ফলাফল
সায়ক চক্রবর্তী
- আমার একটা অভ্যেস ছিল বুঝলেন ; হাত দেখা । সেভাবে শিখিনি কারও কাছে কিন্তু অদ্ভুতভাবে মিলে যেত । কাকতালীয় নাকি অলৌকিক জানিনা তবু একটা ভালো লাগার তাগিদ থেকেই করতাম।
- তা এখন কি ছেড়ে দিয়েছেন?
- না, আসলে......থাক না ওসব কথা । বলুন, চা করতে বলি বৌমাকে ?
- নানা, ব্যস্ত হবেন না। আজ উঠছি, একটু তাড়া আছে।
- ঠিক আছে, আসবেন সন্ধ্যায়। আপনার কলকাতা যাবার পর থেকে অনেকদিন জমিয়ে তাস খেলা হয়নি। আজ এতদিনের দুর্নাম ঘুচাতেই হবে ।
- হা হা হা হা হা...... এ জন্মে হচ্ছে না । আসছি ।
- হা হা হা হা... হ্যাঁ আসুন ।
পরদিন সন্ধ্যায় বন্ধুর বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন প্রতীমবাবু -
- নরেশবাবু, দরজা খুলুন ।
- বাড়ী আছেন ? বৌমা... কি ব্যাপার... !
অনেকক্ষন ডাকাডাকির পরও দরজা দুভাগ হল না -
- নাহ, আপনি বোধ হয় হারের ভয়ে আর মুখ দেখাবেন না ; বুঝেছি । হা হা হা হা হা... বেশ চললাম। কাল সকালে আসব আবার। এত সহজে আপনাকে তো ছাড়া যাবে না।
পৃথিবীটা আপনমনে ঘুরে গেল একবার, বোধ হয় সকাল হল ; কারণ রাত পার হয়েছে -
- প্রতীমদা, আপনার চিঠি।
- চিঠি ? এই সক্কালবেলা? দাও দাও।
- নিন।
শ্রদ্ধেয় প্রতীমবাবু,
আপনি তো জানেন আমার স্ত্রী আর একমাত্র ছেলে মারা যাবার পর বৌমা আর নাতিটাকে নিয়েই আমার দুনিয়া। পেনশনে সংসার চলে না। আমার উটকো খরচ নেই, কিছু সখ আছে যেমন এই আপনার সাথে তাস খেলা – আপনি জানেন । আপনার কলকাতা যাওয়া দীর্ঘ পাঁচ বছর একাকীত্বে গ্রাস করত দিনরাত । একটা সখ মাথা চাড়া দিয়ে উঠল কিছু বই পড়ে – হাত দেখা, এর ওর হাত দেখতাম সখ করে এবং সেটা কাকতালীয় ভাবেই মিলে যেত । আমি নিজে জানি সেটার বৈজ্ঞানিক সত্যতা নেই আর এইজন্যই বোধ হয় বেশ একটা রাজা রাজা মনোভাব এসে গেছিল কিন্তু অতটাও না যে নাওয়া খাওয়া ভুলে যেতাম। আজ সকালে আপনি যাবার পর কি মনে হল নাতির হাতটা টেনে নিয়ে ভালো করে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম। বৌমা আর নাতি আজ বাপের বাড়ী যাবে দুপুরে তাই ভাবলাম সকালেই নাতির হাতটা দেখে নিই। গ্রহ-নক্ষত্রের ভাবগতিক দেখে যা বুঝলাম তারপর আমার আর ক্ষমতা ছিল না ওর হাতটা ছাড়িয়ে দিই – ছাড়া উচিতও নয়। আমি দেখলাম – আমার কারণে আমার নাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে......... ! কিন্তু সব জেনে বুঝেও হাত না ছাড়লে বোধ হয় সত্যি হয়ে যেত! তাই সত্যিটাকে মিথ্যে বানানোর একটা সত্যি চেষ্টা করলাম। আমি এই সংসার ছেড়ে অনেকদূর চললাম – দূর থেকে নাতির হাসি দেখে শান্তি পেতে চাই। বিদায়।
- নরেশদা
মাঝে মাঝে মনে হয় চোখ না থাকলেই ভালো হত। কিন্তু চোখের কাজ চোখ করে যায় আর সময়ের ক্যানভাসে ঠিকই রঙ ছিটিয়ে চলে যাই আমরা, কত ছবি তৈরি হয় শুধু দেখা যায় বা যায় না। ঋতু বদল হয়েছে কয়েকবার -
- বৌমা, দীপ এখন কোন ক্লাসে যেন ?
- ও এখন ক্লাস সেভেনে পড়ছে ।
- খুব খারাপ লাগছে, বুঝলে, নরেশদা এভাবে...... ভাবিনি।
- আমি তো প্রায় দুই বছর পর এলাম তোমাদের এখানে। তা, এখন চলছে কিভাবে ?
- কিভাবে আর চলবে বলুন ! পেনশনটাও বন্ধ হয়ে গেছে, আমি এখন সেলাই মেশিনে কাজ করে যা পাই...... চলে না তবুও।
- সত্যি নিয়তি! ফলে গেলো জ্যোতিষের ফল !
- আমার একটা অভ্যেস ছিল বুঝলেন ; হাত দেখা । সেভাবে শিখিনি কারও কাছে কিন্তু অদ্ভুতভাবে মিলে যেত । কাকতালীয় নাকি অলৌকিক জানিনা তবু একটা ভালো লাগার তাগিদ থেকেই করতাম।
- তা এখন কি ছেড়ে দিয়েছেন?
- না, আসলে......থাক না ওসব কথা । বলুন, চা করতে বলি বৌমাকে ?
- নানা, ব্যস্ত হবেন না। আজ উঠছি, একটু তাড়া আছে।
- ঠিক আছে, আসবেন সন্ধ্যায়। আপনার কলকাতা যাবার পর থেকে অনেকদিন জমিয়ে তাস খেলা হয়নি। আজ এতদিনের দুর্নাম ঘুচাতেই হবে ।
- হা হা হা হা হা...... এ জন্মে হচ্ছে না । আসছি ।
- হা হা হা হা... হ্যাঁ আসুন ।
পরদিন সন্ধ্যায় বন্ধুর বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন প্রতীমবাবু -
- নরেশবাবু, দরজা খুলুন ।
- বাড়ী আছেন ? বৌমা... কি ব্যাপার... !
অনেকক্ষন ডাকাডাকির পরও দরজা দুভাগ হল না -
- নাহ, আপনি বোধ হয় হারের ভয়ে আর মুখ দেখাবেন না ; বুঝেছি । হা হা হা হা হা... বেশ চললাম। কাল সকালে আসব আবার। এত সহজে আপনাকে তো ছাড়া যাবে না।
পৃথিবীটা আপনমনে ঘুরে গেল একবার, বোধ হয় সকাল হল ; কারণ রাত পার হয়েছে -
- প্রতীমদা, আপনার চিঠি।
- চিঠি ? এই সক্কালবেলা? দাও দাও।
- নিন।
শ্রদ্ধেয় প্রতীমবাবু,
আপনি তো জানেন আমার স্ত্রী আর একমাত্র ছেলে মারা যাবার পর বৌমা আর নাতিটাকে নিয়েই আমার দুনিয়া। পেনশনে সংসার চলে না। আমার উটকো খরচ নেই, কিছু সখ আছে যেমন এই আপনার সাথে তাস খেলা – আপনি জানেন । আপনার কলকাতা যাওয়া দীর্ঘ পাঁচ বছর একাকীত্বে গ্রাস করত দিনরাত । একটা সখ মাথা চাড়া দিয়ে উঠল কিছু বই পড়ে – হাত দেখা, এর ওর হাত দেখতাম সখ করে এবং সেটা কাকতালীয় ভাবেই মিলে যেত । আমি নিজে জানি সেটার বৈজ্ঞানিক সত্যতা নেই আর এইজন্যই বোধ হয় বেশ একটা রাজা রাজা মনোভাব এসে গেছিল কিন্তু অতটাও না যে নাওয়া খাওয়া ভুলে যেতাম। আজ সকালে আপনি যাবার পর কি মনে হল নাতির হাতটা টেনে নিয়ে ভালো করে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম। বৌমা আর নাতি আজ বাপের বাড়ী যাবে দুপুরে তাই ভাবলাম সকালেই নাতির হাতটা দেখে নিই। গ্রহ-নক্ষত্রের ভাবগতিক দেখে যা বুঝলাম তারপর আমার আর ক্ষমতা ছিল না ওর হাতটা ছাড়িয়ে দিই – ছাড়া উচিতও নয়। আমি দেখলাম – আমার কারণে আমার নাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে......... ! কিন্তু সব জেনে বুঝেও হাত না ছাড়লে বোধ হয় সত্যি হয়ে যেত! তাই সত্যিটাকে মিথ্যে বানানোর একটা সত্যি চেষ্টা করলাম। আমি এই সংসার ছেড়ে অনেকদূর চললাম – দূর থেকে নাতির হাসি দেখে শান্তি পেতে চাই। বিদায়।
- নরেশদা
মাঝে মাঝে মনে হয় চোখ না থাকলেই ভালো হত। কিন্তু চোখের কাজ চোখ করে যায় আর সময়ের ক্যানভাসে ঠিকই রঙ ছিটিয়ে চলে যাই আমরা, কত ছবি তৈরি হয় শুধু দেখা যায় বা যায় না। ঋতু বদল হয়েছে কয়েকবার -
- বৌমা, দীপ এখন কোন ক্লাসে যেন ?
- ও এখন ক্লাস সেভেনে পড়ছে ।
- খুব খারাপ লাগছে, বুঝলে, নরেশদা এভাবে...... ভাবিনি।
- আমি তো প্রায় দুই বছর পর এলাম তোমাদের এখানে। তা, এখন চলছে কিভাবে ?
- কিভাবে আর চলবে বলুন ! পেনশনটাও বন্ধ হয়ে গেছে, আমি এখন সেলাই মেশিনে কাজ করে যা পাই...... চলে না তবুও।
- সত্যি নিয়তি! ফলে গেলো জ্যোতিষের ফল !
1 কমেন্টস্:
Duranto likhechhis re Sayak... ekdom jaljyanto jibone chokhe dekha ghatonar likhito roop mone hochhe... aaro lekh bhai, anek anek unnoti kamona kori...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন