প্রেম পিরিতি পরকীয়া
শ্রীশুভ্র
পর্ব - ১
যৌবনের ধর্ম প্রেম! হৃদয়ের ধর্ম প্রীতি! এই দুয়ের প্রভাবেই নর নারী পরস্পরের মধ্যে আশ্রয় খোঁজে! পরস্পরের সাথে ঘর বাঁধে! পরস্পর হাতে হাত রেখে, পায়ে পা মিলিয়ে চলে! গড়ে ওঠে সংসার! সামাজিক পরিসরে তাকে দাম্পত্য বলে আমরা নিশ্চিন্ত হই! কিন্তু সেই সামাজিক পরিসরে দাম্পত্যের সীমানার বাইরে ঐ প্রেম প্রীতির টানেই নর নারী মিলিত হলেই সামাজিক পরিভাষায় আমরা তাকেই পরকীয়া বলে গালমন্দ করতে ভালোবাসি!
ভুলে যাই প্রেম প্রীতি শরীর মনের ব্যাপার! সামাজিক রীতি নীতি, ধর্মীয় বিধি নিষেধ, আইনের ধারা উপধারার উপর তা নির্ভর করে না! বৈবাহিক সম্পর্ককে সামাজিক পরিসরে আমরা পবিত্র বন্ধন বললেও, পরকীয়াকে ব্যাভীচার বলে ধরে নিই!
সামাজিক পরিসরে আমরা পরকীয়াকে যত নিন্দাই করি না কেন, শিল্প সাহিত্য চলচিত্রে পরকীয়ায় নান্দনিকতার খোঁজে আমরা অক্লান্ত! বিশ্বসাহিত্যের ভাণ্ডারে শ্রেষ্ঠতম সাহিত্যকীর্তিগুলির অধিকাংশই কোনো না কোনো ভাবে এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে!
নর নারীর শরীর মনের সংঘটনে দাম্পত্যের সীমানা ছাড়িয়ে এই যে বিধিবদ্ধ সম্পর্কের বাইরে সম্পর্ক স্থাপনের আর্তি, এর মধ্যে দিয়ে মানবমনের অসীমতার এক অনন্ত প্রকাশ ফুটে ওঠে! সামাজিক বিধিবদ্ধতায় সংসারের দায়বদ্ধতার বেড়াজাল এড়িয়ে মুক্ত অঙ্গনে খোলা হাওয়ার স্পর্শে প্রেমর অনন্ত সম্ভাবনার এক রূপই হয়তো পরকীয়া!
কিন্তু সমাজ সংসারের দাবী,দায়িত্ব, এবং খবরদারী পরকীয়ায় অভিশাপ হয়ে ওঠে!
সমাজবদ্ধ মানুষ সমাজ সংসারের সুবিধের জন্যেই বৈবাহিক দাম্পত্যকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে!
বিশেষ করে সন্তানের মঙ্গল এবং বেড়ে ওঠার বিষয়ে, বৈবাহিক দাম্পত্যের কোনো বিকল্প আজও দেখা যাচ্ছে না! আবার পুরুষতান্ত্রিক সমাজ বাস্তবতায় বৈবাহিক সূত্রেই অধিকাংশ নারীর আর্থিক ভরণ পোষনের সুবন্দোবস্ত হয়ে থাকে! নারীর জীবনে এই বৈবাহিক সম্পর্কই আর্থিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়! ঠিক যে কারণে, রবীন্দ্রনাথ রসিকতা করে বলেছিলেন বিবাহ নারীর পেশা! কিন্তু অধিকাংশ পরকীয়ার ক্ষেত্রেই সাংসারিক এই নিশ্চয়তার পরিসরটি অনুপস্থিত থাকে বলেই সংসারের সুস্থিতি লঙ্ঘিত হয়! সুস্থ সমাজ জীবনের পক্ষে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়!
সমাজ সংসারের সুস্থিতির বলয়ে পরকীয়া নিয়ে আসে অস্থিরতার অনিশ্চয়তা! কিন্তু বৈবাহিক দাম্পত্যের সীমানার প্রাত্যহিকতায় কত সময়েই যে সম্পর্কের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয় তার সীমা পরিসীমা থাকে না! আসলে যে যে বিষয়গুলি বা শর্তগুলি ধরে রাখে বৈবাহিক দাম্পত্যের ভিত্তিকে, সেই শর্তগুলির কোনো কোনোটির সঠিক বাস্তবায়ন না হলেই ফাটল দেখা দেয় দাম্পত্যের পবিত্রতায়! কিন্তু একদিকে সাংসারিক দায় দায়িত্ব, সামাজিক সম্মান, সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা এবং নারীর ক্ষেত্রে জীবন ধারণের জন্য স্বামীর আর্থিক স্বাচ্ছল্যের উপর একান্ত নির্ভরতা, প্রভৃতি বিষয়গুলিই ফাটল ধরা দাম্পত্যকেও জোড়াতালি দিয়ে ধরে রাখে, বা রাখার চেষ্টা করে শেষ পর্য্যন্ত!
আমাদের ধনতান্ত্রিক ভোগবাদী দুনিয়ার প্রেক্ষিতে আমরা ক্রমেই পেতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি! তাই প্রাপ্তির কোটা পুরোপুরি পুরণ না হলেই মনের মধ্যে জমে ওঠা ক্ষোভের বিক্ষুব্ধ বাষ্প অসহিষ্ণু করে তোলে আমাদের! সেই অসহিষ্ণুতার অস্থিরতায় খেয়ালই থাকে না যে, আমার দেওয়ার কোটায় আর একজনের অপ্রাপ্তির ব্যাথা বেদনা রয়ে গেল কিনা! ফলে পারস্পরিক এই অসহিষ্ণুতার মল্লযুদ্ধে দাম্পত্যের ফাটল ক্রমেই প্রশস্ত হতে থাকে! তবু সমাজ সংসারের ঘেরাটোপে ভাঙ্গা সম্পর্ক নিয়েই নরনারী তাদের জীবন ধারণ করে চলে! মনের গহন গভীর অন্তরে তবু রয়ে যায় প্রেম! তবু এক হৃদয়ের প্রীতির আকঙ্খা চেতন অবচেতনের দ্বন্দ্ববিধুর সংবর্তে স্বপ্ন বোনে মনের অজান্ত!
আর সেই দমবন্ধ পরিবেশে হঠাৎ যদি খোলা হাওয়ার টাটকা ছোঁয়া নিয়ে এসে উপস্থিত হয় কোনো নতুন সম্পর্কের হাতছানি, মন হয়তো প্রথমেই পা বাড়ায় না, শরীর হয়তো বিবেক বুদ্ধির নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে পারে না নিজেকে; তবু কিছু ভালোলাগার টুকরো টুকরো ক্ষণিক মুহূর্ত্ত শরীর মনের অন্ধগলিতে বিদ্যুৎচমকের মতো শিহরণ তুলে যায়! শিহরিত সেই সব মুহূর্ত্তের ভালোলাগাগুলো বুনে বুনে গড়ে উঠতে পারে ভালোবাসার নতুন একটি সাঁকো! হয়তো তা মজবুত নয়, হয়তো অজনা আশঙ্কা, বিবেকবোধের পিছুটান, নতুন মানুষটি সম্বন্ধে আশা নিরাশার দ্বন্দ্বদোদুল দোলাচল, অনেকটাই নড়বড়ে করে রাখে ভালোবাসার সেই সাঁকোর ভিত্তি- তবু দাম্পত্যের ফাটলের ফাঁকে ঝুলতে থাকে সেই সাঁকো! একটু গভীর ভাবে তলিয়ে দেখলে দেখা যায়, সবকিছু বাদ দিলেও দিনের শেষে আমরা একটু আদরের প্রত্যাশী! আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো এই আদরটিই যেন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যায়!
আর দাম্পত্যের অভ্যাসে আদরের ঐশ্বর্য্যটুকুই যেন একটু একটু করে ক্ষয় হতে থাকে! প্রথমে কেউই টের পাই না! কিন্তু যখন টের পাই, অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, আদরের অনকটা ঐশ্বর্য্যই ক্ষয় হয়ে গিয়েছে কখন! খেয়াল হয়নি আমাদের! খেয়াল হয়, যখন দুজনের মধ্যে কোনো একজনের জীবনে আদরের নতুন ঐশ্বর্য্য নতুন ছবি আঁকতে থাকে সম্পর্কের নতুন বিন্যাসে! সমাজ সংসার যে বিন্যাসকে নাক কুঁচকে বলবে পরকীয়া!
পরকীয়ার প্রধান স্তম্ভই কিন্তু আদরের ঐ উষ্ণতা!
পর্ব - ১
যৌবনের ধর্ম প্রেম! হৃদয়ের ধর্ম প্রীতি! এই দুয়ের প্রভাবেই নর নারী পরস্পরের মধ্যে আশ্রয় খোঁজে! পরস্পরের সাথে ঘর বাঁধে! পরস্পর হাতে হাত রেখে, পায়ে পা মিলিয়ে চলে! গড়ে ওঠে সংসার! সামাজিক পরিসরে তাকে দাম্পত্য বলে আমরা নিশ্চিন্ত হই! কিন্তু সেই সামাজিক পরিসরে দাম্পত্যের সীমানার বাইরে ঐ প্রেম প্রীতির টানেই নর নারী মিলিত হলেই সামাজিক পরিভাষায় আমরা তাকেই পরকীয়া বলে গালমন্দ করতে ভালোবাসি!
ভুলে যাই প্রেম প্রীতি শরীর মনের ব্যাপার! সামাজিক রীতি নীতি, ধর্মীয় বিধি নিষেধ, আইনের ধারা উপধারার উপর তা নির্ভর করে না! বৈবাহিক সম্পর্ককে সামাজিক পরিসরে আমরা পবিত্র বন্ধন বললেও, পরকীয়াকে ব্যাভীচার বলে ধরে নিই!
সামাজিক পরিসরে আমরা পরকীয়াকে যত নিন্দাই করি না কেন, শিল্প সাহিত্য চলচিত্রে পরকীয়ায় নান্দনিকতার খোঁজে আমরা অক্লান্ত! বিশ্বসাহিত্যের ভাণ্ডারে শ্রেষ্ঠতম সাহিত্যকীর্তিগুলির অধিকাংশই কোনো না কোনো ভাবে এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে!
নর নারীর শরীর মনের সংঘটনে দাম্পত্যের সীমানা ছাড়িয়ে এই যে বিধিবদ্ধ সম্পর্কের বাইরে সম্পর্ক স্থাপনের আর্তি, এর মধ্যে দিয়ে মানবমনের অসীমতার এক অনন্ত প্রকাশ ফুটে ওঠে! সামাজিক বিধিবদ্ধতায় সংসারের দায়বদ্ধতার বেড়াজাল এড়িয়ে মুক্ত অঙ্গনে খোলা হাওয়ার স্পর্শে প্রেমর অনন্ত সম্ভাবনার এক রূপই হয়তো পরকীয়া!
কিন্তু সমাজ সংসারের দাবী,দায়িত্ব, এবং খবরদারী পরকীয়ায় অভিশাপ হয়ে ওঠে!
সমাজবদ্ধ মানুষ সমাজ সংসারের সুবিধের জন্যেই বৈবাহিক দাম্পত্যকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে!
বিশেষ করে সন্তানের মঙ্গল এবং বেড়ে ওঠার বিষয়ে, বৈবাহিক দাম্পত্যের কোনো বিকল্প আজও দেখা যাচ্ছে না! আবার পুরুষতান্ত্রিক সমাজ বাস্তবতায় বৈবাহিক সূত্রেই অধিকাংশ নারীর আর্থিক ভরণ পোষনের সুবন্দোবস্ত হয়ে থাকে! নারীর জীবনে এই বৈবাহিক সম্পর্কই আর্থিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়! ঠিক যে কারণে, রবীন্দ্রনাথ রসিকতা করে বলেছিলেন বিবাহ নারীর পেশা! কিন্তু অধিকাংশ পরকীয়ার ক্ষেত্রেই সাংসারিক এই নিশ্চয়তার পরিসরটি অনুপস্থিত থাকে বলেই সংসারের সুস্থিতি লঙ্ঘিত হয়! সুস্থ সমাজ জীবনের পক্ষে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়!
সমাজ সংসারের সুস্থিতির বলয়ে পরকীয়া নিয়ে আসে অস্থিরতার অনিশ্চয়তা! কিন্তু বৈবাহিক দাম্পত্যের সীমানার প্রাত্যহিকতায় কত সময়েই যে সম্পর্কের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয় তার সীমা পরিসীমা থাকে না! আসলে যে যে বিষয়গুলি বা শর্তগুলি ধরে রাখে বৈবাহিক দাম্পত্যের ভিত্তিকে, সেই শর্তগুলির কোনো কোনোটির সঠিক বাস্তবায়ন না হলেই ফাটল দেখা দেয় দাম্পত্যের পবিত্রতায়! কিন্তু একদিকে সাংসারিক দায় দায়িত্ব, সামাজিক সম্মান, সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা এবং নারীর ক্ষেত্রে জীবন ধারণের জন্য স্বামীর আর্থিক স্বাচ্ছল্যের উপর একান্ত নির্ভরতা, প্রভৃতি বিষয়গুলিই ফাটল ধরা দাম্পত্যকেও জোড়াতালি দিয়ে ধরে রাখে, বা রাখার চেষ্টা করে শেষ পর্য্যন্ত!
আমাদের ধনতান্ত্রিক ভোগবাদী দুনিয়ার প্রেক্ষিতে আমরা ক্রমেই পেতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি! তাই প্রাপ্তির কোটা পুরোপুরি পুরণ না হলেই মনের মধ্যে জমে ওঠা ক্ষোভের বিক্ষুব্ধ বাষ্প অসহিষ্ণু করে তোলে আমাদের! সেই অসহিষ্ণুতার অস্থিরতায় খেয়ালই থাকে না যে, আমার দেওয়ার কোটায় আর একজনের অপ্রাপ্তির ব্যাথা বেদনা রয়ে গেল কিনা! ফলে পারস্পরিক এই অসহিষ্ণুতার মল্লযুদ্ধে দাম্পত্যের ফাটল ক্রমেই প্রশস্ত হতে থাকে! তবু সমাজ সংসারের ঘেরাটোপে ভাঙ্গা সম্পর্ক নিয়েই নরনারী তাদের জীবন ধারণ করে চলে! মনের গহন গভীর অন্তরে তবু রয়ে যায় প্রেম! তবু এক হৃদয়ের প্রীতির আকঙ্খা চেতন অবচেতনের দ্বন্দ্ববিধুর সংবর্তে স্বপ্ন বোনে মনের অজান্ত!
আর সেই দমবন্ধ পরিবেশে হঠাৎ যদি খোলা হাওয়ার টাটকা ছোঁয়া নিয়ে এসে উপস্থিত হয় কোনো নতুন সম্পর্কের হাতছানি, মন হয়তো প্রথমেই পা বাড়ায় না, শরীর হয়তো বিবেক বুদ্ধির নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে পারে না নিজেকে; তবু কিছু ভালোলাগার টুকরো টুকরো ক্ষণিক মুহূর্ত্ত শরীর মনের অন্ধগলিতে বিদ্যুৎচমকের মতো শিহরণ তুলে যায়! শিহরিত সেই সব মুহূর্ত্তের ভালোলাগাগুলো বুনে বুনে গড়ে উঠতে পারে ভালোবাসার নতুন একটি সাঁকো! হয়তো তা মজবুত নয়, হয়তো অজনা আশঙ্কা, বিবেকবোধের পিছুটান, নতুন মানুষটি সম্বন্ধে আশা নিরাশার দ্বন্দ্বদোদুল দোলাচল, অনেকটাই নড়বড়ে করে রাখে ভালোবাসার সেই সাঁকোর ভিত্তি- তবু দাম্পত্যের ফাটলের ফাঁকে ঝুলতে থাকে সেই সাঁকো! একটু গভীর ভাবে তলিয়ে দেখলে দেখা যায়, সবকিছু বাদ দিলেও দিনের শেষে আমরা একটু আদরের প্রত্যাশী! আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো এই আদরটিই যেন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যায়!
আর দাম্পত্যের অভ্যাসে আদরের ঐশ্বর্য্যটুকুই যেন একটু একটু করে ক্ষয় হতে থাকে! প্রথমে কেউই টের পাই না! কিন্তু যখন টের পাই, অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, আদরের অনকটা ঐশ্বর্য্যই ক্ষয় হয়ে গিয়েছে কখন! খেয়াল হয়নি আমাদের! খেয়াল হয়, যখন দুজনের মধ্যে কোনো একজনের জীবনে আদরের নতুন ঐশ্বর্য্য নতুন ছবি আঁকতে থাকে সম্পর্কের নতুন বিন্যাসে! সমাজ সংসার যে বিন্যাসকে নাক কুঁচকে বলবে পরকীয়া!
পরকীয়ার প্রধান স্তম্ভই কিন্তু আদরের ঐ উষ্ণতা!
(ক্রমশঃ)
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন