অদ্ভুদ মৃত্যুর পর
সর্বজিৎ সরকার
পাড়ার প্রতিবেশী অমলেশ চাটুজ্জ্যের মৃত্যুটা কিভাবে হল সেটা জানে না কেউ।কিন্তু মৃত্যুটা যে স্বাভাবিক নয়,তা বোঝা গেছিল মৃতের শরীরে কিছু অদ্ভুদ দাগ দেখার পর।সেদিন রাত বারোটা চল্লিশ নাগাদ সারা পাড়াজুড়ে একটা প্রবল ভয় মিশ্রিত চিৎকার ঘুরে ফিরে যায়।অমাবস্যার সেই রাত্রে যখন সবাই তার দেহ নিয়ে রওনা দিল শ্মশানের পথে,তখন এক ভয়াবহ ঝড়ের মুখোমুখি হল তারা।সেি বিশাল ঝড়ে শ্মশানের সব লন্ডভন্ড হয়ে যায়...দেহ ফেলে পালায় শ্মশানযাত্রীরা!আল্লারাখা শুধু সেই দেহ ফেলে যায়নি কোথাও!কিন্তু তারপর দিন থেকে আর কেউ আল্লারাখার খোঁজ পায়নি!দেহটার ও কোনোরকম হদিশ মেলেনি।
রোজ রাত্রে অমলেশ বাবুর বাড়িতে গেলাসের ঠোকাঠুকি শোনা যায়।ঠুমরীর সুর আসে ভেসে ওই বাড়িটা থেকে।বাড়িটা ফাঁকাই পড়ে আছে কিছুদিন...সন্ধ্যে হলে ওই বাড়ির সামনে কেউ পা বাড়ায় না!যেদিন আল্লারাখা নিরুদ্দেশ হ্ল,সেই সময়টা চলছিল রমজান মাস।এই পাড়াতেই বাড়ি আল্লারাখার।অমলেশ বাবুর সাথে ভালই সখ্যতা ছিল তার।মাঝে টাকা পয়সা নিয়ে একটু বচসা অবশ্য হয়েছিল তাদের!অমলেশ বাবুর ধারদেনা ছিল প্রচুর...কিন্তু তার মৃত্যুর কোনোরকম কিনারা করা গেল না,আল্লারাখার নিরুদ্দেশ হওয়ার ও!
আজ সেই বাড়ি পাড়ার অন্যতম ভূতবাড়ি নামেই পরিচিত।রাত্তিরে নাকি বাড়ির আশেপাশে আতরের গন্ধ ছড়ায়।ভোরের দিকে আজান শোনা যায়,আবার নানারকম নবাবী সুর ভাসে বাড়ির আনাচে কানাচে!কেউ বুঝে উঠতে পারে না এই অদ্ভুদ ধরনের ঘটনার পেছনের রহস্যটার কথা।কেন ঘটছে এসব হিন্দুবাড়িতে!ঠাওর করতে পারে না কেউ!
পাড়ার কিছু মানুষ ঠিক করে ওঝা এনে ভূত তাড়াবার।অমাবস্যার রাতে যখন যজ্ঞে ঝাঁড়ফুক শুরু হ্য়,তখন সে উন্মত্ততা যেন বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে!কোনো লাভ হয়নি এসব তন্ত্রসাধনায়!কিন্তু পাড়ার সবাইকেই আল্লারাখার নিরুদ্দেশ বড় ভাবিয়ে তোলে!এরকমভাবেই চলতে থাকে ভূতবাড়ির অন্দরমহলের নানা ঘটনা,যার টুকরো উচ্ছিষ্ট পাড়ার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে!
একদিন সবে সন্ধ্যে হয়েছে!হঠাৎ লোডশেডিং এ সারা পাড়া অন্ধকার হয়ে যায়।পূর্ণিমার আলো পড়ে ভূতবাড়ি বেশ আলোময় হয়ে উঠেছে।পাড়ার কিছু মানুষ দেখতে পেল আল্লারাখার মতো কেউ বাড়িটা থেকে বেরিয়ে এসে শ্মশানের রাস্তা বরাবর হাঁটা শুরু করেছে!পাড়াপড়শি অনেকবার ডাক দিলেও কোনো সাড়া মেলেনি।কেউ সামনে এগিয়ে তার সম্মুখে দাঁড়াবার সাহসটুকুও দেখায় নি।এইভাবে হাঁটতে হাঁটতে শ্মশানের কাছে গিয়ে সে যেন কোথাও মিলিয়ে গেল!সবাই বেশ ভয়,আতঙ্ক নিয়ে বাড়ি ফিরেছে;চারিদিকে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে!
কিছুদিন হল ভূতবাড়ির উগ্রতা বেশ ম্লান,প্রায় থেমেই গেছে বলা চলে।একদিন সকালে কিছু মানুষ সাহস নিয়ে সেই বাড়ির ভেতর গিয়ে ঢোকে।চারদিক খুঁজে কিছু না পেয়ে যখন সিঁড়িঘরের সামনে আসে,তখন হঠাৎ তাকিয়ে দেখে অমলেশ বাবুর দেহটা পড়ে আছে মাটিতে!অদ্ভুদভাবে কোনো পচন ধরেনি...সেদিনের মতোই নিথর!চমকে ওঠে সকলে...বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থকে কিছুক্ষণ!অবশেষে তারা ঠিক করে দেহটা কবর দিয়ে দেবে ওই বাড়িতেই।কথামতো সব ব্যবস্হা হয়...কাজটাও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়!
তারপর থেকে সব শান্ত...কিন্তু আল্লারাখার সেই সন্ধ্যেবেলা হঠাৎ করে উদয় হওয়া,আর তারপরেই শ্মশানের দিকে গিয়ে কর্পূরের মতো উবে যাওয়ার কারণ কেউ খুঁজে পায়নি!কেবল তার গলার লকেটটা অদ্ভুদভাবে মিলেছিল অমলেশ বাবুর বাড়ির উঠোনে!
...আজও রাত্তির হলেই গা ছমছম করে সেই বাড়ির আশেপাশে...সেই বাড়ি আজ এত শান্ত..নিস্তব্ধ..চুপচাপ বলেই!
1 কমেন্টস্:
Vai onek agei bolechi Odvut bananta vul ache. Ekbar bola sotweo tui vul tai rekhe dili dekhe kharap laglo. Lekhake valobasa de vai. . . Seo firiye debe
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন