ছ্ন্দ বিষয়ক কিছু আলোচনা
অনুপম দাশশর্মা
বাজারময় পলিপ্যাক। বাজারের ব্যাগ হাতে দেখা যায় গোনাগুনতি ক্রেতাকে। তা আমার প্রতিবেশী বিজন হালদার কিন্তু ব্যাগ আনার অভ্যেস ছাড়েননি। ভীড় বাজার, সব্জীর দোকানে পটলের দাম শুনে চক্ষু চড়কগাছ। দেড় ইঞ্চি সাইজ পটল ১০০ টাকা প্রতি কেজি, অথচ গিন্নীর ফরমাইস করতে হবে পটলের দোর্মা। দাঁত শক্ত্ করে ব্যাগ ভরতে ভরতে বিজনবাবু স্ব্গোতক্তি করলেন-
মনে মনে আওড়াতে বিজনবাবু চমৎকৃত হয়ে গেলেন। আরে বাঃ দিব্যি একটা পদ্য হয়ে গেল। বিজনবাবু পড়তে ভালবাসেন, ভালবাসেন তাঁর ছেলের পদ্যবই আবৃত্তি করে পড়তে কিন্ত্ কোনদিন স্ব্প্নেও ভাবেননি নিজে কিছু লিখতে পারবেন। বিজনবাবুর মন বেশ ফুরফুরে হয়ে গেল, বাড়ি ফিরে একটা খাতায় খসখস করে লিখে নিলেন লাইনদুটি।
বিজনবাবু অজান্তেই বাংলা কবিতার অন্যতম একটি ছন্দ তাঁর লেখায় এনে ফেলেছেন। আসুন, আমরা সেটি নিয়েই একটু আলোচনার আসর বসাই।
বাংলা কবিতার ছ্ন্দ তিনটি। অক্ষরবৃত্ত , মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত্ ।
কবিতাকে ছন্দে বাঁধতে গেলে কিছু আবশ্যিক নিয়ম মানতেই হয়। আধুনিক কবিরা ছন্দের ধার ধারেনা, বলা যায় অতি আধুনিক কবিতা ভাবের ইচ্ছাপ্রকাশে রূপসী।
তবু কবিতার নিয়ম বা ব্যকরণ জানা উচিত। জানার পর তা অমান্য করেও লেখা যায়। কাজ না শিখলে যেমন ফাঁকি দেওয়াটা সহজ হয় না তেমনি কবিতায় মিলের ব্যপারটা না জেনে মিলের উঠোন পেরোনো যায় না। অতএব আমরা ছন্দের আসরে ফিরে আসি। আগেই লিখেছি বিজনবাবু অজান্তে যে লাইন দুটি লিখে ফেলেছেন তা আদ্যোপান্ত্ অক্ষরবৃত্ত ছন্দ তে গড়া।
লক্ষ্য করে দেখুন প্রত্যেকটি লাইনে পর্ব ভাগ করে দেখানো হয়েছে, এই ছন্দে যত অক্ষর বা বর্ণ তার তত মাত্রা অর্থাৎ প্রতিটি অক্ষর একটি করে মাত্রা পেয়ে থাকে। উপরে দেখা যাচ্ছে প্রত্যেকটি পর্বে একটি করে মাত্রা দেওয়াতে চারমাত্রা করে তিনটি পর্বে তৈরী হয়েছে লাইন দুটি। এভাবে মোট মাত্রার সংখ্যা ১২ এবং পর্ব ৩ ।
এই দুই লাইনে যদি চাল কে ভাগ করে দেখা যাচ্ছে এটি চারমাত্রার চাল। আর এখানে চারমাত্রার চালের পাশে পড়ে থাকছে বাড়তি দুই মাত্রা। এই বাড়তি দুই মাত্রার ব্যবহারে কবিতা পড়তে মাঝে একটু দম নেবার সুযোগ আসে। অক্ষরবৃত্ত ছন্দের চাল আসলে চারমাত্রার চাল। চাল বাড়াতে গেলে চার-এর যে কোনো গুণিতকের সাথে ( যেমন ৪x২=৮, ৪x৩=১২, ৪x৪=১৬ ইত্যদি ) দুই যোগ করে তত সংখ্যার মাত্রা দিয়েই অক্ষরবৃত্তের লাইন তৈরী হয়।
এই দুই লাইনকে পর্ব্ ভেঙ্গে দেখানো যাক।
পর্ব ভেঙ্গে দেখালে দেখা যাচ্ছে প্রথম লাইনে চারমাত্রার চাল চারটি কিন্তু পরের লাইনে চার মাত্রার চারটি চালের পাশে বাড়তি তিন মাত্রা বসে গেছে।
সুতরাং অক্ষরবৃত্ত ছন্দে বাড়তি মাত্রার ভাঙ্গা পর্ব্ না রেখেও লাইন যেমন তৈরী করা যায় তেমন বাড়তি ভাঙ্গা পর্ব দুই তিন ও হতে পারে। অবশ্যই বাড়তি চার হয় না কেননা চার হলেই সেটি মূল পর্বে ঢুকে পড়ে আলাদা করে আর ভাঙ্গা পর্ব হয় না।
অক্ষরবৃত্তের সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষ হলো।
বাজারময় পলিপ্যাক। বাজারের ব্যাগ হাতে দেখা যায় গোনাগুনতি ক্রেতাকে। তা আমার প্রতিবেশী বিজন হালদার কিন্তু ব্যাগ আনার অভ্যেস ছাড়েননি। ভীড় বাজার, সব্জীর দোকানে পটলের দাম শুনে চক্ষু চড়কগাছ। দেড় ইঞ্চি সাইজ পটল ১০০ টাকা প্রতি কেজি, অথচ গিন্নীর ফরমাইস করতে হবে পটলের দোর্মা। দাঁত শক্ত্ করে ব্যাগ ভরতে ভরতে বিজনবাবু স্ব্গোতক্তি করলেন-
চরচর করে দাম চড়ে যায়
ঝরঝর করে ঘাম ঝরে যায়
ঝরঝর করে ঘাম ঝরে যায়
মনে মনে আওড়াতে বিজনবাবু চমৎকৃত হয়ে গেলেন। আরে বাঃ দিব্যি একটা পদ্য হয়ে গেল। বিজনবাবু পড়তে ভালবাসেন, ভালবাসেন তাঁর ছেলের পদ্যবই আবৃত্তি করে পড়তে কিন্ত্ কোনদিন স্ব্প্নেও ভাবেননি নিজে কিছু লিখতে পারবেন। বিজনবাবুর মন বেশ ফুরফুরে হয়ে গেল, বাড়ি ফিরে একটা খাতায় খসখস করে লিখে নিলেন লাইনদুটি।
বিজনবাবু অজান্তেই বাংলা কবিতার অন্যতম একটি ছন্দ তাঁর লেখায় এনে ফেলেছেন। আসুন, আমরা সেটি নিয়েই একটু আলোচনার আসর বসাই।
বাংলা কবিতার ছ্ন্দ তিনটি। অক্ষরবৃত্ত , মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত্ ।
কবিতাকে ছন্দে বাঁধতে গেলে কিছু আবশ্যিক নিয়ম মানতেই হয়। আধুনিক কবিরা ছন্দের ধার ধারেনা, বলা যায় অতি আধুনিক কবিতা ভাবের ইচ্ছাপ্রকাশে রূপসী।
তবু কবিতার নিয়ম বা ব্যকরণ জানা উচিত। জানার পর তা অমান্য করেও লেখা যায়। কাজ না শিখলে যেমন ফাঁকি দেওয়াটা সহজ হয় না তেমনি কবিতায় মিলের ব্যপারটা না জেনে মিলের উঠোন পেরোনো যায় না। অতএব আমরা ছন্দের আসরে ফিরে আসি। আগেই লিখেছি বিজনবাবু অজান্তে যে লাইন দুটি লিখে ফেলেছেন তা আদ্যোপান্ত্ অক্ষরবৃত্ত ছন্দ তে গড়া।
চরচর /করে দাম/ চড়ে যায়
ঝরঝর/ করে ঘাম/ ঝরে যায়
ঝরঝর/ করে ঘাম/ ঝরে যায়
লক্ষ্য করে দেখুন প্রত্যেকটি লাইনে পর্ব ভাগ করে দেখানো হয়েছে, এই ছন্দে যত অক্ষর বা বর্ণ তার তত মাত্রা অর্থাৎ প্রতিটি অক্ষর একটি করে মাত্রা পেয়ে থাকে। উপরে দেখা যাচ্ছে প্রত্যেকটি পর্বে একটি করে মাত্রা দেওয়াতে চারমাত্রা করে তিনটি পর্বে তৈরী হয়েছে লাইন দুটি। এভাবে মোট মাত্রার সংখ্যা ১২ এবং পর্ব ৩ ।
যদি দেখো /কোনো রাতে/ ঘুমন্ত শি/য়রে
জোড়া জোড়া/ নীলপরী /গান গেয়ে/ চলে
জোড়া জোড়া/ নীলপরী /গান গেয়ে/ চলে
এই দুই লাইনে যদি চাল কে ভাগ করে দেখা যাচ্ছে এটি চারমাত্রার চাল। আর এখানে চারমাত্রার চালের পাশে পড়ে থাকছে বাড়তি দুই মাত্রা। এই বাড়তি দুই মাত্রার ব্যবহারে কবিতা পড়তে মাঝে একটু দম নেবার সুযোগ আসে। অক্ষরবৃত্ত ছন্দের চাল আসলে চারমাত্রার চাল। চাল বাড়াতে গেলে চার-এর যে কোনো গুণিতকের সাথে ( যেমন ৪x২=৮, ৪x৩=১২, ৪x৪=১৬ ইত্যদি ) দুই যোগ করে তত সংখ্যার মাত্রা দিয়েই অক্ষরবৃত্তের লাইন তৈরী হয়।
সাতনরী হার চাইছ কিংবা সাদা হাতি
জেনে রেখো আমি শুধু দিতে পারি বর্ণে চড়ুইভাতি
জেনে রেখো আমি শুধু দিতে পারি বর্ণে চড়ুইভাতি
এই দুই লাইনকে পর্ব্ ভেঙ্গে দেখানো যাক।
সাতনরী / হার চাই / ছ কিংবা / সাদা হাতি
জেনে রেখো /আমি শুধু / দিতে পারি / বর্ণে চড়ু / ই ভাতি
জেনে রেখো /আমি শুধু / দিতে পারি / বর্ণে চড়ু / ই ভাতি
পর্ব ভেঙ্গে দেখালে দেখা যাচ্ছে প্রথম লাইনে চারমাত্রার চাল চারটি কিন্তু পরের লাইনে চার মাত্রার চারটি চালের পাশে বাড়তি তিন মাত্রা বসে গেছে।
সুতরাং অক্ষরবৃত্ত ছন্দে বাড়তি মাত্রার ভাঙ্গা পর্ব্ না রেখেও লাইন যেমন তৈরী করা যায় তেমন বাড়তি ভাঙ্গা পর্ব দুই তিন ও হতে পারে। অবশ্যই বাড়তি চার হয় না কেননা চার হলেই সেটি মূল পর্বে ঢুকে পড়ে আলাদা করে আর ভাঙ্গা পর্ব হয় না।
অক্ষরবৃত্তের সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষ হলো।
(চলবে )
1 কমেন্টস্:
Anek natun katha shikhlam chhando niye, chhander byapare... asankhyo dhannyobaad Anupam...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন