অভিলাষা দাশগুপ্ত আদক
ভাইফোঁটার দিন জন্ম বলে চাটুজ্জেবাবুর মেয়ে শিউলি (মানে দুগ্গা) ওর ছোটভাই শরতকে (মানে অপুকে) নাম ধরে না ডেকে ‘ভাই’ বলে ডাকত। তাই থেকে অপুকে পাড়ায় অনেকেই ভাই বা ভাইদা বলে। গোড়ার দিকে অপুর অভিমান হত, ভাবত ওর দিদি বুঝি ওর নামটাই জানে না কিন্তু এখন এই ক্লাশ ফাইভে উঠে বোঝে ওটা দিদির আদরের ডাক।অপুর আবার দিদি অন্ত প্রাণ,পিঠোপিঠি কিনা, যত ভাব তত ঝগড়া।তবু দিদিকে বড্ড ভালবাসে অপু।এই যেমন এবার পূজোর আগে তাল ধরেছিল অপু, ওর একটা লাল টুকটুকে রেসিং সাইকেল চাই,তার বদলে পূজোর জামাকাপড় হাতখরচা কিছ্ছু চাইনা। কিন্তু মায়ের কানের কাছে গুনগুন করলেও বাবাকে বলার সময় কিন্তু ‘দুগ্গা সহায়’।এমনিতে শান্তশিষ্ট ছেলেটার দু’টোই নেশা। এক সাইকেল, দুই ফুটবল। বিশেষত একসময়ের স্পোর্টং ইউনিয়ানের নিয়মিত স্ট্রাইকার গৌতম সাধুখাঁ ওদের স্কুলের গেমস টিচার হয়ে জয়েন করে একই পাড়ায় ঘরভাড়া করেছেন আর সকাল সন্ধ্যা পাড়ার বাচ্চাগুলোকে নিয়ে মাঠে নামছেন বলে নেশাটা আরো বেড়েছে।চাটুজ্জেবাবু ব্যাঙ্কে চাকরী করেন। স্ত্রী রমাদেবীও প্রাইমারী স্কুলটিচার। মেয়ের আবদারে ছেলেকে সাইকেল কিনে দিলেও শর্ত করিয়ে নিয়েছেন দুবেলা পড়তে বসতে হবে।
ভাইফোঁটার দিন সকালে বাগানের দূর্বাঘাসের ওপর থেকে চন্দন বাটবে বলে শিশির তুলতে তুলতে দুগ্গা দেখলো পাশের বাড়ীর পিন্টুকে ক্যারিয়ারে বসিয়ে গেট খুলে বেরোচ্ছে অপু।
- কোথায় যাস ভাই এত কালে?
- মাঠে রে দি’ভাই, স্যার বলেছেন আজ টিম সিলেক্ট হবে।
- আজ ভাইফোঁটা, না গেলে নয়? তোর জন্মদিনের নারায়ন পূজোও তো আছে।
- এই যাবো আর আসব। প্রমিস, আজ খেলবনা। দ্যাখ না তোর বানানো পূজোর নীল কাঁথাকাজের পাঞ্জাবীটা পড়েছি।এ পড়ে কেউ ফুটবল পেটায়? টিমে সিলেক্ট হলেই চলে আসব।
- তাড়াতাড়ি আসিস কিন্তু।
কে জানত এ যাওয়াই ছেলে দু’টোর শেষ যাওয়া।গলি থেকে বেরিয়ে খোলা রাস্তায় উঠতে না উঠতে একটা মালবোঝাই ডাম্পারের মুখোমুখি। কারোরই কিছু করার ছিল না।আইনি ঝামেলা মিটিয়ে মা দিদির বুকফাটা কান্নার মধ্য দিয়ে অপুকে যখন সবাই শেষযাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে, তখন নারায়ণ পূজোর জন্য সাজানো ঠাকুরঘরে বিগ্রহের সামনে দুগ্গার সাজানো ভাইফোঁটার থালায় রাখা প্রদীপটা জ্বলতে জ্বলতে তেল ফুরিয়ে কালো হয়ে নিভে গেছে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন