু ভবন ও আছে।।
তোমাদের মেস মালিক লালু-বিণা ধরে রেখেছে এখন ও।
আছে দিলিপ দা এর চায়ের দোকান।।
শ্রিরুপা সিনেমা হল ও আছে।।
আমরা যেখানে আড্ডা দিতাম,
সেই 'একটু বিনোদন' রেস্টুরেন্ট টা ও আছে।।
কলেজের সেই বারান্দা টাও আছে।।
সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড ও আছে।।
আমিও আছি , তুমিও আছ।।

দাস ভবনের খোলা ছাদে,
দুপুরবেলা খাওয়ার পর আমি এসে অপেক্ষা করতাম।।
তোমার মেস এর কড়া নিরাপত্তা ভেঙ্গে কখন তুমি আসবে।।
চিরুনির অনিয়মিত পথ চলা,
তোমার কোমর পর্যন্ত চুলকে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত করতো।।
ছাদের গ্রিল টপকে তুমি এসে উঁকি দিতে।।
একটা আলতো হাসি।। ইশারায় ''খেয়েছ তুমি''।।
আমি মাথা নাড়তাম।। জোরে কথা বলা বারন।।
পাছে কেউ জেনে যায়।।
মুকাভিনয়ের পর্ব শুরু।। অনেক কথা।।
দাস ভবন- সাহু ভবনের ছাদে।।
সাক্ষী অলস দুপুর আর কিছু নির্জীব উপাদান।।

বিকেল গড়িয়ে এলে আমরা বেরতাম।।
দীঘা বাইপাস, রসুলপুর বাইপাস, খড়্গপুর বাইপাস,
হয়ে সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড......
দিলিপ চায়ের দোকানের সামনে দিয়ে যখন যেতাম,
বৈশাখীতে টান দিতে দিতে তখন কৌশিক দা, পার্থ, অলিক দা রা,
আলতো করে কিছু বাক্যবান বিদ্ধ করতো...
চুল সরিয়ে, চশমার নিচ দিয়ে তুমি দেখতে।।
আমার দিকে তাকাতে।।
দিলিপ দা হেঁকে বলতো,
নীলাঞ্জনা, চা হয়ে গেছে।। চুমুক দিয়ে যাও।।
তুমি এগিয়ে গিয়ে কৌশিক দা কে বলতে,
কথাগুলো অন্য কাউকে বললেও তো পারো।।
একটা নিশ্চিত হিল্লে হয়ে যেত।।
বোকার মতো কৌশিক দা বলে,
'এই রকবাজের কপালে আর কেউ জুটবে না গো'।।
ইনটিগ্রেসন, ডেরিভেটিভ ছাড়া আর কাউকে মন দিতে পারবো না।।
সবাই উচ্চ-স্বরে হেঁসে উঠতাম।।
দিলিপ দা চা এগিয়ে দিত।।

তোমার বোটানি অনার্স।। আমার কম্পিউটার সায়েন্স।।
তোমার কে এ ব্লক, আমার নেপাল চন্দ্র ব্লক।।
ক্লাস বাঙ্ক।। তুমি এসে সি এ ব্লকের দোতলায় দাঁড়াতে।।
এ আর কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আমিও হাজির হতাম ওখানে।।
চুটিয়ে প্রেম।। গল্প ।।আড্ডা।।
সামনের ছাতিম তলার দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যেতাম দূরে, আরও দূরে।।
মাঝে মাঝে অঙ্কিতা এসে ফোড়ন কেটে যেত।।
ফিজিক্সের বি কে ডি প্রতিদিন আমাদের দেখত একই ভাবে।।
অনেক অনেক ক্ষণের পর আমরা বেরতাম শেষ বিকেলে।।
সামনের দিদির দোকানে তখন পীযুষ রা আড্ডা মারত।।
ঢুকে যেতাম আমরাও।। সিগারেট এ আলতো চুমু দিতাম।।
তুমি বারন করতে।। আর আমি প্রতিদিন ই বলতাম এটাই শেষ বার।।

একটু আনন্দ নিতে।। বিশেষ দিনে।।
শ্রিরুপায় চলে যেতাম দুজনে মিলে।।
১৫০ টাকায় দুজনে পাশাপাশি।।
একটু অন্তরঙ্গ।। তুমি আর আমি।।
বেরিয়ে পায়ে পায়ে "একটু বিনোদন"।।
আমি চাউমিন খেতাম না।। তুমি আবার ওটা খেতেই ভালবাসতে।।
ঝগড়া হতো।। শেষে একটা সিধান্তে আসতাম।।
জমিয়ে খেতাম নিউ মার্কেটের ওই রেস্তরাঁয়।।
বেরিয়ে রাখাল চন্দ্র বিদ্যাপীঠের পাসের রাস্তা ধরে,
পাশাপাশি তুমি আর আমি।।

জানো নীলাঞ্জনা, আজ এই স্মৃতি অনেক দিন পর মনে পরল।।
তুমি কোথায় আছ আমি জানিনা।।
কিন্তু যখন এ কাঁথি যাই, এই স্মৃতি গুলো জেগে ওঠে।।
ভাবি এই তো তুমি আমার পাশে হাঁটছ।।
দিলিপ দা এর চা এর দোকানে আমার সাথে আড্ডা দিচ্ছ।।
সাহু ভবনের দোতলার ছাদে খোলা চুল ওড়াছো।।
সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ড এর পাসের রাস্তা দিয়ে আজও হাঁটছ।।
আর আমরা একে একে পেরিয়ে যাচ্ছি,
কিশোর নগর শচীন্দ্র শিক্ষা সদন।।
আমাদের কলেজের খেলার মাঠ।।
গার্লস হোস্টেল।।
পুলিস ফাঁড়ি।।
চন্দন দা এর মুদি দোকান।।
সাহু ভবন............দাস ভবন।। 


কবিতা - সুজন ভট্টাচার্য

1 কমেন্টস্
আমরা
সুজন ভট্টাচার্য


আমাদের জন্মে নেই কোন সুলক্ষণী গান,
কোনো প্রাচীন তারা
আচমকাই উড়ে এসে আর্তনাদে মায়ের
হয় নি সাক্ষী কোনো প্রথম যাত্রায়।
আমাদের জন্মে কোনো দৈববাণী নেই
নেই কোনো বিধাতার গোপন প্রকাশ।
সমুদ্র-গভীর থেকে যুগান্তের স্রোতে
কোথাও শোনায় নি, ওহে, আমাদের নাম;
তাবৎ ঋক আর প্রজ্ঞাবান সন্দর্ভমালা
তাদের কাছেও নেই আমাদের গ্রাম,
শুকনো শহরতলী অথবা
ট্রেনের ধাবমান ক্যানভাস -
যাদের আড়ালে রেখেই আমাদের বেঁচে থাকা,
বড় বেশি হ্যাংলামো করে-
তাদের ঠিকানা কোনো।

আমাদের জন্ম হলে আকুল উল্লাসে
পৃথিবীর গোলাঘরে ইঁদুরের মড়ক শুধু;
যেহেতু বর্ণনীয় নয়,
আমাদের প্রাপ্য থাকে শুধু তাদের মাত্রায়।
আমাদের জন্মদিনে সুতীব্র দহন নিয়ে
পাউরুটি-স্বপ্ন থাকে,
আর সামান্য চায়ের কাপ
যদিও তার হাতলটা ভাঙা।
যেহেতু আমাদের জন্ম নিয়ে কোনো শাস্ত্রবাক্য নেই
নেই প্রাচীন ঋষির কোনো সুগভীর শ্লোক,
স্বচ্ছন্দে আমরা তাই মুষ্টিযুদ্ধ করি
নিজেদের ছায়ার সাথে।

আমাদের অতীত নেই
সমাবেশে ঘোষণার মত,
আমাদের বর্তমান নেই,
যা কিছু সাজানো যায় উজ্বল বর্ণমালা দিয়ে;
আমাদের আগামী বলে কিছু হয়তো আছে,
না হলে কিসের জোরে
আদ্যোপান্ত এতদূর টেনে নিয়ে যাই!
এভাবেই অহরহ আমাদের নিমগ্ন বাঁচা
জীবন নামক এক বাহাত্তুরে রূপমালা কন্যাটিকে নিয়ে।
যেহেতু আমাদের পৃথক কোনো বাতায়ন নেই
অসীম গর্ভ থেকে যার ক্রমান্বয়ে বয়ে যাবে
চেতনার মুকুল,
ভোরের প্যাসেঞ্জার ধরে অগুনতি হাতে
আমাদের নিষ্ক্রমণ তাই আরো কিছু দূরত্বের সন্ধানে।

কবিতা - তন্ময় ভট্টাচার্য

0 কমেন্টস্
ছাদ থেকে... তন্ময় ভট্টাচার্য



বহুদিন বাদে নারকেল গাছে সমান সমান উত্তর দিয়েছি

হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়া প্রেমিকার মতো
বিদ্যুৎ চমকাতে জানে

লাল রঙ রাত্তিরে নিজের পোষাক খুলে
আরো বেশি লাল হয়ে ওঠে

কালবৈশাখী,তুমি এ'বছর অঘ্রাণ দেবে না?

ভুতুড়ে ধাক্কা মেরে রাস্তা করেছে তোর
চোখের মণির মতো অন্ধকার

যাকে কোনোদিন আমি ভালোই বাসিনি
এই অবেলায় সেও একটূ ছোঁয়াচ নিয়ে গেলো

ছোটো হতে থাকা ছায়া বিলিয়ে দিলাম ধুলোঝড়ে

গল্পে সত্যি খুঁজে চলেছি জীবনভর
গুঁড়ো গুঁড়ো হতে থাকা আভিজাত্যে

ভিজিয়ে দাও এই অকারণ কথকতাময়
মুহূর্তগুলো...

কবিতা - মৌ দাশগুপ্তা

0 কমেন্টস্
কোলাজে মেয়েবেলা: "আমার মুক্তি আলোয় আলোয়”….
মৌ দাশগুপ্তা



শিশুর মত হামাগুড়ি দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে সময় –
দিনরাতের ফাঁকে পায়ে পায়ে পেরিয়ে যাচ্ছে তারিখ।
তারই মাঝে ধীরে ধীরে বয়ঃপ্রাপ্তি ঘটছে আমার মেয়েবেলার।
সাথে আছে কান্না হাসি,সুখ দুঃখ,আনন্দ বিষাদ,প্রেম বিরহ,
আরও কিছু আছে ভেবে আমিও আছি।
জীবনের ফসিল হয়ে চুলের ফিতের মত জড়িয়ে...নীরব, স্থবির।
আমার মেয়েবেলা জানে বধু ও বেশ্যার ফারাক ।
আমার মেয়েবেলা টের পায়,
কখন শারীরিক প্রেম ও ধর্ষণ একাকার হয়ে যায় রাত্রির অন্ধকারে।
জীবনের বাণিজ্য-করন শেষে মেয়েবেলা বোঝে দহনজ্বালা।
দেওয়ালী পোকার মত আগুনে পুড়ে মরার সুখ।
তবু পোড়া দেহে ভাবাসা তো পোড়েনা।
তারপরেও দশমাস নাড়ি বেঁধে বড়ো করে তুলি আরেক আগুন,
ভবিষ্যতের আগুনে ছুঁড়ে ফেলার জন্য আগামীর কন্যা সন্তান!!!
অন্ধকার থেকে আগুনে আলোর উত্তরনে স্বার্থপরের মত খুঁজি বাসনার রাহুমুক্তি ।
"আমার মুক্তি আলোয় আলোয়”….