২৩ মে, ২০১৪

সমর কুমার সরকার

অতিথি সম্পাদকের দপ্তর থেকে
সমর কুমার সরকার


সূর্য চন্দ্রের চরিত্রের স্খলন,ফল বাঙালীর নববর্ষ বরণ।

চৈত্রের অন্তিম লগ্নে সূর্য দেব অবশেষে চিত্রা নক্ষত্রের সুখ সংস্পর্শ ও মীন রাশির এলাকা অতিক্রম করিয়া রাত্রির অন্ধকারে মেষ রাশির এলাকায় প্রবেশ করিলেন।........ এই গল্প আপাততঃ এখানেই স্থগিত থাকুক,চলুন পাঠক গল্পের গূঢ় রহস্য অনুধাবনের প্রয়াসে আমরা একবার রাশিদের ডেরায় ঘুরিয়া আসি।

এই রাশিগুলি আসলে এক একটি মধুকুঞ্জ বিশেষ । চন্দ্র নামক এক লম্পট দেবতার আকাশ অঞ্চলে এইরূপ মোট ১২ টি ঠেক বিদ্যমান। এই ১২ টি ঠেকের রক্ষনাবেক্ষণের নিমিত্ত ছয়জন পুরুষ ঠেকরক্ষক ও ছয়জন নারী ঠেক রক্ষিকা বহাল হইয়াছে। চেহারা,স্বভাব ও প্রকৃতি অনুসারে ঠেক রক্ষক ও রক্ষিকাদের নাম ও পরিচয় এইরূপ:

১.মেষ - চেহারায় বিশাল বপু হওয়া সত্ত্বেও এই ঠেক রক্ষকের বুদ্ধি গাড়ল বা ভেড়ার সদৃশ, তাই তাহার ঠেক মেষ রাশি নামেই পরিচিত।

২.বৃষ- এই ঠেক রক্ষকের চেহারাও যেমন ষণ্ড তুল্য,তেমনি প্রকৃতি ও ষণ্ডের ন্যায়। সঙ্গত কারণেই এই ঠেক বৃষ রাশি নামে পরিচিত।

৩.কর্কট – দুর্বল কর্কট যেমন শক্তিশালী প্রতিপক্ষ দেখিবা মাত্র দুইটি দাঁড়া উত্তোলন করিয়া ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করে,তেমনি এই ঠেক রক্ষক ও এক হাতে ঢাল ও অপর হাতে তরবারি লইয়া সদা দণ্ডায়মান থাকেন। সঙ্কটকালে ঢাল দিয়া আক্রমণ করিবেন না কি তরবারি দিয়া আক্রমণ করিবেন এই চিন্তার মীমাংসা করিতে না পারিয়া দুই হাতই প্রবল বিক্রমে নাড়াইতে থাকেন। সুতরাং এই ঠেকের নাম যে কর্কট রাশি রাখাই সমিচীন,সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নাই।

৪.সিংহ- এই ঠেক রক্ষক স্ত্রীর অন্নে প্রতিপালিত হন এবং সমস্ত দিবস কেবল পড়িয়া পড়িয়া নিদ্রা দেন,অথচ সন্ধ্যায় ভীষণ রক্তবর্ণ চক্ষু মেলিয়া,চুল ,দাড়ি প্রভৃতি ধূলিকণার দ্বারা ফুলাইয়া ভীষণ বিক্রমে গোঁ গোঁ রবে বিকট চীৎকার করিয়া সকলের নিকট আপন বিক্রম প্রকাশ করেন। তাই এই ঠেকের নাম সিংহ রাশি।

৫.বৃশ্চিক- বৃশ্চিকের দুইটি দাঁড়া সম্বলিত বাহু থাকা সত্ত্বেও, প্রতিবন্ধী বিকলাঙ্গের ন্যায় সেই বাহু যুগল কেবল অঙ্গের শোভা মাত্র। তাই বৃশ্চিক সর্বদা লাঙুলের অগ্রভাগে কন্টক সদৃশ হুল ঝুলাইয়া সকল কে ভীতি প্রদর্শন করে। কোন কোন সময় আক্রমণ ও করে, কিন্তু কোন কারণে হুল ফুটাইতে ব্যর্থ হইলেই লাঙুল তুলিয়া পলায়ন করতঃ আপনার জীবন রক্ষা করে। এই ঠেক রক্ষক ও বাহু থাকা সত্ত্বেও সঙ্কট কালে মোকাবিলা না করিয়া লাঙুল উত্তোলন করিয়া পলায়নে সিদ্ধহস্ত,ইদৃশ কারণে এই ঠেক বৃশ্চিক রাশি নামে পরিচিত।

৬.ধনু – পশ্চিমবঙ্গের পুলিশে যেমন সারা জীবন স্কন্ধে বৃটিশ আমলে নির্মিত অকেজো বন্দুক ও কোমরে কতিপয় ছত্রাক সংপৃক্ত বুলেট বহন করিয়া বেড়ায়,অথচ প্রয়োজনে বন্দুক ছুঁড়িলে বুলেট বাহির হয় না,অথবা দিকভ্রষ্ট হয়, সেইরূপ এই ঠেক রক্ষকও স্কন্ধে এক অকেজো ধনুক আর তূণে কতগুলি মরিচা পড়া তীর সম্বল করিয়া ঘুরিয়া বেড়ান। তাই এই ঠেকের নাম ধনু রাশি।

৭.কন্যা-এই ঠেক রক্ষিকা বয়স্কা,অথচ সর্বদা প্রসাধনী দ্বারা রূপচর্চা করিয়া ও স্বল্পবাস পরিহিতা হইয়া বালিকা কন্যার ন্যায় ন্যাকামি করিয়া সকলের মন জয় করিবার চেষ্টায় প্রবৃত্ত থাকেন। তাই এই ঠেক কন্যা রাশি নামে পরিচিত।

৮.মিথুন- এই ঠেক রক্ষিকা ঠেক রক্ষা করিবেন কি,নিজেরই চরিত্রের ঠিক নাই। যে কোন পুরুষের আহ্বানে এই ঠেক রক্ষিকা তাহার সহিত মৈথুনে সন্মত হন। তাদৃশ কারণে এই ঠেক মিথুন রাশি নামেই পরিচিত।

৯.তুলা- এই ঠেক রক্ষিকার চেহারা যেমন তুলার ন্যায় ফুটফুটে,শরীর যেমন তুলার মত নরম তুলতুলে, ব্যবহারও তেমনই তুলার ন্যায় নরম। স্বাভাবিক কারণেই এই ঠেক তুলা রাশি নামে পরিচিত।

১০.মকর- এই ঠেক রক্ষিকার নাসা তীক্ষ্ন,অথচ নাসিকার নিম্নভাগে দুই পাটি এবড়ো খেবড়ো অবিন্যস্ত দন্তরাশির বিকট শোভায় মুখমণ্ডল ভীষণ দর্শনা কুম্ভীর জাতীয় মকরের ন্যায়। সঙ্গত কারণেই এই ঠেক মকর রাশি নামে পরিচিত।

১১.মীন- পাঠকেরা অবগত আছেন,অল্প জলে মীন অতি চঞ্চল,অথচ গভীর জলে মীন নিশ্চল অবস্থায় থাকে। কোন কোন রমণী ও খুচরা প্রেমে অতিশয় চঞ্চলতা প্রদর্শন করেন,অথচ গভীর প্রেমে দায়িত্ব পালনের মানসিকতা না থাকায় গভীর প্রেমে জড়াইতে চাহেন না। এই ঠেকের রক্ষিকা খুচরা প্রেমের উন্মাদনায় আসক্ত বিধায় এই ঠেকের নাম মীন রাশি।

১২.কুম্ভ- এই ঠেকের রক্ষিকা পৃথুলা এবং পয়োধর যুগল কুম্ভ সদৃশ। তাই কবি ও সাহিত্যিকেরা এই ঠেকের নামকরণ করিয়াছেন কুম্ভ রাশি।



১২ টি ঠেকের পরিচয় আপনারা প্রাপ্ত হইলেন,এখন প্রশ্ন, এই ১২ টি ঠেকের গূঢ় রহস্যই বা কি, আর এই ঠেকে থাকেনই বা কাহারা ? লম্পট চন্দ্রের বিশাখা, অনুরাধা, জ্যেষ্ঠা, মূলা, পূর্বাষাঢ়া, উত্তরাষাঢ়া, শ্রবণা, ধনিষ্ঠা, শতভিষা, পূর্বভাদ্রপদ, উত্তরভাদ্রপদ, রেবতী, অশ্বিনী, ভরণী, কৃত্তিকা, রোহিণী, মৃগশিরা, আর্দ্রা, পুনর্বসু, পুষ্যা, অশ্লেষা, মঘা, পুর্ব ফাল্গুনী, উত্তর ফাল্গুনী,হস্তা, ও চিত্রা নাম্নী ২৭ জন নক্ষত্ররূপী স্ত্রী বিদ্যমান। এত গুলি স্ত্রী কে তো আর এক গৃহে রাখা সম্ভব নয়। আবার একই বাড়ীতে যদি পরপর ২৭ টি শয়ন কক্ষ নির্মাণ করা হয়,এবং এক এক ঘরে এক এক স্ত্রী কে রাখা হয়,তবে পতিতা পল্লী ভ্রমে অন্য পুরুষের আগমনের সম্ভাবনা থাকে। তা ছাড়া একা পুরুষের পক্ষে ২৭ টি কক্ষের নজরদারি ও সম্ভব নয়। আবার ২৭ জন পত্নীর জন্য ভিন্ন ভিন্ন ২৭ টি স্থানে ২৭ টি বসত বাড়ী নির্মাণ ও সম্ভব নয় । তাই অনেক চিন্তা ভাবনার পরে চন্দ্র মোট ১২ টি বসত বাড়ী বা ঠেক নির্মাণ পুর্বক পূর্বোক্ত ১২ জন ঠেক রক্ষক বা ঠেক রক্ষিকা নিযুক্ত করিলেন। প্রতি ঠেকে ২ টি শয়ন কক্ষ ও ১ টি বিশ্রাম কক্ষ। কিন্তু ১২ টি ঠেক পাশাপাশি নয়। চন্দ্রের চাকুরীর শর্ত হইলো প্রতি ৩০ দিনে বা একমাসে পৃথিবীকে এক উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সম্পুর্ণ একবার পরিক্রমা করতঃ পৃথিবীর সর্বত্র রাত্রিবেলায় আলোর বিকিরণের সমতা রক্ষা করিতে হইবে। বিনিময়ে সূর্য চন্দ্রকে আপন আলোয় আলোকিত করিয়া উৎফুল্ল ও জীবন্ত রাখিবেন। এখন এই উপবৃত্তাকার কক্ষপথ মোট ৩৬০ ডিগ্রী। তাই চন্দ্র কক্ষপথকে সমান ১২ ভাগে ভাগ করতঃ প্রতি ৩০ ডিগ্রী অন্তর একটি করিয়া ঠেক নির্মাণ করিলেন এবং ১২ জন রাশির হস্তে দেখাশোনার দায়িত্ব ভার দিলেন। এখন ৩০ দিনের যাত্রাপথ কে চন্দ্র সমান ভাগে ভাগ করিলেন এবং এক একটি রাশি বা ঠেকে ২.৫ দিন বা আড়াই দিন থাকিবেন বলিয়া মনস্থ করিলেন। এখন ২৭ জন স্ত্রীর জন্য ২৭ দিন বরাদ্দের পরে বাকি ৩ দিন অর্থাৎ ৭২ ঘন্টা কে চন্দ্র ২৭ জন স্ত্রীর মধ্যে সম ভাগে বন্টন করিলেন। ফলে প্রতি স্ত্রী র ভাগ্যে ভাগের ২৪ ঘন্টা ছাড়াও অতিরিক্ত ২ ঘন্টা ৪০ মিনিট সময় যুক্ত হইলো যাহাতে যাত্রাপথে গতির হেরফের ঘটিলেও প্রতি স্ত্রী ই যেন চন্দ্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ একটা দিন অতিবাহিত করিতে পারেন। সেই হিসাবে প্রতি ঠেকে চন্দ্র দুই দিন দুই স্ত্রীর কক্ষে সম্পুর্ণ দিন ও রাত্রি অতিবাহিত করেন। পরে বিশ্রাম কক্ষে তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত করার পরে তাকে সঙ্গে নিয়েই পরের ঠেকের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সুযোগ পান। এর ফলে পর্যায় ক্রমে ২৭ জন নক্ষত্রই চাঁদকে সমান উপভোগের সুযোগ পান। চন্দ্র যে দিন যে ঠেকে থাকে পঞ্জিকায় সেই রাশির নাম উল্লেখ থাকে,এবং যে নক্ষত্রের সঙ্গে দিন কাটান সেই নক্ষত্রের উল্লেখ থাকে। পঞ্জিকায় তিথি হিসাবে যদি লেখা থাকে,মেষ রাশি,বিশাখা নক্ষত্র,তবে বুঝিতে হইবে যে চন্দ্র সেই দিন মেষ রাশির ঠেকে বিশাখা নক্ষত্রের সঙ্গে দাম্পত্য জীবন পালন করিতেছেন।

অধিক সম্পত্তি র মালিক হইলে যেমন সম্পত্তি রক্ষার প্রয়োজনে ক্ষমতাসীন প্রভুকে কিছু সম্পত্তি উৎকোচ হিসাবে প্রদান করিতে হয়,তেমনি একাধিক পত্নী বা উপপত্নী থাকিলে কোন কোন পুরুষ ও তন্মধ্য বাছাই করা কয়েক জন পত্নীকে ক্ষমতাসীন পুরুষের সেবায় নিযুক্ত করিয়া ফায়দা লোটার চেষ্টা করেন। তা ছাড়া ঐ সব পত্নী বা উপপত্নীরাও ভাগের মায়ের মত যে অল্প সময় পুরুষ সঙ্গ পান,তাতে মন পরিপূর্ণ তৃপ্ত হয় না। কাজেই পতি তাদের ক্ষমতাসীন পুরুষের সেবায় নিযুক্ত করিলে তাহারা বিগলিত চিত্তেই সেই দায়িত্ব পালন করেন। কথায় বলে, আপন পুরুষের সোহাগে তৃপ্তি যদি চার আনা বা ছয় আনা,পর পুরুষের সোহাগে তৃপ্তি ১৬ আনার জায়গায় ৩২ আনা। ঠিক এই দুর্বলতা হেতুই চন্দ্র ও সময়ান্তরে বাছাই করা ১২ জন সর্বশ্রেষ্ঠা রূপসী পত্নী কে আপন প্রতাপশালী প্রভু রবিদেব বা সূর্যের সেবায় নিযুক্ত করেন,আর রবিদেবও প্রসন্ন চিত্তেই এই উৎকোচ গ্রহণ করেন। এই ১২ জন বাছাই পত্নী হইলেন বিশাখা,জ্যেষ্ঠা,পূর্বাষাঢ়া,শ্রবণা,পূর্বভাদ্রপদ,অশ্বিনী, কৃত্তিকা,মৃগশিরা (অগ্রহায়ন),পুষ্যা,মঘা,উত্তর ফাল্গুনী, ও চিত্রা। পাঠকেরা প্র্শ্ন করিবেন,চন্দ্রের না হয় কলঙ্ক আছে,কিন্তু সূর্যের তো কলঙ্ক নাই ,তবে এইরূপ অভিরুচি কেন ? সূর্যের কি আপন পত্নী নাই ?

পাঠকগণ,একবার ভাবিয়া দেখুন,এ জগতে আপাতদৃষ্টিতে যত নিষ্কলঙ্ক ক্ষমতাবান,বিত্তশালী পুরুষ বা নারী দেখেন,যদি অন্তরালে দেখিবার সুযোগ ঘটিত,তবে দেখিতেন, রাষ্ট্রনায়ক, রাজনৈতিক নেতা, সেনাপতি, অভিনেতা, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, মায় লেখক পর্যন্ত যাহাদিগকে আপনারা অতি সজ্জন কল্পনা করেন, বাস্তবিক পক্ষে তাদের শতকরা ৯০ শতাংশের চরিত্রই এক বা একাধিক দোষে দুষ্ট। আর পত্নী তো অধিক সংখ্যক পুরুষের গৃহেই বিদ্যমান,তৎ সত্ত্বেও নারী নিগ্রহ ও পতিতাবৃত্তির এত রমরমা কেন ? বরঞ্চ সফল পুরুষেরই নারীর প্রতি আসক্তি সর্বাধিক। সূর্যের পত্নীর নাম সংজ্ঞা। বিবাহ পরবর্তীকালে সংজ্ঞা সূর্যের তেজ সহ্য করতে না পেরে নিজের শরীর থেকে ছায়া নাম্নী এক নারী সৃষ্টি করে তাকে সূর্যের কাছে গচ্ছিত রেখে পিত্রালয়ে পলায়ন করেন। ছায়া যতই সূর্য কে শীতল রাখায় যত্নবান হন না কেন,স্ত্রীর পিত্রালয়ে গমনের দুঃখ ভুলতে না পেরে সূর্য আনন্দিত চিত্তেই চন্দ্রের উৎকোচ গ্রহণ করে ১২ মাসে ১২ টি রাশির ঠেকে উপস্থিত হয়ে ১২ জন সুন্দরী নক্ষত্রকে ভোগ করেন। এ জন্য সূর্যের স্থান পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় না। চন্দ্র যেমন পৃথিবীকে পরিক্রম করেন,তেমনি পৃথিবীও আবার একই রকম উপবৃ্তাকার পথে সূর্যকে পরিক্রম করে। ফলে মানুষ যেমন ট্রেনে ঘুমাতে ঘুমাতে কলকাতা দেখে দিল্লী বা বোম্বাই এ যান,ঠিক সে ভাবেই বৎসরের এক এক মাসে চন্দ্রের এক একটি ঠেক সূর্যের নিকটবর্তী হয়। আর সূর্য সন্ধ্যার অন্ধকার নামলেই পুরানো এলাকা বা ঠেক ছেড়ে ত্রস্তপদে অন্য এলাকার ঠেকে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট কক্ষে নির্দিষ্ট নক্ষত্রের সঙ্গে মধু যামিনী পালন করেন।

সূর্য যখন যে নক্ষত্রের সাথে মিলিত হন, তার নামেই মাসের নামকরণ হয়। অর্থাৎ বর্ষের প্রথম মাসের প্রথম দিনে মেষ রাশির ঠেকে সূর্য বিশাখা নক্ষত্রের সাথে মিলিত হন বলে প্রথম মাসের নাম হয় বৈশাখ। বৈশাখের শেষ দিনে সূর্য মেষ রাশির ঠেক ও বিশাখার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বৃষ রাশির ঠেকে জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের সঙ্গে মিলিত হন,তাই পরের মাসের নম হয় জৈষ্ঠ্য। এই ভাবে একাদি ক্রমে ক্রমানুসারে সূর্য মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ,ও মীন প্রভৃতি ১২ টি রাশিতে পর্যায় ক্রমে বিশাখা, জ্যেষ্ঠা, পূর্বাষাঢ়া, শ্রবণা, পূর্বভাদ্রপদ, অশ্বিনী, কৃত্তিকা, মৃগশিরা (অগ্রহায়ন), পুষ্যা, মঘা, উত্তর ফাল্গুনী, ও চিত্রা প্রভৃতি নক্ষত্রের সঙ্গে মিলিত হন বলেই বাংলা মাসগুলোর নাম হয় বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্ত্তিক, অগ্রহায়ন, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র। এখন স্থগিত গল্প পুনরায় শুরু করা যাক। চৈত্রের অন্তিম লগ্নে সূর্য দেব অবশেষে চিত্রা নক্ষত্রের সুখ সংস্পর্শ ও মীন রাশির এলাকা অতিক্রম করিয়া রাত্রির অন্ধকারে মেষ রাশির এলাকায় প্রবেশ করিলেন। তথায় মেষ রাশির ঠেকে তার সাক্ষাত ঘটিলো দীর্ঘ প্রতীক্ষারতা বিশাখা নক্ষত্রের সঙ্গে। সূর্য দেব অতি সম্প্রতি চিত্রা নক্ষত্রকে পরিত্যাগ করিয়া আসিয়াছেন,তাই প্রিয়ার বিরহ বেদনায় তিনি কিছুটা ম্লান ও নিস্প্রভ ছিলেন। কিন্তু প্রাণ চঞ্চলা বিশাখা কে দেখামাত্রই সূর্য দেব তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হইয়া উৎফুল্ল ও প্রসন্ন হইলেন। [ জগতের সকল সফল পুরুষের ধর্মই তো তাই। তাহাদের সকল সফলতার মূলেই একাধিক নারী। তাহারা এক নারীর বিরহে কাতর হইতে না হইতেই অন্য নারীর আবির্ভাব ঘটে। পাঠক গণ,আমার কথাই একবার ভাবুন,জীবনে সমস্ত রকম সম্ভাবনা সত্ত্বেও যেহেতু আমার একাধিক নারীর সংস্রব ঘটে নাই,অর্থাৎ সেই রূপ সুযোগ ই কখন ও আইসে নাই,তাই আমার জীবন কেমন অবরুদ্ধই রহিয়া গেলো। যদি সুযোগ পাইতাম,তবে মনের আবেগে এমন কাব্য লিখিতাম,যাহা বাঙালীর গর্বের কারণ হইতো। তখন এই নববর্ষের দিনে হয়তো ধুতি,পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায়,হাতে পুষ্পস্তবক লইয়া বইপাড়ার এক প্রকাশনী সংস্থার প্রতিষ্ঠান হইতে অন্য সংস্থার প্রতিষ্ঠানে ঘুরিয়া বেড়াইতাম। কিন্তু যাহা হইবার নয়,তাহা লইয়া দুঃখ অনাবশ্যক।] সুর্যদেব যথাশীঘ্র বিশাখার সহিত মিলিত হইলেন। চৈত্রের শেষ রজনী অন্তে সমস্ত রাত্রি বিশাখার আলিঙ্গন তৃপ্ত সূর্যদেব বৈশাখের প্রথম দিনে প্রত্যূষে পূর্ব গগনে নব উদ্যমে ও নবীন তেজে মেষ রাশির কক্ষ ত্যাগ করিয়া বাঙালী ভক্ত দিগকে দেখা দিলেন। চারিদিক আনন্দে মুখরিত হইলো,শুভারম্ভ হইলো এক নববর্ষের।

বাঙলা নববর্ষ বাঙালীর ঘরে ঘরে,হৃদয়ে হৃদয়ে ভালবাসার উষ্ণতা প্রদান করুক। নতুন ভাবে শুরু হোক নানা আশা আকাঙ্খা আর প্রত্যাশা নিয়ে দিন চলা। সূর্য দেবের চরিত্রের স্খলনই হোক,আর যাই হোক,সূর্যের তুলনা সূর্য নিজেই। বাঙলায় প্রবাদ আছে - যদি ও আমার গুরু শুঁড়ি বাড়ি যায়,তবু ও আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়। অর্থাৎ আমরা মহতের গুনটুকুই কেবল গ্রহণ করিবো। সূর্য আমাদের প্রাণ স্বরূপ,সমগ্র বিশ্বের রক্ষাকর্তা। তার কারণেই উদ্ভিদ কুল সালোক সংশ্লেষের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে জীব কুলের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রানবায়ুর যোগান দেয়। সূর্যের কারণেই মেঘ, বৃষ্টি র সৃষ্টি হয়, আমরা ১২ মাসে ৬ টি ঋতুর ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ অনুভব করি। তাই বাঙালীদের কাছে আবেদন...নববর্ষ কে শুধু এক আনন্দের দিন হিসাবে গন্য না করিয়া জীবন কে নতুন রূপে খুঁজে পাওয়ার দিন হিসাবে যাত্রা শুরু করুন। সূর্যের আলোকে পৃথিবীর সকল বস্তুর সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের অন্তরও নিরন্তর আলোকিত হোক।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন