২০ জুল, ২০১৩

সম্পাদকীয় - ১ম বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা

0 কমেন্টস্
সম্পাদকীয়
প্রেরণা : জুলাইয়ের কথা



আবার এলাম বরষা বরনে।

যদিও নীল আকাশে সাদা পুঞ্জমেঘ মনে করিয়ে দিচ্ছে ভাদ্রের দিনের ভাবনা। এখনও লাস্যময়ী হয়ে ওঠা হয়নি মেদিনীর –কালো মেয়ের কথা মনে করিয়ে দিতে কালো জলবাহী মেঘ তেমন করে ভরিয়ে দেয়নি তার অপেক্ষার আঙিনা। আধভেজা মাঠের আর ক্ষতবিক্ষত নারীদের লাঞ্ছনার কাহিনী শুনতে শুনতে গাঁথা এই কথামালা আর যাই হোক খুব সুখের হবে কিনা ঠিক করবেন আপনারাই।

সাথে যোগ হয়েছে ভোট-রঙে লাল হয়ে যাওয়া কিছু মায়ের খালি কোল। এই সমাজ-জীবনে আমাদের হাতিয়ার এই লেখনীর আঙিনা। কথার পিঠে কথা সাজানো গদ্য আর ছন্দময়তাই যেন মুখরিত হয়ে আমাদের কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিতে পারে এই আশিস কামনা করি পরিবারের সকল সদস্য-সদস্যাদের কাছে।

কবিতার লড়াই

0 কমেন্টস্
কবিতার লড়াই




"প্রেরনা"তে চলা সপ্তাহব্যপি বিশেষ কবিতা লেখার প্রতিযোগিতা "কবিতার লড়াই"এর প্রথম দুই সংস্করণে পাওয়া গেল বিপুল সাড়া । প্রতি সপ্তাহে "প্রেরণা"র ফেসবুক গ্রুপ ওয়ালে দেওয়া হয় একটা বিষয়, যার ওপরে লিখতে বলা হয় যত ছোট পারা যায় তত ছোট কবিতা, সপ্তাহ শেষে বেছে নেওয়া হয় সেরা কবিতার রচয়িতাকে । কবিতা এখানে ভাব ও কল্পনার হাত ধরে পাড়ি দেয় অন্য এক জগতে... লড়াই এখানে কাছে টানার, লড়াই এখানে সমকালীন নানা সমস্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের, হাতে হাত রেখে প্রেরণার বন্ধুরা এই প্রতিযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে চলছে... আসুন, সবাই মিলে এই প্রয়াসকে আরও সফল করে তুলি ।

কথা ছিল "কবিতার লড়াই" এর বিজয়ী বন্ধুদের নাম উল্লেখ করা হবে এই ব্লগজিনে । আমরা কথা রাখলাম ...

(১ম পর্ব)

বিষয় - "কামদুনি"


বিজেতারা হলেন,

প্রথম- তন্ময় ভট্টাচার্য
দ্বিতীয়- অমৃতা ভট্টাচার্য মুখার্জী ও আবির ভট্টাচার্য
তৃতীয়- মৌ দাশগুপ্ত

(২য় পর্ব)
বিষয় - "ভোটরঙ্গ"


বিজেতারা হলেন,

প্রথম- অশোক কুমার গাঙ্গুলী
দ্বিতীয়- অমৃতা ভট্টাচার্য মুখার্জী
তৃতীয়- সিদ্ধেশ্বর নাথ

ছোটগল্প - অশোক কুমার লোধ

0 কমেন্টস্
সমর্পিতা
অশোক কুমার লোধ


নিন্ম-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী ছাত্র সায়ন ।

অনেক না-পাওয়ার যন্ত্রণা সে মেনে নিয়েছিল অনায়াসে ।

ভালো ছাত্র হওয়া ছাড়াও বলার মতো গুন ছিল তার গানের গলা এবং তুমুল রসবোধ । অশিক্ষিত কন্থেও সুরের অভাব ছিল না কোনও । চরম অভাবের মাঝেও মুখের হাসিটি ছিল অমলিন । এই দুটি কারনেই তার সঙ্গ উপভোগ্য ছিল তার প্রায় সমস্ত বন্ধু এবং তাদের পরিবারের কাছেও ।

কৈশোর ও যৌবনের সন্ধিক্ষণে যখন উড়ু উড়ু ভাব তার প্রায় সমস্ত বন্ধু বান্ধবীদের , তখনও সে নির্বিকার ভালোবাসাবাসিতে । ওসব যেন ঠিক ওর জন্যে নয় ! আসলে , ঝালমুড়ি , ফুচকা , বাদাম ভাজা সহযোগে সিনেমা দেখার বা পার্কে বসার খরচও তো নেহাত কম নয় ! নিজের পড়ার খরচ জোগাতেই তাকে একগুচ্ছ প্রাইভেট পড়াতে হয় মাধ্যমিকের পর থেকেই ।

আগুনে যৌবনের একটা জ্বালা তো থাকেই , নারীর প্রতি আকর্ষণও স্বাভাবিক । তবুও তার বেলেল্লা প্রকাশ অদ্ভুত মনে হতো সায়নের । সমবয়েসি বন্ধু বান্ধবীদের সাথে এখানেই তার মস্ত অমিল । অমিল ভালো লাগার ক্ষেত্রেও । আদুরে ন্যাকামি সর্বস্ব সুন্দরী নয় , তাকে অনেক বেশী টানত পরিনত নারীর স্নিগ্ধ সৌন্দর্য ।

তেমনই একজন ছিলেন সায়নের খুবই কাছের এক বান্ধবী সমর্পিতার মা , সম্বোধনে কাকিমা । সেই কাকিমা , যে মাত্র ২৫ বছর বয়েসেই স্বামীহারা হয়ে জীবনের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন একমাত্র মেয়েকে সাথী করে । কাকিমার জন্য অদ্ভুত একটা কষ্ট হত , আর ভীষণ ভালো লাগতো নানা বিষয়ে কাকিমার সাথে আড্ডা দিতে , গান শোনাতে , কাকিমার হাতের চায়ের স্বাদটিও ছিল অপূর্ব ।

সমর্পিতার খুব অভিমান হতো , আলাদা ঘরে সায়নকে বারবার ডেকে নিতে চাইত পড়াশোনার আছিলায় । কাকিমাও বলতেন , “ যা , এবার তোরা পড়ার ঘরে যা । ’’

পড়ার ঘরে গেলেও সমর্পিতার চোখের ভাষা পড়ার সাধ সায়নের হয়নি কোনও দিনও ! মেয়েটি শেষমেশ অকপটে জানিয়েও ছিল তার ভালোবাসার কথা । সায়ন ভেবে দেখেছে অনেকবার , “ ইস্‌ , ও যদি কাকিমার মতো হ’তো !”

প্রায় ১৫ বছর পড়ে হঠাৎ দেখা সদ্য বিধবা সমর্পিতার সাথে , বিস্মিত সায়ন বলেই ফেললো , “ তোকে আজ ঠিক কাকিমার মতো স্নিগ্ধ লাগছে রে ! ’’

সমর্পিতার দুটি চোখ থেকে গড়িয়ে নেমে এলো আজন্ম সমর্পণ ।

ছোটগল্প - কাশীনাথ গুঁই

1 কমেন্টস্
সুরভী
কাশীনাথ গুঁই


মধুমতীর বাঁকের ছোট গাঁয়ের চাষার ছেলে অনি।ওর বাবা পণ্ডিতমশায়ের ভাগচাষী।অনিকে পরের জমিতে ঘাম ঝরিয়ে তেভাগার অকাট মুখ্যু না হতে হয় এই ছিল তার আশা।তাই হাতে পায়ে ধরায় অনিকে ভর্তির ব্যবস্থা করেন পণ্ডিতমশায়।সে ছেলে যে আধপেটা খেয়ে মলাটহীন আধছেঁড়া বই ঘেঁটে ফিবছর ক্লাসে ফার্ট হবে কে জানতো সেকথা।

সুরভী পণ্ডিতমশায়ের বড় নাতনী। সে এখন ক্লাস এইট। ছোটবেলা থেকেই পাড়ার ভাল ছেলে অনির কাছে পড়ার সময় পড়া বুঝেছে এক্কাদোক্কার সাথী হয়েছে।পড়া শেষে সূয্যি পাটে বসার সময় মাঠের ধারে দিঘির পাড়ে বসে ঘাস চিবোতে চিবোতে সূয্যিটাকে দিগবলয়ে লুকোচুরি খেলতে দেখেছে।মধুমতীর বুকে নৌকা বাইচের উত্তেজনায় বুকে হাপর টানতে টানতে অনির পিঠে মুখ লুকিয়েছে।

অনির মাধ্যমিকের বছর সুরভী ক্লাস নাইনে উঠতেই তার বাবা তাকে নিয়ে গিয়ে কর্মস্থল কলকাতার এক ভাল স্কুলে ভর্তি করে দিল।পূজোর ছুটিতে এসে সুরভী অনির পরীক্ষায় লেখার জন্য পার্কার ফাউন্টেন পেনটা দিয়ে ওকে মনে রাখতে বলেছিল।ভাইফোঁটার বিকেলে নদীর পাড়ে গিয়ে ঘটিম দিয়ে মুক্ত অক্ষরে নিজের নামটা মন্দিরের দেওয়ালে লিখে অনির কানে কানে কি যেন বলেছিল।

পরদিন সুরভী কলকাতা চলে যাওয়ার আগে অনিকে টানতে টানতে আবার মন্দিরে নিয়ে গিয়ে হঠাৎ একটা প্রণাম করে হাত পেতেছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঠোঁটে একটা গরম ছ্যাঁকা টের পেয়ছিল অনি। ততক্ষণে সুরভী হরিণীর মত নাগালের বাইরে।শহরে যাওয়ার সময় খেয়াঘাটে ফের একবার সুরভীর চোখে কি যেন পড়ে নিল অনি।সেই রাতেই অনির রাতজাগার হাতেখড়ি হল।

মাধ্যমিকের ফল গাঁয়ের মুখ উজ্জ্বল করলেও অনি আরও ভাল করতেই পারতো।তবু জেলার দ্বিতীয় স্থানটা ওর দখলে রেখছে অনি। তাই নারাণঞ্জের স্কুলে ভর্তি হতেও অসুবিধে হল না।কিন্তু কোঁচরে মুড়ি বেঁধে রোজ যাতায়াতে ওর শরীরটা বেশ ভেঙ্গে পড়ল।মনটাও ওর সঙ্গে শত্রুতা করতে ছাড়ল না।খেয়াঘাটে যাতায়াতে মন্দিরটা এড়িয়ে যাওয়ার পথ ছিল না যে।রাতের আকাশে তারাদের ভীড়ে সেই হাতপাতা মুখটা ওর ক্লান্ত শরীরটাকেও ঘুমের ঘরে যেতে দিতে চাইত না।

উচ্চ মাধ্যমিকের ফল শহরের সেরাদের মাঝামাঝিতে নামাল অনিকে।ফল বেরোনোর দুদিন আগেই ওর বাবা সাংসারিক মায়া ত্যাগ করে অনির ভাগচাষীর ছেলের পরিচয়টার সাথে দুমুঠোর ব্যবস্থাটাও কেড়ে নিল।অগত্যা অনি রোজগারের আশায় কলকাতামুখো হচ্ছে শুনে পণ্ডিতমশায় ডেকে পাঠালেন ওকে।কলকাতা শহরের জীবনে কত কঠিন প্রতিযোগীতা ও নিদারুন পরিণতি সেকথা বুঝিয়ে অনিকে নিবৃত্ত করলেন পোড়খেকো মানুষটি।ওনার পরিচিত নারাণঞ্জের একটা মোটর গ্যারজে শিক্ষানবীশ হিসেবে কিছু রোজগারের বন্দোবস্তও করে দিলেন তিনি।নাহলে সুরভী আর তার বাবা এ ছেলে উপর দুর্বল হয়ে আরও পড়াশুনার ব্যবস্থা করে দিলে বিপত্তি বাড়বে মোক্ষম। এ ছেলে যে একদিন জাতে উঠে তাঁর বংশে চুনকালি মাখাবে তা তিনি অনক আগে টের পেয়েই তো সুরভিকে কলকাতা ঠেলছিলেন।

মা আর বোনের দায় টানতে টানতেও অনি একদিন একটা গ্যরাজের সুযোগ্য মালিক হল বৈকি। বোনকে জেদ করে কলকাতাতেই সুপাত্রস্থ করলও সে।তখনই জানল যে সুরভি আর তার নেই।বোনের বিয়ের পর ওর মায়ের খুব শখ হয়েছিল বৌরান্না ভাত খাওয়ার।নানা অছিলায় অনির এড়িয়ে যাওয়াতে কারণ বুঝতেও দেরী হয়নি মায়ের।মেয়ের মেয়েকে আদর করতে করতেই এক বিকলে তার চোখে চির সন্ধ্যা নেমে এল।

বোনের আগ্রহে আর আপন মনের নিভৃত কোন বাসনার টানে অনি একদিন দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের পাশে তার ছোট্ট গ্যারেজ খুলে বসল।গুরুমশাইকে কথা দিয়েছিল অনি কখনও দখিন কলকাতামুখো হবে না। সেকথাও রেখেছে সে।অল্প দিনেই সুনামও এল তার।এল না শুধু সে যার প্রতিক্ষায় তার এই মন্দির পাশে কাজের ছুতোয় বসে থাকা।

ছোটগল্প - অংকন নন্দী

0 কমেন্টস্
ইচ্ছা থাকিলে উপায় হয়
অংকন নন্দী (সাতকাহন)



পরীক্ষার নাম শুনলেই আমার হৃৎকম্প দিয়ে জ্বর আসে।

তবু, পরীক্ষা আসার কোন বিলম্ব নেই। যতই লুকিয়ে থাকি আর চক্ষু কর্ণ বুজে থাকার চেষ্টা করি, তবু সে ঠিকই আমাকে খুঁজে বের করে আর ক্যাঁক করে ঘাড় চেপে ধরে বলে, কই যাবা চান্দু? আমি আসিয়াছি। চল গিয়া হলে বসি আর তোমার মগজ ধোলাইকার্য সম্পাদন করি।

কেন রে বাবা, আমাকে না গুঁতলে কি তার পেটের ভাত হজম হয়না! সবার পরীক্ষা নেয়ার কোন দরকার আছে। ওই যে কতগুলো গুডি গুডি টাইপস ছেলে সারাদিন নাকখানা বইয়ের পাতায় গুঁজে রাখে আর বাসক পাতার রস খেয়ে মগজ পরিষ্কার করে,তাদের পরীক্ষা নিয়ে সন্তুষ্ট থাক না।প্রয়োজনে আমাদেরটাও ওদের কাছ থেকে নে। তবুও আমাদের রেহাই দিলেই হয়।

তার কোন যো নেই, আর ফলস্বরূপ আমি বর্তমানে পরীক্ষার হলে বসে ফ্যানের বাতাসেও দরদর করে ঘামছি আর মনের সুখে কলম চিবিয়ে আকাশ পাতাল ভাবছি।

আজকের পরীক্ষা বাংলা দ্বিতীয় পত্র। পরীক্ষা তো পরীক্ষা, যমের সাক্ষাৎ বড়ভাই, তার উপর আবার প্রথম দ্বিতীয় লাগিয়ে গোঁদের উপর বিষফোঁড়া। যেন আছাড় একটা মেরে খেদ মিটে নি, তাই মাথায় তুলে দ্বিতীয় আছাড়।

বড় আশা করে এসেছিলাম ইংরেজি অংকে তো প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে টাসকি খেয়ে বজ্রাহতের মত বসে বসে এইসব প্রশ্নের অসাড়তা চিন্তা করা ছাড়া কিছুই করার থাকেনা। এটা তো বাংলা,তাই আজ সাধ মিটিয়ে লিখব, মনের খেদ মিটিয়ে নেব আজ। কিন্তু বাংলা প্রশ্ন দেখেও আমি তথৈবচ! বাংলা হরফে মনে হচ্ছে কিসব গ্রীক ভাষা লেখা! এর সমাধান আমার কর্ম নয়। তাই পুনর্বার কলম চিবাইতে চিবাইতে আকাশ পাতাল চিন্তাভাবনা।

চিন্তা করতে করতেই হঠাৎ মনে পড়ল বাপজানের কথা।

গতবার সব বিষয়ে ডাব্বা মারার পর আমাকে পেয়ারার ডাল দিয়ে তার স্নেহাশীষ দিতে দিতে বলেছিলেন, কেমন ছেলে তুই, একটা বিষয়েও কি তোর পাশ করতে নেই! পুনরায় সে কাহিনীর রিক্যাপ করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও আমার নেই। সে বার পিঠের কোন জায়গা তিনি তার আদরের আওতার বাইরে রাখেন নি, এবার না পুরো শরীর জুড়েই শুরু করে দেন। তাই অন্তত: কিছু লেখার চেষ্টা করা উচিত।

পুরো প্রশ্নপত্রে আবার চোখ বুলালাম। সেই আবার অপিনিহিতি-হ্রেষা-বিসমিল্লায় গলদ-আর কলুর বলদ দেখতে দেখতে আরো একবার টাসকি খেলাম। এইসব হাতুড়িপেটা কথার কি সব মানে কে জানে! শুনলেই মাথা ঝনঝন করে।

অবশেষে এক জায়গায় এসে চোখ আটকে গেল আর কিছুটা অন্তত: আশার আলো দেখতে পেলাম।

ভাব সম্প্রসারণ কর- “ইচ্ছা থাকিলে উপায় হয়।”

এটা নিয়ে কিছু লেখা গেলেও যেতে পারে। আমি শুরু করে দিলাম-

ইচ্ছা থাকিলে উপায় হয়।

কথাটা কিছুক্ষেত্রে ঠিক হলেও সবক্ষেত্রে ঠিক নয়। ইচ্ছা থাকলেও কোন কোন সময় উপায় হয়না, আবার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও কোন কোন সময় উপায় হয়ে যায়।

এই যেমন আমার এখন খুব ইচ্ছা করছে ওই ভারি বাইফোকাল চার চোখ লাগানো ডেঁপো ফার্স্ট বয় থেকে খাতাটা কেড়ে নিয়ে দেখে দেখে আমার খাতায় কপি মারি। কিন্তু হরিদাশ স্যারের খবরদারিতে সে হবার উপায় নাই। আবার কোন সময় নলিনীবাবুর আমগাছ থেকে পাকা আম পেড়ে খাবার বিপুল ইচ্ছে হওয়া সত্ত্বেও পেটমোটা মালী ভজহরির দৌরাত্ম্য তা হওয়া মুস্কিল।

আবার ধরা যাক পাশের বাড়ীর মাধবীর সাথে হঠাৎ কথা বলতে ইচ্ছে হল। কিন্তু তার মা শচীদেবীর হাঁক এড়িয়ে কি করে তা সম্ভব তা আমার মাথায় ঢোকে না। তাই ইচ্ছা থাকিলেই উপায় হয় না।

কিন্তু ইচ্ছা না থাকিলেও উপায় হয়ে যায় বেশির ভাগ সময়।

ঘাড় ঘুরিয়ে পিছের ছেলের খাতা থেকে টুকলি করার সময় কামরুল স্যারের হাতে কানমলা খেয়ে বের হতে বিন্দুমাত্রও ইচ্ছে করেনি আমার, তবু স্যারের ঠ্যাঙানির হাত এতই ভাল যে পালিয়ে বাঁচার যো নেই। গতবার পূজোয় দাদুর চেয়ার তলে পটকা ফাটিয়ে তার দায়ে সারা বিকেল কাঠফাটা রোদে দাঁড়িয়ে শুটকিশুকানো হতে বিন্দুমাত্রও ইচ্ছে হয়নি আমার ,তবু বাবার গরু পেটানো লাঠির ভয়ে নড়নচড়নের উপায় নেই।

মাধবীকে চিঠি দিতে গিয়ে জানলা গলে ছোঁড়া চিঠি গিয়ে পড়ে ওর দিদির কোলে, ব্যস প্রেমর সলিল সমাধি না হয়ে আর উপায় কি?

তাই, সুধীজনের জন্য ইচ্ছামতন উপায় হইলেও আমজনতার ইচ্ছা না থাকিলেই উপায় হয় ।।

ছোটগল্প - অদ্রি আহমেদ

0 কমেন্টস্
একটা খোলা চিঠি
অদ্রি আহমেদ




প্রিয়ন্ত,

তোকে নিয়ে লিখা এটা আমার ১ম খোলা চিঠি । তুই চিঠি লিখতে ভালবাসিস আর আমি তোর লিখা চিঠি গুলো পড়তে ভালবাসি । তুই খুব রাগ করতি তোকে চিঠি লিখতাম না বলে । তুই তো জানিস আমি কিছু লিখতে পারি না ! এই দেখ আজও লিখতে পারছি না !

অনেক দিন হল তোর কণ্ঠ শুনি না ! তুই তো জানিস তোর কণ্ঠ না শুনলে ঘুমাতে পারি না , তাই যে দিন থেকে তুই আমার খোঁজ নিস না বিশ্বাস কর সে দিন থেকে আজও আমার প্রতিটা রাত কাটে নির্ঘুম। এতে তোর কিছু আসবে যাবে না , তোর কাছে আমি কখনোই কিছু ছিলাম না , কিন্তু তুই তো আজও আমার কাছে অনেক কিছু রে ! আমি জানি তুই খুব ভাল আসিছ কিন্তু তোকে ছাড়া আমি ভাল নেই !

হঠাৎ তুই যেদিন থেকে আমার খোঁজ নেয়া বন্ধ করে দিলি , আমি ঐ দিন থেকেই ঠিক করেছি তোকে কিছু বলব না ! দেখ তোকে আমি কিছু বলিনি শুধু নিজে কষ্ট পেয়ে যাচ্ছি। তোর দেয়া কষ্ট গুলো আমি মেনে নিয়েছি কারণ আমি তোকে সত্যি খুব ভালবাসি।

তোকে বিরক্ত না করি সে জন্য নিজেই ফোন টা ভেঙ্গে ফেলেছি, সিম টা ভেঙ্গে ফেলেছি, অনেক কষ্ট করে বুকে পাথর চাপা দিয়ে নিজের ভালবাসা গোপন করেছি ! শুধু তোর খুশির জন্য। জানিস তুই যখন আমাকে বকা দিতি , রাগ করতি, পড়া লেখার জন্য ঝগড়া করতি নিজেকে তখন একটা সুখী মানুষ মনে হতো। তোর আঁকা ছবি, তোর লিখা কবিতা, অসম্ভব সুন্দর করে বলা কবিতা, বাঁশির সুর আমি খুব মিস করি।

জানি না , তুই আমাকে ছাড়া কেমন আছিস ? আচ্ছা তুই কি ঠিক মত খাস? নাকি এখনও তোর খাওয়া দাওয়ার প্রতি অনীহা রয়ে গেছে? এখন তো আমি নেই যে তোকে খাওয়ায় জন্য জোর করব ! ঠিক মত রাতে বাড়ি ফিরিস তো? তুই তো আমার আফসোস করা পছন্দ করতি না ! আফসোস ছাড়া কিছু আছে নাকি আমার এই জীবনে ? তুই আমাকে কথা দিয়েছিলি আমাকে ম্যাজিক দেখাবি, আমার হাত ধরে হাঁটবি, আমার ইচ্ছে গুলো পূর্ণ করবি ! বাস্তবে তো তা হোল না ! তাহলে তুই বল আফসোস না করে কি করব? হুট করে এভাবে আমাকে তোর ছেড়ে যাওয়ার কারণ না আজও আমার কাছে অজানা রয়ে গেল !

জানতে খুব ইচ্ছে করে কেন তুই এমন করলি ? কি দোষ ছিল আমার? নাকি আমার থেকে তোকে আরও বেশি কেউ ভালবাসতে শুরু করেছে ? আমি তো তোকে অনেক আগেই বলেছিলাম তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি তখন কেন বলতি বেশি বুঝবা না ? দেখেছিস আমার ভয় টাই বাস্তবে রূপ নিয়েছে । এ জন্য আমি তোকে দায়ী করব না হয়তো আমারই কোথাও ভুল আছে । ভাল থকিস , আমাকে তোর ভালবাসা লাগবে না । শুধু একবার স্বীকার করিস যে আমি তোকে ভালবাসি।

আর লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে না । আজ এখানেই শেষ করলাম। আর হয়তো কখনো তোকে বলা হবে না , আমি সত্যি তোকে বড্ড ভালবাসি।কি দোষ ছিল আমার? নাকি আমার থেকে তোকে আরও বেশি কেউ ভালবাসতে শুরু করেছে ?

ইতি,                                         
তোর অবহেলার                
মেঘ                       

প্রবন্ধ - মৌ দাশগুপ্তা

2 কমেন্টস্
কবিতার রহস্য : বনলতা সেন
মৌ দাশগুপ্তা


“হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি ; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি ; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।“
'বনলতা সেন' কবিতাটি সম্ভবত বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বহুল পঠিত কবিতাগুলোর একটি। কবিতাকে ভালবাসেন অথচ এই বনলতা সেন কবিতা পড়েননি এমন মানুষ পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে।বনলতা সেন আমাদের স্বপ্ন হয়ে আসে, বনলতা সেন আমাদের গান হয়ে আসে, বনলতা সেন নাটকের চরিত্র হয়ে আমাদের কাছে ধরা দেয়। প্রেমিকের কাছে তার প্রেমিকা বনলতা, প্রেমিকার নিজের কাছে সে নিজে বনলতা।


বনলতা সেন কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় আশ্বিন ১৩৪২/ ডিসেম্বর ১৯৩৫ সালে। কবিতাটি তৎকালীন ‘কবিতা’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়, সে সময় কবিতা’র সম্পাদক ছিলেন কবি বুদ্ধদেব বসু। জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর পর পাণ্ডুলিপি ঘেঁটে দেখা যায়, কবিতাটি লেখা হয়েছিলো ১৯৩৪ সনে।এটি একটি ক্ষুদ্র-অবয়ব কবিতা। কবিতার চরণ সংখ্যা ১৮ এবং ব্যবহৃত শব্দ সংখ্যা ১৩৫ টির মতো। এই ক্ষুদ্র আয়তনের কবিতাটিতে সৃষ্ট রহস্য এতো গভীর, এতো ব্যাপক যে এনিয়ে কাব্য-বোদ্ধাদের খননকার্য আজো অব্যাহত রয়েছে।

প্রকাশের পর থেকেই বনলতা সেনকে নিয়ে সাহিত্যপ্রেমী মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন। ‘বনলতা সেন’ কবিতায় সাকুল্যে তিনবার বনলতা সেনের নাম নিয়েছেন জীবনানন্দ দাশ।

· প্রথম স্তবকের শেষ চরণঃ "আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন" ;

· দ্বিতীয় স্তবকের শেষ চরণঃ "পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন" ; এবং

· তৃতীয় স্তবকের শেষ চরণঃ "থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন" ।


'বনলতা' কে ছিলেন

বনলতা সেনের চুলকে তুলনা করা হয়েছে বিদিশা নগরীর আঁধারের রহস্যময়তার সাথে, মুখশ্রীকে তুলনা করা হয়েছে শ্রাবস্তী’র কালজয়ী শিল্প উপাদান হিসেবে। বনলতা’র চোখ পাখির নীড়ের মতো আশ্রয়দাত্রী, ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়া। মধ্যযুগের শিল্প-ঐশ্বর্য্যের ধারক বিদিশা’র অমোঘ আকর্ষণের মতো তার চুলের নেশা, শ্রাবস্তীর হাজারো স্থাপত্য আর লাখো শিল্পীর সযত্ন-মনসিজ মুখচ্ছবির মতো তার রূপ। সারাদিনের ক্লান্তি আর অবসাদ পেছনে ফেলে পাখি যেমন সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরে তৃপ্তি পায়, বনলতা’র চোখ তেমনি।

কে এই নারী? কী তার পরিচয়? বনলতা সেন বইটি হাতে নিয়ে গোপালচন্দ্র রায় একবার কবিকে জিজ্ঞাসাও করেছিলেন, ‘দাদা, আপনি যে লিখেছেন নাটোরের বনলতা সেন, এই বনলতা সেনটা কে? এই নামে সত্যি আপনার পরিচিত কেউ ছিল নাকি?’ প্রশ্ন শুনে শুধু মুচকি মুচকি হেসেছেন কিন্তু কোনো উত্তর দেননি কবি। বনলতা সেন বিষয়ে আজীবন এই নীরবতা বজায় রেখেছেন কবি, অজান্তেও কখনো কোনো প্রিয়জনের কাছে বনলতার কোনো কাহিনী বর্ণনা করেননি। তবে কবি নীরব থাকলেও গবেষকেরা কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি, বনলতা সেনের অন্বেষণে প্রাণান্ত করেছেন। গবেষকদের কাছে বনলতা সেন রয়ে গেছেন এক রহস্যময়ী নারী।

১। কেউ কেউ মনে করেন বনলতা সেন নামটির ভেতর তার পরিচয় লুকিয়ে আছে। নামটির দু’টি অংশ বনলতা আর সেন। বনলতা প্রকৃতি আর সেন নারী। জন্মলগ্ন থেকেই মানবজাতি নারী আর প্রকৃতির কাছেই একমাত্র শান্তি খুঁজে পেয়েছে কবির মূল বক্তব্য এটিই। এই বিষয়টি স্পষ্ট করতেই কবি এই নামটি বেছে নিয়েছেন, সমসাময়িক আধুনিক নারীর নামের সাথে সাদৃশ্য রেখে কবি তার স্বভাবজাত রোমান্টিকতার আড়াল তৈরি করেছেন মাত্র।

২। বিশিষ্ট আমলা আকবর আলী খান তার 'পরার্থপরতার অর্থনীতি' বইয়ে বনলতা সেনের 'সেন' উপাধি আর তার বাসস্থান নাটোর এই দুইয়ের সংযোগে আরেকটি ব্যাখ্যা হাজির করেছেন। আকবর আলী খানের মতে 'নাটোর' শব্দটির ব্যবহার শুধু বনলতা সেনের ঠিকানা নির্দিষ্ট করতে নয়, তার পেশা নির্দিষ্ট করতেও। দলিল দস্তাবেজ ঘেঁটে দেখা যায় এ শতাব্দীর প্রথমদিকে নাটোর কাঁচাগোল্লার জন্য নয়, বিখ্যাত ছিলো রূপোপজীবিনীদের ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে। 'সেন' শব্দটি তার বংশের পরিচয় বহন করছে, পেশা গ্রহণ করবার পর 'বনলতা' নামের আড়ালে সে তার নিজের আসল নাম গোপন করেছে। ‘দু’দণ্ড শান্তি’ কথাটির মূল অর্থ আদিম অভিসার, আর এই কবিতায় আরোপিত 'অন্ধকার' বলে দেয়, বনলতা সেন’দের আলোকোজ্জ্বল পৃথিবীতে পাওয়ার সুযোগ নেই। 'অন্ধকারে মুখোমুখি বসবার' স্মৃতিটুকু সাথে নিয়ে পাখির মতোই ঘরে ফিরে যেতে হয়; যেখানে অপেক্ষা করে সাধারণ নারী’।

৩। জীবনানন্দের পাণ্ডুলিপি উদ্ধারক ডা. ভূমেন্দ্র গুহ কবির 'লিটেরেরি নোটস' গবেষণায় জানা যায় কবির ডায়েরিতে লিটারেরি নোটস্‌ হিসেবে Y নামে এক মেয়ের নাম লেখা আছে। জীবনানন্দ তার নিজের হস্তাক্ষরে লিখে রেখেছেন Y=শচী; এই ‘শচী’ জীবনানন্দের গল্প ‘গ্রাম ও শহরের গল্প’র শচী। ডায়েরির অন্যান্য পৃষ্ঠা বিবেচনায় ভূমেন্দ্র গুহ বলেছেন, বাস্তবে সে শোভনা - কবির এক কাকা অতুলান্ত দাশের মেয়ে - যার ঘরোয়া নাম বেবী। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ কবি এই শোভনা মজুমদারকে উৎসর্গ করেছেন। অর্থাৎ ভূমেন্দ্র গুহের বিবেচনায় বনলতা সেন নিখাদ প্রেমের কবিতা।

৪। বনলতা সেন রচনার পচাত্তর বছর পূর্তিতে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে অশোক মিত্র জানাচ্ছেন তিনি নিজে কবি জীবনানন্দ দাশকে জিজ্ঞেস করেছিলেন এই ‘বনলতা সেন’ কে? কবি বনলতা সেন কে এই প্রশ্নের সরাসরি কোন জবাব দেন নি। শুধু বলেছেন, বনলতা সেন নামটি কবি পেয়েছিলেন পত্রিকা থেকে। সে সময় নিবর্তক আইনে বনলতা সেন নামে এক একজন রাজশাহী জেলে বন্দিনী ছিলেন। সেখান থেকেই কবি এই নামটি গ্রহণ করেন। এই বনলতা সেন পরে কলকাতার কলেজে গণিতের শিক্ষকতা করতেন।

গবেষকেরা বনলতা সেনকে রহস্যময়ী মানবী হিসেবে চিত্রিত করলে কী হবে; নাটোরের মানুষের কাছে কিন্তু বনলতা রক্তমাংশের মানুষ, পরম আপনজন। এমনকি তাঁকে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠেছে কয়েকটি কাহিনী। যদিও এসব কাহিনী ইতিহাসের কোনো সাক্ষ্য দ্বারা সমর্থিত হয়নি। কিন্তু প্রতিক্ষেত্রেই কাহিনীর নায়িকা একজনই, নাটোরের বনেদি সুকুল পরিবারের তারাপদ সুকুলের ম্যানেজার ভুবন সেনের বিধবা বোন, বনলতা সেন।কবির সাথে তার ক্ষণিকের সাক্ষাৎ কিন্তু সদ্যবিধবা নতমুখী কিশোরী কবির মনে এক গাঢ় বিষণ্নতার ছাপ রেখে যান। তারই অবিস্নরণীয় প্রকাশ নাকি ‘থাকে শুধু অন্ধকার মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন’।

‘বনলতা সেন’ কবিতায় তিনবার উচ্চারণে বনলতা সেনের প্রতি মোহ কবির কাটে নি। কবির আরো কবিতা-গল্পে বনলতা সেন এসেছে নারী চরিত্ররূপে। এমনকি বনলতা সেন কবিতা প্রকাশ হবার আগেই কবি তার একটা গল্পে বনলতার রূপের বর্ণনা দেন, তার মোহগ্রস্ততার প্রকাশ ঘটান, কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তা প্রকাশ করেন নি কারো কাছে।১৯৩২ খৃস্টাব্দে লিখিত এবং প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল অন্তরালবাসী কারুবাসনা নামীয় উপন্যাসে প্রথম 'বনলতা সেন' নামটি পাওয়া যায়। অধিকন্তু 'হাজার বছর ধরে খেলা করে', 'একটি পুরোনো কবিতা' এবং 'বাঙালি পাঞ্জাবী মারাঠি গুজরাটি' শীর্ষক আরও তিনটি কবিতায় এ নামটি আছে।

১। (কারুবাসনা, রচনাকাল-১৯৩৩)

সেই বনলতা-আমাদের পাশের বাড়িতে থাকত। কুড়ি-বাইশ বছর আগের সে এক পৃথিবীতে...আচঁলে ঠোঁট ঢেকে আমার ঘরের দিকেই আসছিল। কিন্তু কি যেন অন্যমনস্ক নত মুখে মাঝপথে গেল থেমে, তারপর খিরকির পুকুরের কিনারা দিয়ে, শামুক-গুগলি পায়ে মাড়িয়ে, বাঁশের জঙ্গলের ছায়ায় ভিতর দিয়ে চলেগেল সুনিবিড় জামরুল গাছটার নিচে একবার দাঁড়াল, তারপর পৌষের অন্ধকারের ভিতর অদৃশ্য হয়ে গেল।

অনেকদিন পরে সে আবার এল; মনপবনের নৌকায় চড়ে, নীলাম্বরী শাড়ি পরে, চিকন চুল ঝাড়তে ঝাড়তে আবার সে এসে দাঁড়িয়েছে; মিষ্টি ঠাণ্ডানির্জন দুখানা হাত, ম্লান ঠোঁট, শাড়ির ম্লানিমা। সময় থেকে সময়ান্তর, নিরবিছিন্ন, হায় প্রকৃতি, অন্ধকারে তার যাত্রা।

২। (একটি পুরনো কবিতা: অগ্রন্থিত)

আমরা মৃত্যু থেকে জেগে উঠে দেখি
চারদিকে ছায়া ভরা ভিড়
কুলোর বাতাসে উড়ে ক্ষুদের মতন
পেয়ে যায়-পেয়ে যায়-অণুপরমাণু শরীর।

একটি কি দুটো মুখ-তাদের ভিতরে
যদিও দেখিনি আমি কোনো দিন-তবুও বাতাসে
প্রথম গার্গীর মতো-জানকীর মতো হয়ে ক্রমে
অবশেষে বনলতা সেন হয়ে আসে।

৩। (বাঙালি পাঞ্জাবি মারাঠি গুজরাটি: অগ্রন্থিত)

বনলতা সেন
তুমি যখন নদীর ঘাটে স্নান করে ফিরে এলে
মাথার উপর জলন্ত সূর্য তোমার,
অসংখ্য চিল, বেগুনের ফুরের মতো রঙিন আকাশের পর আকাশ
তখন থেকেই বুঝেছি আমরা মরি না কোনো দিন
কোনো প্রেম কোনো স্বপ্ন কোনো দিন মৃত হয় না
আমরা পথ থেকে পথ চলি শুধু-ধূসর বছর থেকে ধূসর বছরে-
আমরা পাশাপাশি হাঁটতে থাকি শুধু, মুখোমুখি দাঁড়াই;
তুমি আর আমি।

৪। (শেষ হল জীবনের সব লেনদেন: অগ্রন্থিত)

শেষ হল জীবনের সব লেনদেন
বনলতা সেন।

কোথায় গিয়েছ তুমি আজ এই বেলা
মাছরাঙা ভোলেনি তো দুপুরের খেলা
শালিখ করে না তার নীড় অবহেলা
উচ্ছ্বাসে নদীর ঢেউ হয়েছে সফেন,
তুমি নাই বনলতা সেন।

৫। (হাজার বছর শুধু খেলা করে: বনলতা সেন)

হাজার বছর শুধু খেলা করে অন্ধকারে জোনাকির মতো:
চারিদিকে চিরদিন রাত্রির নিধান;
বালির উপরে জ্যোৎস্না-দেবদারু ছায়া ইতস্তত
বিচূর্ণ থামের মতো: দ্বারকার;-দাঁড়ায়ে রয়েছে মৃত, ম্লান।
শরীরে ঘুমে ঘ্রাণ আমাদের- ঘুচে গেছে জীবনের সব লেনদেন;
মনে আছে? শুধাল সে-শুধালাম আমি শুধু 'বনলতা সেন?'

বনলতা সেন। ‘নাটোরের বনলতা সেন’। ‘বনলতা সেন’ কে ছিলেন, কী ঘটনা ছিল কবিতার পটভূমিতে সে বিষয়ে অস্পষ্টতা বিরাজমান, তবে সেসব অস্পষ্টতায় ভেতর আলো সন্ধানের প্রয়োজনীয় চাবিটিও কবিতার ভাঁজে ভাঁজে গুঁজে দিয়ে গেছেন কবি। ফলে আলো-আঁধারির সীমানাহীন মায়াবী প্রাঙ্গণ হয়ে উঠেছে কবিতাটি। এই আলো-আঁধারি কবিতাটির ফুরিয়ে-না-যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। কবি বেঁচে থাকেন তার কবিতায়। আর কাব্য চর্চায় মধ্যদিয়ে কবিতাকে বাঁচিয়ে রাখেন স্বয়ং কবি। ‘বনলতা সেন’ বাংলা সাহিত্যের রহস্যময়ী নায়িকা হয়েই চির অমর থাকুন।।


প্রবন্ধ - শ্রীশুভ্র

0 কমেন্টস্
প্রেম পিরিতি পরকীয়া
শ্রীশুভ্র


পর্ব - ১

যৌবনের ধর্ম প্রেম! হৃদয়ের ধর্ম প্রীতি! এই দুয়ের প্রভাবেই নর নারী পরস্পরের মধ্যে আশ্রয় খোঁজে! পরস্পরের সাথে ঘর বাঁধে! পরস্পর হাতে হাত রেখে, পায়ে পা মিলিয়ে চলে! গড়ে ওঠে সংসার! সামাজিক পরিসরে তাকে দাম্পত্য বলে আমরা নিশ্চিন্ত হই! কিন্তু সেই সামাজিক পরিসরে দাম্পত্যের সীমানার বাইরে ঐ প্রেম প্রীতির টানেই নর নারী মিলিত হলেই সামাজিক পরিভাষায় আমরা তাকেই পরকীয়া বলে গালমন্দ করতে ভালোবাসি!


ভুলে যাই প্রেম প্রীতি শরীর মনের ব্যাপার! সামাজিক রীতি নীতি, ধর্মীয় বিধি নিষেধ, আইনের ধারা উপধারার উপর তা নির্ভর করে না! বৈবাহিক সম্পর্ককে সামাজিক পরিসরে আমরা পবিত্র বন্ধন বললেও, পরকীয়াকে ব্যাভীচার বলে ধরে নিই!

সামাজিক পরিসরে আমরা পরকীয়াকে যত নিন্দাই করি না কেন, শিল্প সাহিত্য চলচিত্রে পরকীয়ায় নান্দনিকতার খোঁজে আমরা অক্লান্ত! বিশ্বসাহিত্যের ভাণ্ডারে শ্রেষ্ঠতম সাহিত্যকীর্তিগুলির অধিকাংশই কোনো না কোনো ভাবে এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে!

নর নারীর শরীর মনের সংঘটনে দাম্পত্যের সীমানা ছাড়িয়ে এই যে বিধিবদ্ধ সম্পর্কের বাইরে সম্পর্ক স্থাপনের আর্তি, এর মধ্যে দিয়ে মানবমনের অসীমতার এক অনন্ত প্রকাশ ফুটে ওঠে! সামাজিক বিধিবদ্ধতায় সংসারের দায়বদ্ধতার বেড়াজাল এড়িয়ে মুক্ত অঙ্গনে খোলা হাওয়ার স্পর্শে প্রেমর অনন্ত সম্ভাবনার এক রূপই হয়তো পরকীয়া!

কিন্তু সমাজ সংসারের দাবী,দায়িত্ব, এবং খবরদারী পরকীয়ায় অভিশাপ হয়ে ওঠে!

সমাজবদ্ধ মানুষ সমাজ সংসারের সুবিধের জন্যেই বৈবাহিক দাম্পত্যকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে!

বিশেষ করে সন্তানের মঙ্গল এবং বেড়ে ওঠার বিষয়ে, বৈবাহিক দাম্পত্যের কোনো বিকল্প আজও দেখা যাচ্ছে না! আবার পুরুষতান্ত্রিক সমাজ বাস্তবতায় বৈবাহিক সূত্রেই অধিকাংশ নারীর আর্থিক ভরণ পোষনের সুবন্দোবস্ত হয়ে থাকে! নারীর জীবনে এই বৈবাহিক সম্পর্কই আর্থিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়! ঠিক যে কারণে, রবীন্দ্রনাথ রসিকতা করে বলেছিলেন বিবাহ নারীর পেশা! কিন্তু অধিকাংশ পরকীয়ার ক্ষেত্রেই সাংসারিক এই নিশ্চয়তার পরিসরটি অনুপস্থিত থাকে বলেই সংসারের সুস্থিতি লঙ্ঘিত হয়! সুস্থ সমাজ জীবনের পক্ষে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়!

সমাজ সংসারের সুস্থিতির বলয়ে পরকীয়া নিয়ে আসে অস্থিরতার অনিশ্চয়তা! কিন্তু বৈবাহিক দাম্পত্যের সীমানার প্রাত্যহিকতায় কত সময়েই যে সম্পর্কের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয় তার সীমা পরিসীমা থাকে না! আসলে যে যে বিষয়গুলি বা শর্তগুলি ধরে রাখে বৈবাহিক দাম্পত্যের ভিত্তিকে, সেই শর্তগুলির কোনো কোনোটির সঠিক বাস্তবায়ন না হলেই ফাটল দেখা দেয় দাম্পত্যের পবিত্রতায়! কিন্তু একদিকে সাংসারিক দায় দায়িত্ব, সামাজিক সম্মান, সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা এবং নারীর ক্ষেত্রে জীবন ধারণের জন্য স্বামীর আর্থিক স্বাচ্ছল্যের উপর একান্ত নির্ভরতা, প্রভৃতি বিষয়গুলিই ফাটল ধরা দাম্পত্যকেও জোড়াতালি দিয়ে ধরে রাখে, বা রাখার চেষ্টা করে শেষ পর্য্যন্ত!

আমাদের ধনতান্ত্রিক ভোগবাদী দুনিয়ার প্রেক্ষিতে আমরা ক্রমেই পেতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি! তাই প্রাপ্তির কোটা পুরোপুরি পুরণ না হলেই মনের মধ্যে জমে ওঠা ক্ষোভের বিক্ষুব্ধ বাষ্প অসহিষ্ণু করে তোলে আমাদের! সেই অসহিষ্ণুতার অস্থিরতায় খেয়ালই থাকে না যে, আমার দেওয়ার কোটায় আর একজনের অপ্রাপ্তির ব্যাথা বেদনা রয়ে গেল কিনা! ফলে পারস্পরিক এই অসহিষ্ণুতার মল্লযুদ্ধে দাম্পত্যের ফাটল ক্রমেই প্রশস্ত হতে থাকে! তবু সমাজ সংসারের ঘেরাটোপে ভাঙ্গা সম্পর্ক নিয়েই নরনারী তাদের জীবন ধারণ করে চলে! মনের গহন গভীর অন্তরে তবু রয়ে যায় প্রেম! তবু এক হৃদয়ের প্রীতির আকঙ্খা চেতন অবচেতনের দ্বন্দ্ববিধুর সংবর্তে স্বপ্ন বোনে মনের অজান্ত!

আর সেই দমবন্ধ পরিবেশে হঠাৎ যদি খোলা হাওয়ার টাটকা ছোঁয়া নিয়ে এসে উপস্থিত হয় কোনো নতুন সম্পর্কের হাতছানি, মন হয়তো প্রথমেই পা বাড়ায় না, শরীর হয়তো বিবেক বুদ্ধির নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে পারে না নিজেকে; তবু কিছু ভালোলাগার টুকরো টুকরো ক্ষণিক মুহূর্ত্ত শরীর মনের অন্ধগলিতে বিদ্যুৎচমকের মতো শিহরণ তুলে যায়! শিহরিত সেই সব মুহূর্ত্তের ভালোলাগাগুলো বুনে বুনে গড়ে উঠতে পারে ভালোবাসার নতুন একটি সাঁকো! হয়তো তা মজবুত নয়, হয়তো অজনা আশঙ্কা, বিবেকবোধের পিছুটান, নতুন মানুষটি সম্বন্ধে আশা নিরাশার দ্বন্দ্বদোদুল দোলাচল, অনেকটাই নড়বড়ে করে রাখে ভালোবাসার সেই সাঁকোর ভিত্তি- তবু দাম্পত্যের ফাটলের ফাঁকে ঝুলতে থাকে সেই সাঁকো! একটু গভীর ভাবে তলিয়ে দেখলে দেখা যায়, সবকিছু বাদ দিলেও দিনের শেষে আমরা একটু আদরের প্রত্যাশী! আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো এই আদরটিই যেন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যায়!

আর দাম্পত্যের অভ্যাসে আদরের ঐশ্বর্য্যটুকুই যেন একটু একটু করে ক্ষয় হতে থাকে! প্রথমে কেউই টের পাই না! কিন্তু যখন টের পাই, অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, আদরের অনকটা ঐশ্বর্য্যই ক্ষয় হয়ে গিয়েছে কখন! খেয়াল হয়নি আমাদের! খেয়াল হয়, যখন দুজনের মধ্যে কোনো একজনের জীবনে আদরের নতুন ঐশ্বর্য্য নতুন ছবি আঁকতে থাকে সম্পর্কের নতুন বিন্যাসে! সমাজ সংসার যে বিন্যাসকে নাক কুঁচকে বলবে পরকীয়া!

পরকীয়ার প্রধান স্তম্ভই কিন্তু আদরের ঐ উষ্ণতা!


(ক্রমশঃ)

কিছু কথা - সর্বজিৎ সরকার

0 কমেন্টস্
অপেক্ষা-আশঙ্কার টানাপোড়েন
সর্বজিৎ সরকার


বারবার ঘন মেঘ করেও যেন বৃষ্টি নামছে না আজ। বাগানের নারকেল-সুপারী-আম গাছগুলো পিপাসার্ত পাখির মতো দু-ফোঁটা বৃষ্টির আশায় হা করে চেয়ে আছে আকাশের দিকে! মাঝে মাঝে ডালপালা গুলো দুলিয়ে জানান দিচ্ছে অস্হিরতাটুকু।

মা এদিকে সকাল থেকেই অস্হির হয়ে উঠেছে বাসি কাপড়গুলো ভিজিয়েছে বলে। কাজের মাসিকে কয়েকবার ফোনে ধমক দিয়ে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছিল। অবাক হওয়ার মতো কিছুই নেই! যুগের সাথে তাল মিলিয়ে হাতে রাখা যন্ত্রটি এখন সবার ঘরে ঘরেই! কাঁচুমাঁচু মুখ করে এসে কাপড়গুলো সব ধুইয়ে ছাদে মেলে দিয়েছে মাসি। কিন্তু মায়ের অস্হিরতা কমবার নয়। বৃষ্টি আসার তাড়ণায় খিটিমিটি লেগেই আছে বাড়িটাতে। একই বাড়িতে দুরকমের অনুভূতি,আশঙ্কা আর অপেক্ষা! ঘরজুড়ে চলছে আশঙ্কা আর ভ্য,এবং বাগানজুড়ে তখন দুফোঁটা বৃষ্টির অপেক্ষা গাছগুলোর! গোটা বড়িতে তখন অপেক্ষা আর আশঙ্কার টানাপোড়েন চলছে। ছাদজুড়ে পাহাড়ার দায়িত্বটা এসে পড়ল আমারই ঘাড়ে। অগত্যা...ফেসবুকটা খোলা রেখেই নজর রাখলাম ছাদের দিকে! ফেসবুকে দেখি সবাই বৃষ্টি নিয়ে নানান স্ট্যাটাস দিচ্ছে!

কেউ দিয়েছে,“আজ মেঘলা দিনে খিচুরি খেতে ইচ্ছে করছে!”

কেউ আবার লিখেছে,“আয় বৃষ্টি ঝেপে,ধান দেব মেপে!” ইত্যাদি...ইত্যাদি।

আমি আর কি লিখব বুঝে উঠতে পারলাম না। ছাদে বসে বৃষ্টির আশঙ্কায় জামাকাপড় পাহারা দিচ্ছি,এরকম স্ট্যাটাস তো আর দেওয়া যায় না! আত্মসম্মানেও লাগে। তাই ওই অকাজের ফেসবুকটা বন্ধ করে মায়ের দেওয়া কাজে মন দেওয়াটাই শ্রেয় মনে করলাম।

হঠাৎ দেখি দু-এক ফোটা বৃষ্টি পড়ে ছাদটায় বৃষ্টির দাগ পড়েছে। যেই না পড়া,অমনি মায়ের চিৎকার......
আমি একছুটে গিয়ে জামাকাপড় তুলে ঘরেই মেলে দিলাম! ওদিকে বাগানের বুকে তখন আনন্দের সীমাহীন উচ্ছাস! আজ বোধহয় অনেকদিন পর ওরা শান্তিতে ভিজতে পারবে অনেকক্ষণ! বাড়ির কুকুর ভুলিটাও জড়োসড়ো হয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাড়ির সামনের বারান্দায়! ঠিক তখনি ঝেঁপে নামল সেই আশঙ্কা আর অপেক্ষার সংমিশ্রণ!

বাগানজুড়ে বৃষ্টির ফোঁটার শব্দে যেন এক অদ্ভুদ ছন্দ তৈরী হল। দূরে কোনো বাড়িতে রবীন্দ্রসংগীত বাজছিল-

“আজি ঝরোঝরো মুখর বাদল দিনে-
জানি নে...জানি নে...
কিছুতে কেন যে মন লাগে না......”

একছুট্টে চলে গেলাম বাগানে। আমিও যে তার অপেক্ষাতেই ছিলাম চাতক পাখির মতো! বাগানের বন্ধুদের সাথে তখন ভিজে চলেছি অবিরাম! ওদিকে মা চিৎকার করে চলেছে...বৃষ্টিতে না ভেজার জন্য! মায়ের মন তো, আশঙ্কাতেই ভরা! অপেক্ষাটুকু শুধু আমার আর বাগানের বন্ধুদের। অপেক্ষাগুলো মিটে গেলেও আমায় নিয়ে আশঙ্কা বোধহয় মায়ের থেকেই যাবে!!

কিছু কথা - প্রিয়দীপ

0 কমেন্টস্
নিঃশব্দ জলবায়ু
প্রিয়দীপ



এক দলা শক্ত মাটি ! জলে ছুঁড়ে দেওয়া মিশ্রণে , বুদ বুদ করে ওঠা অন্তর্মুখী মাদকতা । যেন , সেই মধু নিশি’র খিলখিল করা পদ্ম‘নাভির সোহাগি স্রোত।

সঙ্গতে বৃস্তিত হয় পল্লবিত বৃত্ত । মিলিয়ে যায় গতিপথ, উপচে পরা ঋতু বদলের মধ্য আষাঢ়ে। নন্দিত বৃত্ত , আহ্লাদিত হয় নাব্যতায় , আগুন্তুকে ! নব্য বারিধারা। মন্থনে প্রতিফলিত পবিত্রতার দাম্ভিকতা । লজ্জায়, থিতু হয়ে আসে সঞ্চয়িত স্মৃতি , ম্রিয়মাণে জলবিম্ব’র নিঃশব্দ শিল্পকলা।

কলম পেলেই যেন সন্মোহিত হয়ে পড়ি । গতিবেগে , ঝন ঝন করে মুদ্রিত জীবনের শব্দ । পাঁজরে ডাই করি রক্তবর্ন বেনারসি’র অস্তিমিত বিনিসুতর ’ গল্পকথা ।

গল্প এখন উপন্যাসে। কাঠামো জুড়ে’ই শুধু পালা বদলের গল্প । গতিতে আহ্নিক , গতিতে বার্ষিক । ভরা বর্ষা’য় রক্তে যেন শীত । গ্রোগ্রাসে চিবিয়ে নিলেও হাল ছেড়ে দেওয়া রক্তের চাপ , বড় একাকী - কুয়াশায় সাঁতারে যাওয়া।

পাড়ে বসলে , থিতিয়ে যাওয়া জলে অবাক হয়ে দেখি। মৃদু ঢেউয়ে ভাসতে ভাসতে ক্রমশ ভারী হয়ে যাই বিকৃত মুখমণ্ডলে । এক সময় , দুলতে দুলতে হাওয়ায় উড়ে পরা শুকনো পাতার মতো হারিয়ে যাই অতলে ।

এখন দুপুর থেকে গোধূলি । আঁধার জড়িয়ে ক্রমশ চাঁদও কাছাকাছি , পারুল’ অপ্রান্তেও কি তাই ! তুমি আমি - আমি তুমি , একাকী জোছনায় পাশাপাশি ।

কবিতা - আকাশ দত্ত

2 কমেন্টস্


সুচরিতাষু
আকাশ দত্ত


তোমাকে দেখতে চেয়ে
আমি যে কতবার অন্ধ হয়েছি
সে খবর আমার ঈশ্বরও রাখেন নি।

ছিটকে দিয়েছি কালপুরুষ
আপণ কক্ষপথের
কাঁচের চুড়ির মত নিয়মকানুনে
শত শত রাস্তা কুড়িয়েছি বেমিশাল ;
বুক বরাবর বয়ে চলা
এক লক্ষ নদীও..

শতাব্দীর দুপুরভোজে
দধিচী সমাদৃত এখনও--
একথা বুঝতেই কয়েকটা আলোকবর্ষ !

তোমার প্রতিটি গায়ত্রীর কসম, দেবযানী,
সঙ্গোপনের দিনরাত্রি মেপে
দু'চারটে আরও বাঁচতে চেয়েছিলাম আমি.....।

কবিতা - রুকসানা রফিক

0 কমেন্টস্
শুধু তোরই হবো
রুকসানা রফিক


তোর লুকানো দুঃখ হবো একদিন,
তখন দেখি তোর মনের কোন্ কোনাতে রাখিস আমায় তুই?
তোর জমানো বিষাদ হবো একদিন,
তখন দেখি কোন্ কাগজে লিখিস আমার নামটি তুই?
তোর চোখেতে অশ্রু হবো একদিন,
তখন দেখি কোন্ আবেগে ঝরাস আমায় তুই?
তোর গোপন ডায়েরী হবো একদিন,
তখন দেখি কোন্ হরফে লিখিস আমার নামটি তুই?

তোর সুখের ঘরে পায়রা হবো একদিন,
তখন দেখি তোর মনের কোন্ খোপেতে পুষিস আমায় তুই?
তোর গলারই মালা হবো একদিন,
তখন দেখি তোর হৃদয়ের কতো কাছে পরিস আমায় তুই?
তোর চলারই পথটি হবো একদিন,
তখন দেখি কোন্ ঠিকানায় পা ফেলিস আমার বুকে তুই?
তোর গানেরই বাণী হবো একদিন,
তখন দেখি কোন্ খেয়ালে গেয়ে উঠিস আমায় তুই?

কবিতা - রাজর্ষি ঘোষ

0 কমেন্টস্
আমরা সুভাষ বলছি
রাজর্ষি ঘোষ


মড়মড় করে ওঠে গোপন পাতারা ও নির্বিষ সাম্যবাদ।
আমরা যে সবাই বিপ্লবী; যদিও পায়ের তলার আগাছা
উচ্ছেদে কিঞ্চিত উদ্বিগ্ন। চোরকাঁটা ভরা সেমি-সার্কুলার
মাইন, খানিকটা কানকাটা চাঁদের মত। ওখানেই বিষাক্ত
রগ ফুলিয়ে বুকেদের অভ্যুত্থান হবে। চরৈবতি, এবং
মাছভাজা তেল নিবিড় আঁতাতে গড়াগড়ি খায় গৃহ তরুমূলে।
শূণ্য দেয়ালা... তবুও তোমরা আমাকে সুভাষ বলবে।

বিষবৃক্ষ... ওসব সোমত্ত ভাবনা একপাটি চটি হয়ে গেছে;
ফিরে ফিরে আসে কানকোর দেশে। পেটের ঝিল্লি কেটে
দেখি সাকুল্যে আড়াই গ্রাম আর্সেনিক। আমি আবার নীলকন্ঠ
হলাম কবে? ট্যাঁরা-ব্যাঁকা ল্যাম্পের আলো, সবুজ অসূয়া,
পথ ছাড়ে ক্লান্ত জোনাকি। টুকটুকে পরী আসে রাতের
খোয়াবে। ভিন্ন এ চড়াই উতরাই তবে নয় এ বেয়নেট।
বেসুরো রেডিও... তবুও তোমরা আমাকে সুভাষই বলবে।

সেনসুয়ালিটির ফাঁসি হলে বিশুদ্ধ আসামী হেঁটে যাবে
মহাপ্রস্থানের পথে। ওখানে সূর্যোদয় হয়। হেমলক মাখা
সঘন সুবাস দাঁড় কেটে আসে কাঁকড়ার মত। এই যে
উড়ছিলি, কেমন ধপাৎ। টোকিওর সংবাদে মন্বন্তর, মড়ক;
এ বছর আমেরিকায় বৃষ্টি হবে না। ইত্যাদি যা জাহাজের
খবর বোর্নিওর জঙ্গল থেকে রিলে হয়ে এল। মহাকাব্যে
অতিপুরাণ... তবু বন্ধু তোমরাই আমাকে সুভাষ বলবে।

কবিতা - ঋত্বিক দাশ শর্মা

0 কমেন্টস্
মুক্তি নাই
ঋত্বিক দাশ শর্মা


পার হয়ে আসা সময়, বলা হয়ে থাকা অসময়...স্মৃতি জাগানিয়া রাত্রি
ফেলে আসা দুখ, মুছে যাওয়া সুখ...ঘুম পাড়ানিয়া যাত্রী
ঘুচে গিয়ে যত ম্লানতা ... পেলেম যখন বারতা
মরীচিকাসম মিলাল আমার দীনতা
সইলনা তা, রইল না তা
ভাগ্যে শুধুই ব্যর্থতা !
আমি নগণ্য ?
প্রশ্নচিহ্ন ...

শেষ থেকে শুরু, বুকে হাত গুরু, সব কিছু ভুলে এগোলেম জোরে ঠেলে
কর্মই ধর্ম, সততাই প্রাপ্তি, এক নীতিকথা আওরেছি মনে বলে
পেলাম অনেক আপাত স্বগত, শান্ত করেছি মনেরে
চিন্তাবিহীন, কখনো চাইনি উঠিতে উচ্চ মিনারে
দিয়ে গালাগালি, নিয়ে টানাটানি
অনেক শর্ত সাজাল বাহিনী
ভাললাগা টুকু বাদ
সঙ্গী অবসাদ ...

কবিতা - সুজন ভট্টাচার্য

0 কমেন্টস্
তোমাদের দেব
সুজন ভট্টাচার্য



সমস্ত অক্ষর আমি তোমাদের দেব
আমার শরীর-ছেড়া বেপরোয়া ঘাম
চোখের পিছনে যত কুয়াশা আলোয়
সবকিছু দিয়ে যাব তোমাদের হাতে ।
একান্ত নিজস্ব বলে যতটুকু জানা -
আতর-ছোঁয়ার মত
বড় বেশি জড়িয়ে থাকে ঘুমের সুবাসে -
সেগুলোও রেখে যাব
তোমাদের ডেকে নিয়ে উজানে ভাসানে যেতে ।

যে সব পলক একা
নিজেকে চিনিয়ে নেয় আয়নার মুখে
তাদের নিয়ম জানা
যেভাবে সবাই জানে রাস্তার কোলে ।
একক সময় কোনো টেনে নেয় কাছে
দুহাতে দেখাতে চায় বিপন্নের ছায়া ;
তবুও নিজের কথা জমায়েতে খোঁজে
আপাত অজানা যত মুখের ঠিকানা ,
যেভাবে বাতাস আসে ভালবেসে
পায়ের মোহানা বেয়ে
সেইভাবে অগণিত
নিজেকে মেলাতে চায় জীবনের কথার ভিড়ে ।

যা কিছু নিজের বলে জানা, সবটুকু তার
তোমাদের দিয়ে যাব মন্ত্রের মত
আজান পেরিয়ে আসা সকালের সুরে ।

কবিতা - সেলিম রেজা

0 কমেন্টস্
রোবটিক মানবী
সেলিম রেজা


কেউ এলো না বলেই
পাড়ি দিলাম একা
যুবতী সময় হাত বুলায়
নিঃসঙ্গতা ভেবে মেঠো ঘাসে
তৃষ্ণার্ত পাঁপড়ি খসে
খসে যায় আমার ভালোবাসা
শ্যামল ছায়া, ঘাসের পাহাড়-
ক্ষয়ে যায় চিবুকের তিল;
আসে ঘুম চোখে তবুও
পাতায় লেগে থাকে নির্ঘুমরাত
খন্ডিতআকাশ,বনভূমি-ঝাউসারি
নিঃসীম শূন্যতা সবখানে
মনচোরা পাখি দেয় উড়াল
গহীন বনে গহীন রাতে
নিকষ কালো অন্ধকারে
নিপূণ কারুকাজে করেছ হ্নদয় ব্যবচ্ছেদ-
সযত্নে আটকে দিলে সেফটিপিন;
আর আমি মাঝরাতে তুলে আনি বনফুল
তীব্র পিপাসায় গুটিয়ে থাকা মনপাগল
সোনালী চুলের বেণীতে গুঁজে দেয়
এক একটি শিউলি এক একটি স্বপ্ন;
গা ঘেঁষে কাছে আছো দাঁড়িয়ে
সিগারেটের ছাই ফেলার মতো
কষ্টগুলো ঝেড়ে ফেলি এয়্যাশট্রেতে
পাখির ডানার মতো কাঁপছে বাতাসে-
রোবটিক মানবী;
লোনাজলে ভেজা চোখ যেন
বন্যাপ্লাবিত অসহায় সম্বলহীন মানুষ;
তবুও বেঁচে থাকার জন্যে সুখের কাছে
হাঁটুমুড়ে বসে রোবটিক মানবী...

কবিতা - সৌমিত্র চক্রবর্তী

0 কমেন্টস্
তোমার জন্য নজরুল
সৌমিত্র চক্রবর্তী



আমাদের এই রুক্ষ রাঢ়ের লালচে মাটি
চৈত্রশেষের হিংস্র খাঁ খাঁ রোদ্দুর
আর অকালবর্ষণের ঝমঝম নাচ
সর্বদা গর্বিত তোমার জন্য নজরুল।

সোনালী ধানের সকাল সুবাস
অন্ধকার কয়লার স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ
যদি দেখ প্রত্যেক বিকেলের হলদেটে ছায়ায়
মিলিমিশে নিটোল খেটেখাওয়া মানুষের ফরিয়াদ।

এগারোই জৈষ্ঠ এলেই
নড়ে ওঠে পুড়ে যাওয়া পাথরের স্তুপ,
এগারোই জৈষ্ঠ এলেই
হাতুড়ির ঘায়ে ঘায়ে মেঘমল্লার,
এগারোই জৈষ্ঠ এলেই
কাস্তের ফলায় ধামসার বোল,
এগারোই জৈষ্ঠ এলেই
বাঁশের কালো মেয়েয় ত্রিপুরার লোকশিল্প,
এগারোই জৈষ্ঠ এলেই
সিঁথিতে চিরন্তন মেটে সিঁদুর রক্তবর্ণ,
এগারোই জৈষ্ঠ এলেই
কৃষ্ণচূড়া থেকে মুক্তমঞ্চ গুচ্ছ কলির আসা,
এগারোই জৈষ্ঠ এলেই
আল-রাজপথ-চুরুলিয়া লংমার্চ।

কিন্তু এইই কি সব ঠিকঠাক বলা?

হয়ত সারাবছর চোখ মেলে থাকি-
সারাজীবন চোখ মেলে আছি
এগারোই জৈষ্ঠের উন্মুখ প্রত্যাশায়!

কবিতা - জয় সেনগুপ্ত

1 কমেন্টস্
বিস্মৃত
জয় সেনগুপ্ত



ছুঁয়ে থাকা কিছু মুহুর্তকে আমি একটু একটু করে ভালবাসতে শুরু করি!
ভুলে থাকা স্মৃতির সরণীতে আজ শুধুই বিস্মরণ..
আমি না কি গান বেঁধে সাজিয়েছি পসরার ডালি-
ভাঙা নাও এ বাও মেলে না।।
আমি এখন অন্য আমির ভিড়ে অহরহ খুঁজেছি নিজেকে;
আমি নাকি লাশ চাপা হিমঘরে কুলপি-মালাই হতে বড় ভালবাসি।
আমারই অবচেতনায় আমারই মুখে থরে থরে কথারা সাজানো…।।
নিভু নিভু সন্ধ্যার গালিচা বিছিয়ে ঘুম-পরী এসেছিল আজ-
ভুলে থাকা বিবর্ণ আলোতে
উজ্জ্বল বিস্মৃতি উছলিত নদী হয়ে ওঠে!!
আমি একা ঢেউ গুণে চলি।।

কবিতা - তন্ময় ভট্টাচার্য

1 কমেন্টস্
ক্লান্ত আর্তনাদ
তন্ময় ভট্টাচার্য


ছিটকে ছিটকে পড়েছে রাতের জ্যামে
যতদূর চোখ, এ গলি সে গলি ঘুরে
সাইকেলওয়ালা বাড়ি পৌঁছুতে চায়,
যেখানে এখনো ভাঙার অপেক্ষায়
লাঠি ভর দিয়ে ঘুমায় দরদালান

নকশা ঘুচিয়ে ফাটল নিজেই শ্লোক,
আগাগোড়া থাম প্যাঁচার ছদ্মবেশ
বড়ো রাস্তার যানজট অমলিন
একটু ভিতরে এই শুরু এই শেষ,

পাশ কেটে যায়। ব্রেকটা ধরছে না
সাইকেলওয়ালা থামতে চেয়েও চোখে
ঠুলি পরে সোজা নাটমন্দিরে ঢোকে

বহুব্যবহৃত শিবলিঙ্গের গলায় জ্যান্ত সাপ

সেও জানতো না,শহর জ্যামের দাস।

কবিতা - হিমাংশু বাগ

0 কমেন্টস্
বিধবা পৃথিবী
হিমাংশু বাগ



তারপর।
আজ কত দিন............

ছাপানো নীলাভ শাড়িটা
মেলে দেওয়া হয়নি কোনও যৌবনবতী তারকার গায়ে।
যুঁই বা শিউলি কিম্বা মোহময়ী ফুল আজ খোঁপার সুগন্ধে,
স্বপ্নের সাজ রোমান্টিসিজম অথবা কালো ধুসরের জগত
প্রান্তিক শরৎের ধুসরতায়।

বিশ্বযুদ্ধ কিম্বা মরনাস্ত্র সবেতেই।
জানিনা কবেকার ইতিহাস দুয়ে দুয়ে চার করেছিল!
তখনও কি মেয়েদের উগ্র কামনা ছিল বা
স্তনের মোহময়ী আন্দোলন?!
বিপ্লব এসেছিল। তোমার শরীরী লবনাক্ত জোয়ারে
ভিজিয়েছিলে যৌবনের বেড়া ভাঙ্গার আস্বাদ।

কলসি কাঁখের মেয়েরা কি কোনদিন বাৎসায়ান পড়েছে?
কি দরকার আজ মরনাস্ত্রে;
জাগানো যাচ্ছে না
অজানা মৃতপ্রায় স্বপ্ন ভর করছে সাদা ধূসরতায়
সাদা কালো থেকে রঙিন ফানুসে পৃথিবী আজ মৃত পৌরুষাকারে।
বিধবা পৃথিবী আজ আরও বিধবা সাদা ধোঁয়ার ধূসরতায়।

কবিতা - অভিলাষা

0 কমেন্টস্
মন আমার
অভিলাষা


দিন রাত্তির কাজের ভীড়ে ব্যাস্ত আমার মন
আগাছার মত চিন্তা আমায় জড়ায় সর্বক্ষন!
সুখ দুঃখের দোলায় দোলে মনখারাপের মেঘ,
হেসে কেঁদে মন ভরিয়ে, বিন্দাস ভাবাবেগ।
অকারনে গায়,খুশীর গমকে মনকে মাতায়,
ঘুরে ফিরে চায়,রামধনুরঙে মনকে ভরায়।
মনকে যতই লাগাম পরাই,শেখাই আপন-পর,
বুঝেও বোঝেনা,নিজের ভাবে ব্যস্ত এ চরাচর।
স্বপ্ন লুকাই হিয়ার আড়ালে,মনেতে লুকাই আশা,
পূর্ণচ্ছেদেও ফুল হয়ে ফোটে আমার অভিলাষা ।।

কবিতা - ইন্দ্রনীল

0 কমেন্টস্
দুদণ্ড ভক্তি
ইন্দ্রনীল


দৈবিক পরাজয়

এই শোন, মেঘমন, বৃষ্টিতো অকারণ, কেন তুই আনমন !
কেন মন্দা, হয় বন্ধ্যা, অলকানন্দা প্রসারণ ।
শিব গেল জলে ভেসে,
ভক্তি ভস্মে নিঃশেষে।
দেব ভূমি আভরণ শ্মশানেতে , মৃত লাসে আবরণ।

প্রহসন


অমরনাথে যাত্রা শুরু, রক্ষাকবচ - ভোলে বাবা ।
গোয়েন্দারা বার্তা আনে, জঙ্গিহানা দিচ্ছে থাবা।
অঙ্কেতে লাখ পাঁচ ,
ব্যোম ভোলে মার প্যাঁচ।
খাদে পরে বাস, রাইফেলে লাশ, সন্ত্রাসে বাবা।

বিচার

বৈষ্ণদেবী রুষ্ট হলো, কোলের ছেলে কেড়ে নিলো।
জয় মাতা দী রব উঠলো, ছনাত করে বাজ পরলো।
মুখ পুড়লো ছোট্ট খোকার,
দেবী মায়ের কেমন বিচার !
ভক্তি তেমন, যেমন ছিল, আঁচল কেবল ফাঁকা হলো।

কবিতা - তন্ময় কর্ম্মকার

0 কমেন্টস্
যেমন টি তুমি ভাবছো
তন্ময় কর্ম্মকার


যেমন টি তুমি ভাবছো, ঠিক তেমন আছি,
রাশ টানছি দীর্ঘ শ্বাসের,
কেন্নো’র মতো স্মৃতিস্পর্শে কুণ্ডলী পাকানো,
অথবা এমন হতে পারে,
অর্থহীন জীবনের ছোটাছুটি,
শুকোনো নদীর বিড়ম্বনা!

গাছের পাতারা ঝরে, নূতন পাতার লক্ষ্যে,
যা বা যারা চলে গেলো তারা চলেই গেলো!
খোঁজ রাখার দরকার, একান্তই, সেই মাটির।

কুমড়ো বা বক ফুল, কবির শব্দে আসে না
পারিজাত ভালবেসেছি বরাবর।
যন্ত্রণার ভেতরে ও কিছু যন্ত্রণা থাকে
সে অনুভব’ই যন্ত্রণা লঘু করে তোলে