২৯ অক্টো, ২০১৩

গুচ্ছকবিতা - শ্রীশুভ্র

গুচ্ছকবিতা
শ্রীশুভ্র



(১)
অমৃতকুম্ভের সন্ধানে


বিষাক্ত নদীর ঢেউ ভেঙ্গে
আহত পথে
নারীর কাছে এসেছি
অমৃতকুম্ভের সন্ধানে!
এখানে আসমুদ্রহিমাচল
ষড়ঋতুর আবর্তন!
শষ্যমুখ পৃথিবীর বয়সিনীর মতো হৃদয়ের সবুজে
কেবলই প্রেমের পলাশ দোলে! কৃষ্ণচুড়া আদর দুহাত বাড়ালে সকালের রোদ
আজও সহাস্যে কথা বলে!
এখানে সান্ধ্য জলসার আসরে ঊর্বসীর বিভঙ্গে
মহাকাব্য! মৃদঙ্গে নোবেল শান্তির বার্তা! নূপুরের তালে
সমস্ত মিছিলের ইতিহাস
সংগ্রামের আলপনা হয়ে ফোটে!

এখানে প্রতিশ্রুতির ভোকাট্টা ঘুড়িটা

ব্যাথা আর উপশমের পার্থক্য বুঝতে পারে!
এখানে ক্রুশবিদ্ধ যীশু বিমুগ্ধ আন্তরিক সংলাপে!
শিশুর সহজপাঠ থেকে
সংবিধানের ধারা নারীর ওমে ভিজিয়ে নিলে
এখনো বলা যায়, তুমি সুন্দর! আমি ভালোবাসি!




(২)
অভিসার


মনদূর্বার ঘরে শিশিরবিন্দুর মিছিল, যৌথরাত প্রাত্যহিক
গঙ্গাস্নানের মন্ত্র নিয়ে ঘড়িতে দম দিচ্ছে আজকাল!
কানাঘুষায় গুজবের পাখা ওড়ে

যদি পরচর্চার সরস পরিসরে, তবুও এসময়ে
চক্ষুলজ্জায় কাটছাঁট করাই ভালো!

ম্রিয়মান সংবাদ শিরোনামে নয়,

বিতর্ক মুখে ওড়া যাক ফ্ল্যাশ লাইটের জৌলুসে!

সবুজ পৃথিবী অবুঝ তো নয়!
মানুষের ঘরবাড়ি রিপুর সংসারেই শুধু
মনু-- থেকে থেকে সংহিতা
আওরান! শ্রাবণসন্ধ্যার
আসরে পলাশবাসর
কৃষ্ণচূড়া রক্তিম করে দিলে দিক! মাঝরাত ভরে
অমাবস্যা না-হয় পাহারাই দেবে!

ঠিক! তোমার গোপন উষ্ণতার কৌটোয় আমার
স্বাক্ষর ধরা থাক,
আকাশের উদাসীন নীলে
সমুদ্রের সফেন স্বাক্ষরের মতোন!

তারপর: কাল কি হবে, না হবে, দেখা যাক!



(৩)
মন ফড়িং


সব নারী ঘরে ফেরে না!
সব নদী ডুব সাঁতার জানে না!

পায়ে পায়ে বাঁধন খোলার আয়োজনে

নকশিকাঁথার দুপুর হাতছানি
দিতে থাকে!
নদীর বাঁকে গোধুলির আলপনা

নারীর মনের কথা বলে!

যে নারীরা ঘরে ফেরে না,

যে নদী ডুব সাঁতার দেবে না,

চতুর্দশীর চাঁদে তাদেরও মন কেমন করে!
রাত্রি তৃতীয় প্রহরে
নদীর বাঁকে বাঁকে, শরীরের অপভ্রংশ পূর্বরাগ ধরলে
কুমারী জ্যোৎস্না টলমল করে ওঠে!

স্থির চাঁদ নিষ্পলক চোখে চেয়ে চেয়ে দেখে!

সব সঙ্গম ভালোবাসার জলে ভেজে না!

সব প্রেম প্রজাপতির রঙে ডানা মেলে ওড়ে না!

তবু নদীর ঢেউ আর নারীর ওম দুকূল ছাপিয়ে যেতে চায়!
বর্ষার মেঘে আষাঢ় নামলে
শ্রাবণঘন সন্ধ্যায় ভরে ওঠে
নদী আর নারীর সময়!
তখন কে আর ঘরে ফিরে যেতে চায়!



(৪)
ব্রহ্মকমল!


মধ্যরাতের যোনিতে লিঙ্গের
অযথা কুচকাওয়াজ শুনি!
এখানে নিষিদ্ধ কোরাসে
ভ্রূণের স্বপ্ন জুড়ে
ঊরুসন্ধির নৃত্য!
পৃথিবীর বয়সিনী চন্দ্রকলার
বিবস্ত্র আকঙ্খায়
চিত্রকরের ইজেল জুড়ে
বাৎসায়ণের ভারতবর্ষ!
তবুও নক্ষত্রদোষ ছাড়েনি
আমাকে! বৃশ্চিক সনদে নেই

মেঘদূতের অক্ষরেখা কোনো!
সময়ের বিরুদ্ধ সংঘটনে
অঘটন পটিয়সীর নৃত্য!
গোপন ইস্তেহারের
সুড়ঙ্গ জুড়ে
কুরুক্ষেত্রের দিনলিপি!
হায় প্রেম তোমার মানসসরোবর ঢুঁড়ে
পাইনি ব্রহ্মকমল একটিও!
মালোবিকা সান্ন্যালের
উদ্ধত আঁচলে গভীর দংশন আছে! তবুও মৃত্যুর আগে
নাভিকুণ্ডের ওম সঙ্গম তিমিরে ক্রুশবিদ্ধ হলে
হে নবজাতক, তোমার
ঠিকুজী জুড়ে ব্রহ্মকমল
খুঁজে ফিরো আর এক বার.....



(৫)
ভালোবাসার স্বরলিপি!


জলের দাগে ব্যাথা লিখে
দেখেছি টাপটুপ ইতিহাসের শিরদাঁড়া বেয়ে

বিক্ষোভ মিছিলে বেদনাহত মৌন বাঁশির সুর!
বিশুদ্ধ রাগিনীর ফ্লাগ মার্চের
সকালে রামধনু বৈঠক
মধ্যরাতের খতিয়ান নিলে
বিবস্ত্র হয় লজ্জা!
তবু লাল নীল ওড়নার
সবুজ হাতছানি:
ক্লান্ত দু-তিন পেগ
উসখুস-সন্ধ্যা কখনো
এড়াতে পারেনি!
কালপুরুষের ছায়া ধরে ধরে
অরুন্ধুতী আলোর ডাক
শুনবো বলে কত নারীর
ঠোঁটে উৎকর্ণ থেকেছি সারা রাত!
ব্যস্ত যৌবনের ম্যারাথন
জুড়ে আসমুদ্র হিমাচল-
পাঁজরে দাঁড়ের শব্দে
ভালোবাসার ভগ্ন ইমারত!
মধ্যবর্তী আবেগের দহন জুড়ে আলিঙ্গনের ফাঁপা আওয়াজ মেঘমল্লার নামাতে
পারেনি আজও!
ওদিকে ভালোবাসার স্বরলিপি জুড়ে
নিস্তব্ধ সংলাপ প্রহর গোনে
পথিকের!

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন