১ অক্টো, ২০১৩

কবিতা - সৌমিত্র চক্রবর্তী

শরতের বর্ণমালায়
সৌমিত্র চক্রবর্তী



মাঝেমাঝেই ভাবি খুবই ভাগ্যবান আমি। পায়ের তলায় চাকা সম্বল দেখে বেড়াতে পারি মাটির রঙবদল। শুষে নিতে পারি প্রান্তমানুষের হাসির গন্ধ।

পায়ের নিচে সরে যায় কখনো অজগরের কালো পিঠ, কখনো বা সন্যাসীর গেরুয়া আঁচল। কত চাঁদ বেঁচে আছি? কত শিশির মেখেছি আদুল গায়ে।

নাক দিয়ে ফোঁস ফোঁস শ্বাস ছাড়া রক্তচোখ বাইসন রঙা মেঘ গুটিগুটি পায়ে শতরঞ্জী গুটায়। ইতি উতি কাশফুল, মসৃণ সাদা ত্বকের মেঘসুন্দরীরা উঁকি মেরে দেখে নেয়, পছন্দের জন আছে তো দৃষ্টিসীমায় !

এ বড় উৎসব মাস, এ ভরা বাদরে-এ মাহ ভাদরে মন এমনিতেই উতল। চিকচিক করে জল, চলকায়, ছলকায়। মন উপচে বাইরে পড়ে স্বাদ নিতে চায় চন্দন রোদ্দুরের।

হঠাৎ এক ছোট্ট গন্ডীতে ঝমঝম প্রগাঢ় বর্ষণ। দূর থেকে অন্য এক শুষ্ক পৃথিবী শুধু তাকিয়েই দেখে। এতো বড় রঙ্গ জাদু! ওখানে তুমুল মেঘ, এখানে হাসি। কোন মিশরীয় দেবী তুষ্ট তামাশায় সব জল ঢেলে দেয় প্রিয় পথিকের মাথায়। খিলখিল মস্করায় ভেজায় উজান গাঙের আবদুল মাঝিকে।

মাটি দ্রুত রঙ বদলায়। লালমাটি, সাদামাটি, কয়লার ধূলো মাখা প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকার মাটি। মনখারাপের ঘোর খোলস একটু একটু করে খসে পড়ে। একে একে গুপ্তথলি খুলে বেরোয় পেঁজা তুলো আকাশ, সুতরং রোদ, ভ্যালেন্টাইন মুহূর্ত।

সদ্য স্নান সেরে আদিবাসী তরুনীর অল্প আঁচল সরে যাওয়া নিষিদ্ধ এলডোরাডোর গোপন হাতছানি ছাপ রেখে চলে গাছ থেকে গাছান্তরে। শাল, সেগুন, ফলসা, বাবলা, নিম কালো গায়ে, সবুজ গায়ে, ঈষৎ বাদামী গায়ে তেল মেখে চকচকে ইশারায় ফিসিফিস ডাকে। এই তো দেহের সাথে দেহের, মনের সাথে মনের একীভূত হওয়ার শুদ্ধ সন্ধিক্ষণ।

আয়! যেখানে আছিস, যেভাবে আছিস চলে আয় লেপ, কম্বল, বালাপোষ বেরোনোর সময় হয়ে এল। উত্তাপ দিয়ে যা খানিক এ মিঠি রোদ্দুরে।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন