২৩ মে, ২০১৪

অনুপ দত্ত

বৈশাখী
অনুপ দত্ত


বৈশাখ মাসের প্রথম দিন৷ বছর শুরু সমস্ত শুদ্ধ মঙ্গল মনকামনা নিয়ে বাঙ্গালী জীবন৷বঙ্গাব্দ শুরু নিয়ে ইতিহাস বলে সম্রাট অশোক বাংলা দিনপঞ্জী(ক্যালেনডার)শুরু করেন৷মোগল শাসনাধীন ভারতবর্ষে মুলত হিজরি সন আর চান্দ্র (lunar) ক্যালেনডার প্রয়োগ হতো৷মৌসুমী বায়ু প্রধান ভারতে শষ্যরোপন,চাষাবাদ,ফসল কাটার সময় খুবই গুরুত্বপুর্ন আর সেটা ছিল কর বা খাজনা আদায়ের সময়৷ইসলামি দিনপঞ্জী(ক্যালেনডার) মেনে ঠিকমতো খাজনা আদায় সম্ভবপর হচ্ছিল না৷সম্রাট আকবর তখন ইরান দেশের ‘তারিখ ই জালালি’ বলে যে সৌর সময় ছিল সেটা আর চান্দ্র সংমিশ্রনে ‘তারিখ ই ইলাহি’ প্রচলন করেন৷ পরে সেটা বঙ্গাব্দ রুপে চালু হয়৷

আমাদের ব্যস্ত জীবনের খাতিরে অত শত তথ্য পড়লে মাথা ঘেটে ঘ হয়ে যায়৷সেই ছোটবেলা থেকেই হালখাতার মাস বৈশাখ থেকে শুরু করে জেনে গেছি ইংরেজী বর্ষপঞ্জির মতোই বাংলাতেও বারো মাস৷কিন্তু বাংলাতে মাসের নামগুলো নক্ষত্রের নামের আদলে এসেছে৷এই যেমন

বিশাখা নক্ষত্র থেকে বৈশাখ
জ্যেষ্ঠা নক্ষত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ
আষাঢ়া নক্ষত্র থেকে আষাঢ়
শ্রবনা নক্ষত্র থেকে শ্রাবন
ভাদ্রপাদ নক্ষত্র থেকে ভাদ্র
অশ্বিনী নক্ষত্র থেকে আশ্বিন
কৃত্তিকা নক্ষত্র থেকে কার্ত্তিক
মৃগশিরা নক্ষত্র থেকে অগ্রহায়ণ
পুষ্যা নক্ষত্র থেকে পৌষ
মঘা নক্ষত্র থেকে মাঘ
ফাল্গুনী নক্ষত্র থেকে ফাল্গুন
চিত্রা নক্ষত্র থেকে চৈত্র

বৈশাখ মাসটা এপার বাংলার বাঙ্গালী জীবনে আরেকটা মহা আকর্ষন আছে৷সেটা হলো রবীন্দ্র জন্ম মাস৷কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গজীবনে প্রায় সবখানি জুড়ে রয়েছেন৷কোথায় একবার অনু্চ্চ স্বরে গুরুদেব গেয়েছিলেন…” মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে মানবের মাঝখানে বাঁচিবারে চাই..”৷

প্রতি উৎসবের একটা নিজের নিজের স্টাইল আছে৷সচারচর দিনকালের স্থান অনুযায়ী বদলে যায়৷অনেক দূর এখন নিমেষ কাছে হয়ে এসেছে৷বোতাম টিপলেই সব হাজির একেবারে৷

নতুন বছরের প্রথম দিনটি মিউজিক সিস্টেম জুড়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত কোথাও বাউল…মন উদাস করা বাউল৷আর বাড়ীতে রান্নাবান্না তো আছেই৷টিপিক্যাল বাঙ্গালী খাওয়া..শুকতো..চাপড় ঘন্ট..লাউ কুচো চিংড়ি..নারকোল দিয়ে সোনা মুগডাল…হয়তো বা কাতলা মাছের মাথা দিয়ে…দই মাছ..মিষ্টি দই..কাঁচা আমের চাটনী৷

এখন উৎসবের ধরন ধারন পাল্টে গেছে৷তবু নববর্ষে আজ বাঙ্গালী যতই আধুনিক বলে দাবী করক ঐতিহ্য সমানে রেখে চলেছে৷

কাঠফাটা রোদ্দুর আর চিটপিট গরমে মানুষ কাবু৷পহেলা বৈশাখ মানুষকে ক্লান্ত করে না৷নতুন বছর …হালখাতার মাস…তারপরে স্টক ক্লিয়ারেন্সের এই সময়টা দোকানীদের একট হুজুক পড়ে যায়৷প্রচন্ড গরমেও প্রতিবছর ঐ এক সময়

পহেলা বৈশাখ এসে দাঁড়াবে…আরো একবার নতুন বছরের শুভ্র আলোর দিকে চেয়ে আটপৌরে বাঙ্গালী তার সারাবছর চাপা পড়ে থাকা ঐতিহ্য আর পরম্পরাকে ঝালিয়ে নিয়ে আবর বলি….’শুভ নববর্ষ ১৪২১’

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন