২৯ জানু, ২০১৪

রিয়া

ভাষাসন্ধান (দ্বিতীয় পর্ব)
রিয়া




আমরা জানি মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষার প্রথম স্তরের কালসীমা ধরা হয় খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দী পর্যন্ত। এই প্রথম স্তরের মধ্যে ভারতীয় আর্য ভাষা হল অশোকের শিলালিপির প্রাকৃত। তাছাড়া এই সময়ে অন্যান্য ভাষাগুলি হল প্রত্নলিপির ভাষা, হীনযান পন্থী বৌদ্ধদের ব্যবহৃত মিশ্র সংস্কৃত বা বৌদ্ধ সংস্কৃত বা পালি ভাষা।শিলালিপির প্রাকৃত ছিল জনসাধারনের মুখের জীবন্ত ভাষা। প্রথম স্তরের প্রাকৃত ভাষার আঞ্চলিক রূপ বা উপাদানগুলি হলঃ-

১/ উত্তর পশ্চিমা ২/ দক্ষিন পশ্চিমা ৩/ প্রাচ্য মধ্যমা ৪/ প্রাচ্য।

১/ উত্তর পশ্চিমা= এই প্রাকৃতের নিদর্শন পাওয়া যায় পশ্চিম পাকিস্থানে প্রাপ্ত অশোকের শাহ্ বাজ্ গঢ়ী ও মান্ সেহ্ রা অনুশাসনে।

যেমনঃ- " অয়ং ধ্রমদিপি দেবন প্রিঅস রঞো লিখপিতু হিদ নো কিচি জিবে অরভিতু প্রযুহোতবে নো পি চ সমাজ কটব। বহুক হি দোষং সমজস দেবন প্রিয় প্রিঅদ্রশি রয় দখতি।" _____ শাহ্ বাজ্ গঢ়ী শিলালিপি-১।

সংস্কৃত রুপান্তর :- ইয়ং ধর্মলিপিঃ দেবানাং প্রিয়েণ রাজ্ঞো লেখিতা। ইহ ন কশ্চিৎ জীবঃ আলভ্য প্রহোতব্যঃ। ন অপি চ সমাজঃ কর্তব্য। বহুকান্ হি দোষান্ সমাজস্য দেবোপ্রিয়ঃ প্রিয়দর্শী রাজা পশ্যতি।

বাংলা রুপান্তর :- এই ধর্মলিপি দেবতাদের প্রিয় প্রিয়দর্শী রাজা কতৃক খোদাই করা হয়েছে। এখানে কোন প্রাণীকে বলি দেওয়া উচিৎ নয়, কিংবা কোন উৎসব উপলক্ষে ভিড় করাও উচিৎ নয়। কারন দেবতাদের প্রিয় প্রিয়দর্শী রাজা এই রকমের সামাজিক উৎসবে অনেক দোষ দেখতে পান।


২/ দক্ষিন পশ্চিমা= এই প্রাকৃতের পরিবর্তন হয়েছিলো সবচেয়ে কম। তার ফলে এই প্রাকৃতটি সবচেয়ে প্রাচীনতাধর্মী, প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা বৈদিকের উত্তরাধিকার এতে সবচেয়ে বেশী। গুজরাতের জুনাগড়ে প্রাপ্ত গীর্ণার অনুশাসনে এই প্রাকৃতের নিদর্শন পাওয়া যায়।

যেমন :- " ইয়ং ধংমলিপী দেবানং প্রিয়েন প্রিয়দসিনা রাঞা লেখাপিতা। ইধ ন কিংচি জীবং আরাভিৎপা প্রজূহিতব্যং। ন চ সমাজো কতব্যো। বহুক হি দোসং সমাজম্ হি পসতি দেবানাং প্রিয়ো প্রিয়দসি রাজা।।" _____ গীর্ণার শিলালিপি-১।

( সংস্কৃত ও বাংলা অনুবাদ ১/ এর অনুরুপ)



৩/ মধ্য প্রাচ্যা= এই প্রাকৃতের নিদর্শন পাওয়া গেছে মুসৌরি থেকে ষোল মাইল দূরে কালসি গ্রামে প্রাপ্ত অশোকের একটি অনুশাসনে এবং দিল্লিতে প্রাপ্ত অন্য তোপরা অনুশাসনে।

যেমন :- " ইয়ং ধংমলিপি দেবানাং পিয়েনা পিয়দসিনা লেখিতা হিদা নো কিছি জিবে আলভীতু পজোহিতবিয়ে নো পি চা সমাজে কটবিয়ে। বহুকা হি দোসা সমাজসা দেবানাং পিয়ে পিয়দসি লাজা দখতি"। _____কালসী শিলালিপি-১। (সংস্কৃত ও বাংলা অনুবাদ ১/ এর অনুরুপ)



৪/ প্রাচ্যা= এই প্রাকৃতের নিদর্শন রয়েছে উড়িষ্যার ভুবনেশ্বরের কছে ধৌলি গ্রামে প্রাপ্ত অনুশাসনে এবং গঞ্জাম থেকে আঠেরো মাইল দূরে জৌগড়ে প্রাপ্ত অনুশাসনে। প্রাচ্যা-মধ্যা ও প্রাচ্যার ভৌগলিক নৈকট্যের জন্য এই দুটো প্রাকৃতের মধ্যে সামঞ্জস্য খুব বেশী।

যেমন :- " ইয়ং ধংম লিপী খেপিংগলির পবতসি দেবানাং পিয়েন পিয়দসিনা লাজিনা লিখাপিতা। হিদ নো কিছি জীবং আলভিতু পজোহিতবিয়ে নো পি চ সমাজে কটবিয়ে। বহুকং হি দোসং সমাজসি দখতি দেবানাং পিয়ে পিয়দসী লাজা"। ____ জৌগড় শিলালিপী-১।

(সংস্কৃত ও বাংলা অনুবাদ ১/ এর অনুরুপ)



কিছু মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষার সম্বন্ধে আলোচনা করা যাক।



পালি ভাষাঃ- পালি বলতে এখন সাধারণত প্রথম স্তরের একটি মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষাকে বুঝায়।কিন্তু এই ভাষা কোথা থেকে সৃষ্টি হল আর কেমন করেই বা এটি বর্তমান অর্থের বাহক হয়ে গেলো এটা নিশ্চিত করা কঠিন। কেউ কেউ বলেন পাল ধাতু অর্থাৎ পালন করা থেকে পালি শব্দের উৎপত্তি। ভগবান বুদ্ধের বাণী এই ভাষা ধারন ও পালন করে চলেছে বলে একে পালি বলা হয়। আবার কেউ কেউ বলেন পল্লী শব্দ থেকে পালি শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থগত সঙ্গতিও আছে বলে মনে করা হয়, কারন ভারতে ওই সময় বৃহত্তর জনজীবনই ছিল মুলত পল্লীবাসী।আর এদের মধ্যেই বুদ্ধের বাণী প্রচারের জন্য পালি ভাষার মাধ্যমটি গৃহীত হয়েছিলো। 'পালি' ভাষার নামটির উৎপত্তি নিয়ে নানা মুনির নানা মত আছে। কেউ বলেন যে উড়িষ্যার ভুবনেশ্বরের কাছে উদয় গিরি পাহাড়ের হাতিগুম্ফা নামক গুহার ভিতরে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর রাজা খারবেলের যে অনুশাসন পাওয়া গেছে সেই ভাষার সাথে পালি ভাষার বিশেষ মিল পাওয়া যায়। এর ওপর ভিত্তি করে জার্মান পণ্ডিত ওল্ডেনবার্গ ও মূল্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে উড়িষ্যার আঞ্চলিক ভাষার ওপর ভিত্তি করে পালি ভাষার সৃষ্টি, অর্থাৎ উড়িষ্যাই হল পালি ভাষার আদি জন্মস্থান। অনেকে আবার পালি ভাষাকে মাগধীরই একটি রূপ মনে করেন। পরবরতী কালে পালি ভাষার প্রচলন শুধুমাত্র দক্ষিন ভারতের হীনযান বৌদ্ধদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়েছিল। তবু এই ভাষার জন্ম কিন্তু হয়েছিলো উত্তর ভারতেই এটা স্পষ্ট। পালি ভাষার কাল সীমা হল খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত, তবুও এই ভাষার অঙ্কুরোদগম থেকে পরিণতি পর্যন্ত ধরলে ব্যাপক অর্থে পালি ভাষার বিস্তার কাল হল খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত।

পালি ভাষার নিদর্শন :- "ন পরেসং বিলোমানি ন পরেসং কতাকতং। অত্তনো ব অবেকখেয্য কতানি অকতানি চ।।"

অর্থাৎ :- পরের দোষ দেখবে না, পরের কর্তব্য- অকর্তব্য বিচার করবে না। নিজেরই কর্তব্য- অকর্তব্য বা নিজের কৃত ও অকৃত কর্ম বিচার করে দেখবে।

বৌদ্ধ বা মিশ্র সংস্কৃতঃ- আমরা জানি বৌদ্ধধর্মের মূল গ্রন্থ ত্রিপিটক পালি ভাষাতেই রচিত।এবং বৌদ্ধবেদের জন্মস্থান উত্তরাপথেই তবুও পরবরতীকালে উত্তরাপথের মহাযানী বৌদ্ধরা তাদের আলোচনায় পালি ভাষা ব্যাবহার করতেন না।তারা তাদের গ্রন্থ রচনায় সংস্কৃত ও প্রাকৃতের এক মিশ্রনে তৈরি এক কৃত্রিম সাহিত্যিক ভাষা ব্যাবহার করতেন। এই ভাষাই হল বৌদ্ধ সংস্কৃত বা মিশ্রসংস্কৃত। এই ভাষার নিদর্শন পাওয়া যায় 'মহাবস্তু অবদান' সময় কাল খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী। 'ললিত বিস্তার' সময়কাল খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দী, 'দিব্যাবদান' ও 'অবদানশতক' সময়কাল খ্রিস্টীয় প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দী প্রভৃতি রচনায়।এই ভাষার ব্যাবহার অবশ্য কুষাণ রাজাদের অনুশাসনেও পাওয়া যায়।

নিয়া প্রাকৃতঃ- চিনের অন্তর্গত তুর্কীস্থানে শানশান রাজ্যের প্রান্তে নিয়া নামক অঞ্চলে খরোষ্ঠী ও ব্রাহ্মী লিপিতে লেখা কিছু প্রত্নলিপি পাওয়া গেছে। এগুলি অবশ্য ধর্ম বিষয়ক নয়,শাসনকার্য ও ব্যাবসা সংক্রান্ত। এগুলির ভাষাই নিয়া প্রাকৃত নামে পরিচিত। এই ভাষার সময় কাল ছিল খ্রিস্ট পূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত। ভারতের বাইরে পাওয়া গেলেও ভারতীয় আর্য ভাষার নিদর্শন হিসেবে এই ভাষা গ্রহন করার কারন হল উত্তর পশ্চিমা প্রাকৃতের কিছু উত্তরাধিকার এতে লক্ষ্য করা যায় এবং অনুমান করা হয় এই ভাষারও আদিভুমি ছিল উত্তর পশ্চিম ভারতের পেশোয়ার অঞ্চল।

মাহারাষ্ট্রী প্রাকৃতঃ- মাহারাস্ট্রী যদিয়ও মনে করা হয় শৌরোসেনীর পরবর্তী এবং কেউ কেউ মনে করেন শৌরোসেনী থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তখন মাহারাষ্ট্রীয়কেই আদর্শ ভাষার মর্যাদা দেওয়া হত। সংস্কৃত নাটকে এই ভাষার ব্যাপক বিস্তার লক্ষ্য করা যায়। যেমন খৃস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে রচিত 'গাহাসত্তসঈ', খ্রিস্টীয় পঞ্চম- ষষ্ঠ শতাব্দীতে রচিত প্রবর সেনের 'সেতুবন্ধ', খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দী তে রচিত বাকপতি রাজের 'গউডবহো' এই সব পূর্ণাঙ্গ রচনায় ও এই ভাষার ব্যাবহার লক্ষ্য করা যায়।

মাহারাষ্ট্রী প্রাকৃত ভাষার নিদর্শন :- "উল্ললই দব্ ভকবলং মঈ পরিচ্চত্তণচ্চণা মোরী ওসরিঅ- পন্দ-বত্তা মুঅন্তি অংসূইং ব লঅও"। ________ অভিজ্ঞান শকুন্তল, চতুর্থঅঙ্ক,

অনুবাদঃ- মৃগী তার তৃণের গ্রাস উদ্গীরন করে দিচ্ছে, ময়ূর তার নৃত্য পরিত্যাগ করেছে, লতাগুলি থেকে পাণ্ডুবর্ণ পাতাগুলি খসে পড়ছে- যেন তারা অশ্রুবর্ষণ করছে।

শৌরসেনীঃ-শৌরসেনী প্রাকৃত হল সাহিত্যিক প্রাকৃত গুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন এবং ভারতীয় আর্য ভাষার কাছাকাছি। সংস্কৃত চর্চার পীঠস্থান পশ্চিম ভারতের মধ্যদেশ ছিল এই প্রাকৃতেরও পীঠস্থান।মাহারাষ্ট্রী ছিল আদর্শ ভাষা কিন্তু এই ভাষার পরেই শৌরসেনীর সম্মানিত স্থান স্বীকৃত ছিল। সংস্কৃত নাটকে শিক্ষিত রমনী, রাজপুরুষ - কর্পূরমঞ্জরী নাটকের সংলাপে শৌরসেনী প্রাকৃত ব্যাবহার করা হয়। কেউ কেউ বলেন যে মাহারাষ্ট্রী ও শৌরসেনীর মধ্যে বিশেষ কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু এই দুই প্রাকৃতের মধ্যে কিছু গুরুত্ব পূর্ণ পার্থক্য দেখা যায়।

যেমনঃ- " তক্ খনং সো মম পুত্ত- কিদও মঅ- সাবও উবখিদো। তদো তএ অঅং দাব পঢমং পিবদু ত্তি অনুকম্পিনা উবচ্ছন্দিদো। ন উণ দে অবরিচিদসস হত্থাদো উদঅং অবগদো পাদুং। পচ্ছা তসসিন জ্জেব উদএ মএ গহিদে কদো তেণ পণও। _______________________________ অভিজ্ঞান শকুন্তল, পঞ্চম অঙ্ক।

অর্থাৎঃ- সেই সময়ে আমার পালিত পুত্র হরিনশিশুটি সেখানে উপস্থিত হল। আপনার কাছে জলপান করবে ভেবে আপনি তাকে আদর করতে লাগলেন। কিন্তু আপনি তার অপরিচিত বলে সে আপনার হাত থেকে জলপান করতে চাইল না। তারপর আমি সেই জল নিজের হাতে নিয়ে এলে আমার প্রতি অনুরাগ প্রকাশ করতে লাগলো।

অর্ধমাগধীঃ- অর্ধমাগধীর নিদর্শন আমরা অশ্বঘোষের নাটকে পাই তবে বলা যেতে পারে অর্ধমাগধীর পূর্বরূপ প্রাচ্য মধমার নিদর্শন আছে ।ভাসের নাটকেও এই প্রাকৃতের প্রাচ্যরূপ দেখা যায়। কিন্তু আসল অর্ধমাগধীর সম্মানিত ক্ষেত্র হল জৈন ধর্ম সাহিত্য।অর্ধমাগধী যদিও পরবর্তী কালে জৈন সাহিত্যের ভাষা হয়ে ওঠায় কোন ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি তবু এর উৎপত্তি প্রাকৃত প্রাচ্য মধ্যমার জন্মভুমি হল অযোধ্যা বা কোশল রাজ্যে।

যেমনঃ- " পোলাসপুরে নাম নয়রে সহস্ সম্বব উজ্জণে জিয়সত্তুরায়া। তথ্থণং পোলাসপুরে নয়রে সদ্দালপুত্তে নামং কুম্ভকারে অজীবিওবাসএ পরিবসই"।

অনুবাদঃ- পলাশপুর নামে এক নগরে সহস্রাম্রবন নামক বাগানে জিতশ্ত্রু রাজা ছিলেন। সেই পলাশপু নগরে শব্দাল নামে অজীবিক- সম্প্রদায়ভুক্ত অর্থাৎ ভিক্ষুক উপাসক এক কুম্ভকার বাস করতেন।

মাগধীঃ- মাগধীর নিদর্শন সংস্কৃত নাটকে অশিক্ষিত নিম্নশ্রেনীর চরিত্রের ভাষায় পাওয়া যায়।এই নামের সাথে মগধের দক্ষিন বিহারের যোগ আছে। যদিও মাগধী ছিল মূলত সাহিত্যেরই ভাষা এবং সাহিত্যে এর ব্যাবহার হত হাস্যরস সৃষ্টির জন্য তবুও মাগধী নামের মধ্যে মগধের অর্থাৎ দক্ষিন বিহারের কথ্য ভাষার একটা যোগ রয়েছে বলেই মনে করা হয়। সম্রাট অশোক নিজেকে মগধের ভাষায় বলেছেন, কালিদাস মাগধী ব্যবহার করেছেন তাঁর লেখায়। মাগধী যেন মগধের গৌরবিণী এক রাজকন্যা। মাগধ শব্দটির অর্থ হল শ্রুতি পাঠক অর্থাৎ গায়ক। এই সব থেকে আমরা বুঝতে পারি যে মগধ ছিল এক গর্বিত ও সংস্কৃতিবাণ জাতিতে পূর্ণ।এই ভাষার প্রাচীনতম রূপের নিদর্শন রয়েছে সুতনুকা প্রত্নলিপিতে।

" ধীবরকঃ- (ভীতিনাটিকেতন) পশীদন্তু ভাবমিশশা। ণ হগে ঈদিশশশ অকয্যশশ কালকে। একঃ- কিং ণু ক্ খু শোহনে বম্ হণে শি ত্তি কদুঅ লঞ্ ঞা দে পলিগ্ গহে দিন্নে। ধীবরকঃ- শুণব দাব। হগে ক্ খু শক্কাবদালবাশী ধীবলে। ____________ অভিজ্ঞান শকুন্তল, চতু্র্থ অঙ্ক

অনুবাদঃ- ধীবর- (ভয়ের অভিনয় করে) মহাশয়েরা প্রসন্ন হোন। আমি এই রকম অকর্ম করিনি। একজনঃ- তবে তুই কি সদ্ ব্রাহ্মন যে তোকে রাজা এটা দান করেছেন? ধীবরঃ- আপনারা সব কথা শুনুন। আমি শক্রাবতার- বাসী ধীবর।

পৈশাচীঃ- সাহিত্যিক প্রাকৃতগুলির মধ্যে সাহিত্যিক নিদর্শনের সবথেকে দীন হল পৈশাচী প্রাকৃত। এই প্রাকৃতে রচিত অনেক গল্প কথার একটি সংকলন হল 'বৃহৎকথা' নামক গ্রন্থে। কিন্তু সেটি এখন বিলুপ্ত, তাঁর গল্প কাহিনী শুধু রাখা আছে সংস্কৃতের বিভিন্ন রচনায়। পৈশাচী প্রাকৃতের কিছু কিছু নিদর্শন পাওয়া যায় প্রাচীন বৈয়াকরণ ও আলংকারিক দের রচনায় অ উদ্ধৃতিতে। তখন উত্তর- পশ্চিমার অর্থাৎ গান্ধার ছিল পৈশাচীর জন্মস্থান। কিন্তু পরবর্তী কালে মধ্যভারতেও এর প্রচলন ছিল।

এই প্রাকৃতের নিদর্শন হলঃ- " নচ্চন্তসস য লীলাপাতুক্ খেবেন কম্পিতা বসুধা- উচ্ছয়ন্তি সমুদ্দা সইলা নিপতন্তি তং হলং নমথ"। অনুবাদঃ- যার নৃত্য করার সময় চঞ্চল পদক্ষেপে পৃথিবী কম্পিত হয়, সমুদ্র উচ্ছ্বসিত হয়, পর্বত ধ্বসে পড়ে, সেই হলধর কে প্রণাম করো।
(পরবর্তী অংশ তৃতীয় অধ্যায়ে)

(কপিরাইট আইন অনুসারে রিয়া দাশগুপ্তা র রচিত এই লেখা বিনা অনুমতি তে কোথাও প্রকাশ আইনত দন্ডনীয়)

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন